যখন কিছুই চলছে না, তখন কেমন চলছে?
২০০৯ সালের দোসরা আগস্ট, পূর্ব জেরুজালেমে শেখ জারাহ অঞ্চলের আরব এলাকার কিছু অংশ অবরোধের পর, ইসরাইলি পুলিশ দুটি ফিলিস্তিনি পরিবারকে (অর্ধশতাধিক লোকের) বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করে, এবং অনতিবিলম্বে ইহুদি বসতি স্থাপনকারীদের সেসব শূন্য ঘরে প্রবেশ করতে দেয়। যদিও ইসরাইলি পুলিশ দেশের উচ্চ আদালতের রায়ের দোহাই দিয়েই সেটা করেছে, কিন্তু সত্য হলো উচ্ছেদ হওয়া আরব পরিবারগুলো ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ওখানে বসবাস করে আসছিল। এই ঘটনাটি বিশ্ব গণমাধ্যমের দৃষ্টি আকর্ষণ করে, এটা ব্যতিক্রমই বটে, ঘটনাটি আসলে ওখানকার চলমান, উপেক্ষিত বিশাল ঘটনারই ছোট অংশ মাত্র।
এই ঘটনার দুই বছর পরও পরিস্থিতির তেমন পরিবর্তন ঘটেনি। ১৬ অক্টোবর ২০১১, জাতিসংঘ, ইউরোপিয় ইউনিয়ন ও ব্রিটেনের নিন্দা সত্ত্বেও ইসরাইল দক্ষিণ জেরুসালেমে ২ হাজার ৬শটি নতুন ঘরবাড়ি তৈরির পরিকল্পনা ঘোষণা করে। যদি এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয়, তাহলে শহরের আরব অংশটি যে কেবল দখলকৃত পশ্চিমতীর থেকে আলাদা হয়ে যাবে তা নয়, বরং একটি কার্যকর ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের সম্ভাবনা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং এটি ফিলিস্তিনিদের প্রাত্যহিক জীবনযাত্রাকেও ব্যাহত করবে। আসল উদ্দেশ্য পরিষ্কার: দ্বি-রাষ্ট্রিক সমাধানের কথা বলে, ইসরাইল একদিকে আকাশ কুসুম আশ্বাস দিতে থাকবে, অন্যদিকে জমিনে এমন বাস্তবতা তৈরি করবে যাতে দ্বি-রাষ্ট্রিক সমাধান কার্যত অসম্ভব হয়ে উঠবে।
এই রাজনীতির গভীরে যে স্বপ্ন রয়েছে সেটি সবচেয়ে সুন্দরভাবে ফুটে আছে পশ্চিমতীরের কোলঘেঁষা পাহাড়ে গড়ে ওঠা দেয়ালগুলোতে, যে দেয়াল ফিলিস্তিনি শহরকে আলাদা করে রেখেছে বসতি স্থাপনকারীদের শহর থেকে। ইসরাইলের দিককার দেয়াল জুড়ে গ্রামের ছবি আঁকা—সেখানে ফিলিস্তিনের শহর নেই, আছে শুধু প্রকৃতি, ঘাস, বৃক্ষ… এটি কি তবে বিশুদ্ধ জাতিগত নির্মূল নয়, যেখানে কল্পনা করা হচ্ছে দেয়ালের অপর দিকে রয়েছে উন্মুক্ত, অকর্ষিত ও বসতি স্থাপনের জন্য অপেক্ষারত জমিন?
এই প্রক্রিয়াটি কখনও কখনও সাংস্কৃতিক ভদ্রস্থকরণের আড়ালে ঢাকা পড়ে যায়। ২৮ শে অক্টোবর, ২০০৮ সাল, ইসরাইলি সর্বোচ্চ আদালত রায় দিয়েছে যে মধ্য জেরুসালেমের বিবাদ সঙ্কুল স্থানে সাইমন উইজেনথাল সেন্টার [যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক ইহুদিদের প্রতিষ্ঠিত মানবাধিকার সংগঠন] তাদের দীর্ঘদিনের পরিকল্পিত 'সেন্টার ফর হিউম্যান ডিগনিটি—মিউজিয়াম অব টলারেন্স' তৈরি করতে পারবে। এটি বর্তমানে নির্মাণাধীন রয়েছে। ২০১০ সালে এই প্রকল্প থেকে না সরিয়ে আনা পর্যন্ত, ফ্রাঙ্ক গেরি (আর কে? [বিশ্বখ্যাত স্থপতি]), সাধারণ জাদুঘর, শিশুদের জন্য জাদুঘর, থিয়েটার, সম্মেলন কেন্দ্র, গ্রন্থাগার, গ্যালারি, বক্তৃতা হল, ক্যাফেটেরিয়া ও আরো নানা কিছুর সমন্বয়ে বিশাল ভবন নক্সা করার দায়িত্ব পালন করেন।
জাদুঘরের ঘোষিত লক্ষ্য ছিলো ইহুদি সম্প্রদায়ের বিভিন্ন অংশ এবং অন্য সব ধর্মবিশ্বাসের মানুষের মধ্যে সৌজন্য ও সম্মান প্রচার করা — একমাত্র বাধা (যা অবশ্য সর্বোচ্চ আদালতের রায় দিয়ে ডিঙানো গেছে) হলো জাদুঘরটির জন্য নির্ধারিত স্থান, জেরুসালেমের মুসলমানদের প্রধান কবরস্থান হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত (মুসলমান সম্প্রদায় সর্বোচ্চ আদালতের কাছে আবেদন করে জানিয়েছিল যে জাদুঘরটি এখানে নির্মাণ করা হলে কবরস্থানের অপমান করা হবে, বলা হয়, এই কবরস্থানে শায়িত আছেন দ্বাদশ ও ত্রয়োদশ শতাব্দীর ধর্মযুদ্ধে নিহত মুসলমান শহীদগণ)। বহু-স্বীকারোক্তির এই গোপন সত্যটিকে চমৎকারভাবে বৈধতা দান করায় তৈরি হয়েছে কলঙ্ক: বলা হচ্ছে জায়গাটি সহিষ্ণুতার উদযাপনভূমি, সকলের জন্য উন্মুক্ত… কিন্তু সেটি ইসরাইলি গম্বুজ দ্বারা রক্ষিত, যেখানে আর উচ্চারিত হয় না এরইমধ্যে মাটির নীচে চলে যাওয়া অসহিষ্ণুতার শিকার মানুষদের নাম—যেন সত্যিকারের সহিষ্ণু স্থানের জন্য কিছুটা অসহিষ্ণুতার প্রয়োজন পড়ে।
তাহলে এতকিছুর মানেটা কি? খবরের প্রকৃত তাৎপর্য বোঝার জন্য, মাঝেসাঝে দুটি ভিন্নধারার সংবাদ একসাথে পড়াই যথেষ্ট—খবরের অর্থ তাদের লিঙ্ক দেখেই বোঝা যায়, বৈদ্যতিক শর্ট সার্কিটে আগুন জ্বলে ওঠার মতো। ২০১১ সালের ২১শে সেপ্টেম্বর, জাতিসংঘের সদস্যপদ দেয়ার জন্য ফিলিস্তিনের আহ্বানকে সমালোচনা করে ওবামা বিশ্বকে বলেছিলেন যে,"জাতিসংঘে বিবৃতি আর সিদ্ধান্ত গ্রহণের মাধ্যমে শান্তি আসবে না।" এক সপ্তাহের মধ্যেই, ২৭শে সেপ্টেম্বর, জেরুসালেমের দক্ষিণে (১৯৬৭ সালের আগে নির্ধারতি সীমান্তের বাইরে) আরও এক হাজার একশ নতুন বাসস্থান স্থাপনের পরিকল্পনার জানান দেয় ইসরাইল, অন্যদিকে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপিয় ইউনিয়ন, জাতিসংঘ ও রাশিয়া—এই চতুষ্টয় বসতি স্থাপন স্থগিত প্রসঙ্গে কিছু না বলে, স্রেফ উভয়পক্ষকে আলোচনার টেবিলে ফিরে আসার আহ্বান জানায়, আর বলে "উস্কানিমূলক কর্মকাণ্ড থেকে বিরত" থাকতে।
দিনের পর দিন ফিলিস্তিনিদের কাছ থেকে পশ্চিমতীরের জমি কেড়ে নেয়া হচ্ছে, তো তারা কি হাত গুটিয়ে বসে থাকবে? ইসরাইলি শান্তি-প্রিয় স্বাধীনতা ব্যবসায়ীরা যখন ফিলিস্তিনিদের সাথে নিরপেক্ষ "প্রতিসম" শর্তে তাদের বিরোধ উপস্থাপন করে, স্বীকার করে যে উভয় পক্ষেই শান্তি প্রত্যাখ্যান করা চরমপন্থী আছে, ইত্যাদি ইত্যাদি, তখন তাদের একটি সহজ প্রশ্ন করা উচিত: মধ্যপ্রাচ্যে তখন কি হয়, যখন সরাসরি রাজনৈতিক-সামরিক পর্যায়ে কিছুই হয় না (অর্থাৎ, যখন কোনো উত্তেজনা, আক্রমণ বা আলোচনা)?
যা হচ্ছে, তা হলো, পশ্চিমতীরে ফিলিস্তিনিদের কাছ থেকে বিরামহীনভাবে ধীরে ধীরে জমি কেড়ে নেয়া হচ্ছে: এতে ক্রমশ ফিলিস্তিনের অর্থনীতি শ্বাসরুদ্ধ হয়ে পড়ছে, বিলিবন্টন করে দেয়া হচ্ছে তাদের জমিজমাও, নতুন বসতি স্থাপন হচ্ছে, ফিলিস্তিনি কৃষকদের উপর চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে যাতে তারা নিজের জমি ছেড়ে দেয় (ফসল পুড়িয়ে দেয়া ও ধর্মকে অবমাননা করা থেকে শুরু করে ব্যক্তির হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে চাপ সৃষ্টি করা হয়), আর আইনি বিধিমালার যে কাফকায়েস্ক [অত্যাচারীর নিষ্ঠুর বৈশিষ্ট্য, এটি ফ্রানৎস কাফকার কাছ থেকে আসা একটি কাল্পনিক শব্দ] চক্র আছে তার দ্বারা ওসব কাজ সমর্থনপুষ্ট হয়।'প্যালেস্টাইন ইনসাইড আউট: অ্যান এভরিডে অকুপেশন' বইতে শরী মকদিসি বর্ণনা করেছেন পশ্চিমতীরে ইসরাইলি দখলদারিত্ব কিভাবে শেষ পর্যন্ত সশস্ত্র বাহিনীর মদতেই হচ্ছে।
এই "দখল চলছে আমলাতন্ত্রের মাধ্যমে": এর উপরিভাগে দেখা যাবে—আবেদন ফরম, বায়নাপত্র, বসবাসের জন্য দলিলও অন্যান্য অনুমতিপত্র। এটি হলো দৈনন্দিন জীবনের ছোট ছোট ব্যবস্থাপনা, যা দিয়ে ধীরে ধীরে স্থায়ীভাবে ইসরাইলি সম্প্রসারণকে সুরক্ষিত করা হচ্ছে। অথচ ফিলিস্তিনিদের ক্ষেত্রে নিজের পরিবারের সাথে থাকার জন্য অনুমতি লাগে, নিজের জমিতে কৃষিকাজ করতে অনুমতি লাগে, কূপ খনন করতে অনুমতি লাগে, কাজে যাওয়ার জন্য অনুমতি লাগে, স্কুলে যেতে অনুমতি লাগে, হাসপাতালে যেতে… এভাবে এক এক করে জেরুসালেমে জন্মগ্রহণকারী ফিলিস্তিনিদের কাছ থেকে নিজেদের মাটিতেই বসবাসের অধিকার ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে, জীবিকা নির্বাহ থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে, বাড়িঘর নির্মাণ থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে, এমন আরো বহু কিছু থেকেই তারা এখন বঞ্চিত।
ফিলিস্তিনিরা গাজা উপত্যকা সম্পর্কে প্রায়ই একটি সমস্যাযুক্ত ক্লিশে কথা ব্যবহার করে—"বিশ্বের বৃহত্তম বন্দী শিবির"—যেভাবেই হোক,এই আখ্যা বিপজ্জনকভাবে সত্যের কাছাকাছি চলে এসেছে।
এমন মৌলিক বাস্তবতা আসলে সকল ধরনের বিমূর্ত "শান্তির জন্য প্রার্থনাকে" অশ্লীলতা ও ভণ্ডামিতে পর্যবসিত করেছে। ইসরাইল রাষ্ট্র স্পষ্টভাবেই ধীর গতিতে, অদৃশ্য প্রক্রিয়ায়, সংবাদ মাধ্যম দ্বারা যা উপেক্ষিত, বলা যায় গন্ধমূষিকের মতো পাতাল খনন করে চলেছে, যাতে একদিন হঠাৎ বিশ্ব জেগে উঠে দেখবে এবং বুঝতে পারবে যে ফিলিস্তিনি পশ্চিমতীর বলে আর কিছু নেই, এটি হয়ে যাবে বিনামূল্যে পাওয়া ফিলিস্তিনি জমিন, এবং তখন এটিকে মেনে নেয়া ছাড়া আর কোন পথ খোলা থাকবে না। ফিলিস্তিনি পশ্চিমতীরের মানচিত্রটি ইতিমধ্যেই একটি খণ্ডিত দ্বীপপুঞ্জের মতো দেখায়।
মাঝে মাঝে অবশ্য ইসরাইল রাষ্ট্র ইসরায়েলের বাড়াবাড়িকে নিয়ন্ত্রণ করারও চেষ্টা করেছে, যেমন বলা যায় ২০০৮ সালের শেষের দিককার কথা, তখন জোরপূর্বক বানানো কিছু বাড়ি খালি করার নির্দেশ দিয়েছিলেন সর্বোচ্চ আদালত, সেসময় পশ্চিমতীরে ফিলিস্তিনি কৃষকদের উপর অবৈধ বসতি স্থাপনকারীদের হামলার ঘটনা হয়ে উঠেছিল নিত্যদিনের ব্যাপার। তবে, তখন অনেক পর্যবেক্ষকই মন্তব্য করেছিলেন, এই ঘটনাগুলোকে তুচ্ছ বৈ আর কিছু নয় হিসেবেই গণ্য করা যায়, রাজনীতির বিরুদ্ধে, গভীরে, ভিন্ন মাত্রায়,ইসরাইল রাষ্ট্রের দীর্ঘমেয়াদী আরেক রাজনীতি চলছে, যা ইসরাইলের নিজের স্বাক্ষর করা আন্তর্জাতিক চুক্তিগুলোকেই ব্যাপকভাবে লঙ্ঘন করে চলেছে।
আন্তর্জাতিক নিন্দা সত্ত্বেও নেতানিয়াহু ব্যাপক উদ্যমে নতুন অবৈধ বসতি স্থাপনের পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। ইসরাইলি কর্তৃপক্ষের কাছে অবৈধ বসতি স্থাপনকারীদের জবাব মূলত: আমরা আপনাদেরকেই অনুসরণ করছি, আরো খোলামেলা ভাবে, সুতরাং কোন অধিকারে আমাদের নিন্দা করতে এসেছেন? এর বিপরীতে ইসরায়েল রাষ্ট্রের জবাব: ধৈর্য ধরুন, তাড়াহুড়ো করবেন না; আপনারা যা চান আমরা সেটাই করছি, শুধু আরেকটু পরিমিত ও গ্রহণযোগ্য উপায়ে। মনে হচ্ছে একই গল্প সেই ১৯৪৯ সাল থেকে চলছে: ইসরাইল যখন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রস্তাবিত শান্তি প্রতিষ্ঠার শর্তসমূহ মেনে নেয়, তখন আরেকটি হিসাবও সামনে চলে আসে যে এই শান্তি পরিকল্পনা কার্যকর হবে না।
খেপা বসতি স্থাপনকারীদের মাঝে মাঝে ভাগনারের [ভিলহেলম রিচার্ড ভাগনার] 'ডি ভালকুরি'(Die Walküre) ১.গীতিনাট্যের শেষ অঙ্কে ব্রুনহিল্ডের [নাটকের এক নারী চরিত্র] অবস্থার মতো মনে হয়, সে পিতা ভোটানকে তিরস্কার করেছিল, আর পিতার সুস্পষ্ট আদেশের বিরুদ্ধে গিয়ে, জিগমুন্ডকে রক্ষা করেছিল; ব্রুনহিল্ডই কেবল বুঝতে পেরেছিল ভোটানের প্রকৃত আকাঙ্ক্ষা, বাইরের চাপের কারণে বাধ্য হয়ে পিতা তাকে ত্যাগ করেছিল। একইভাবে, অবৈধ বসতি স্থাপনকারীরাই কেবলমাত্র রাষ্ট্রের সত্যিকারের আকাঙ্ক্ষা উপলব্ধি করতে পারে, তারা বোঝে যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপের কারণেই রাষ্ট্র বাধ্য হয়ে তাদের ত্যাগ করেছে।
ইসরাইল একদিকে "অবৈধ" জনবসতির প্রকাশ্য সহিংস বাড়াবাড়ির নিন্দা করে, অপরদিকে, ইসরাইল রাষ্ট্র পশ্চিমতীরে নতুন "বৈধ" বসতি স্থাপনকে উৎসাহিত করে এবং ফিলিস্তিনি অর্থনীতির শ্বাসরোধ করে রাখার মতো আরো কিছু করতে থাকে। পূর্ব জেরুসালেম, যেখানে ক্রমশই ফিলিস্তিনিরা ঘেরাটোপের ভেতর আটকে পড়ছে আর তাদের জায়গা টুকরো টুকরো করে ভাগ হয়ে যাচ্ছে, সেখানকার পরিবর্তিত মানচিত্রের দিকে তাকালেই সবকিছু পরিষ্কার হয়ে যায়।
অ-রাষ্ট্রিক ফিলিস্তিন বিরোধী সহিংসতার নিন্দা করলে, রাষ্ট্রীয় সহিংসতার সত্যিকারের সমস্যাটি ঘোলাটে হয়ে যায়; অবৈধ বসতি স্থাপনের নিন্দা করলে বৈধ জিনিসের অবৈধতার বিষয়টিও অস্পষ্ট হয়ে ওঠে। আর তাতেই ইসরাইলি সর্বোচ্চ আদালতের বহুল প্রশংসিত নিরপেক্ষ "সততা"র দুমুখো অবস্থান পরিষ্কার হয়: মাঝেমধ্যে উৎখাতকৃত ফিলিস্তিনিদের পক্ষে যে রায় দেয়া হয়, বলা হয়, তাদের স্থানচ্যুত করা ছিলো অবৈধ, সেটার মাধ্যমে বাকি বড় ঘটনাগুলোর বৈধতার নিশ্চয়তাই আসলে দেয়া হয়।
আর—যে কোন ধরনের ভুল বোঝাবুঝি এড়াতে—সবকিছু আমলে নিয়ে বলতে চাই, এটি কোনভাবেই অমার্জনীয় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জন্য "বোঝাপড়া" নয়। উল্টো, এটি সেইরকম এক ক্ষেত্র প্রদান করে, যেখান থেকে ভণ্ডামি ছাড়াই সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা করা যায়।
অনুবাদ: বিধান রিবেরু
(স্লোভেনিয়ার দার্শনিক স্লাভোয় জিজেকের এই লেখাটি নেয়া হয়েছে অড্রি লিম সম্পাদিত বই 'দ্য কেইস ফর স্যাঙ্কশনস অ্যাগেইন্সট ইজরায়েল' থেকে। বইটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, ২০১২ সালে, ভারসো প্রকাশনী থেকে বেরিয়েছে।)
অনুবাদকের বোধিনী
১. 'ডি ভালকুরি'র কাহিনী নরওয়ে দেশীয় পুরাণের উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছে। এই গল্পে দেখা যায়, যমজ ভাইবোন জিগমুন্ড ও জিগলিন্ড ছোটবেলায় আলাদা হয়ে যায়। পরবর্তীকালে তারা একে অপরের প্রেমে পড়ে এবং তারা মিলিত হয়। এই মিলন দেবতাদের ক্রুদ্ধ করে তোলে, তারা সিদ্ধান্ত নেয় জিগমুন্ডকে অবশ্যই মরে যেতে হবে। কিন্তু দেবতা ভোটান, বা মতান্তরে ওডিন দেবতার কন্যা ভালকিরিয়া ব্রুনহিল্ড এই দম্পতির পাশে দাঁড়ায়। জিগমুন্ড-জিগলিন্ডের অনাগত সন্তানকেও রক্ষা করতে চায় ব্রুনহিল্ড। এতে করে দেবতার প্রতিশোধের মুখোমুখি হয় ব্রুনহিল্ড। পিতা ভোটান তখন দেবতাদের চাপে পড়ে মুখ ফিরিয়ে নেয় কন্যার কাছ থেকে। - অনুবাদক