অনন্তের ঠিকানা
দরজার তালাটা খুলে ঘরের ভেতর সে যা দেখল, তাতে অবাক হলো না ও। চারদিকে সব পরিপাটি, ঠিকঠাক, ঘরটা গুছানো। রান্নাঘরে সব তৈরি, এমনকি বাসনগুলাও পরিষ্কার করে রাখা তাকে। সে খাটে খানিকক্ষণ বসে থাকে। তারপর উঠে কলঘরে যায়। মেঝেতে পানির দাগ, কারও দেহের হালকা ঘ্রাণ পাওয়া যায়। তার ইচ্ছা হয় জানতে– কে আসে, নারী না পুরুষ? সাবানটা ব্যবহার হয়েছে বোঝা যায়। যে আসে, তার ঘরের চাবি কই পায়? সে কি জীবিত কেউ? নাকি তার মতো প্রয়াত? দেখা করে না কেন? কেন আসে? যে আহার সে খায় না, যে বিছানায় সে ঘুমায় না, যে কলঘর তার দরকার নেই, তার দেখাশোনা কেন করে?
২
বিকেলের দিকে অনন্ত ঘর থেকে সিঁড়ি দিয়ে নেমে হাঁটতে যায়। দেখে সিঁড়ির নিচে বুয়াটা ঝাড়ু দিচ্ছে। সে একটু থামে। লাল সালোয়ার-কামিজ পরা, তার ওপর ওড়না, মাথায় কাপড়। একমনে কাজ করে যাচ্ছে। তাকে দেখে কাজ থামে, হেসে কোমর সোজা করে বলে, 'যান অনন্ত বাবু, যান, বাইরে যাইতাসেন? যান। মনটা ভালো লাগব। সারা দিন ঘরে থাকেন। আমার জন্য একটা পান নিয়ে আইসেন। পয়সা দিমু?' সে হাসে।
অনন্ত হেসে আগায়। বুয়াটা একদিন জিজ্ঞেস করেছিল, 'এরপর সব ভালো হয়ে যাবে?'
সে হাঁটতে থাকে চায়ের দোকানটার দিকে।
৩
চায়ের দোকানটায় অনেক ভিড়, তবে যে ছোকরাটা চা দেয়, সে চেনা, তাকে নিয়ে যায় তার চেনা চেয়ারে। বাইরে হালকা বৃষ্টি হচ্ছে। সে তাকিয়ে থাকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে। বৃষ্টি বড় সুন্দর। ছেলেটা এক কাপ চা আর দুইটা ছোট শিঙাড়া রাখে সামনে। তারপর হাই তুলে চলে যায়। একজন বৃদ্ধ মানুষ পাশের চেয়ারে বসে চা খাচ্ছিল। চোখাচোখি হতে হাসে, কাপটা নামিয়ে জিজ্ঞাসা করে, 'এমন অসময় বৃষ্টির কি নাম?'
৪
দরজার তালা খুলে হারুন ঘরে ঢোকে। সবকিছু গোছানো, এমনকি রান্নাঘরেও সব পরিপাটি ও রান্না করা, যত্নের সংসার যেন। সে খাটে খানিকক্ষণ বসে থাকে। তারপর উঠে কলঘরে যায়। মেঝেতে পানির দাগ, কারও দেহের হালকা ঘ্রাণ পাওয়া যায়। তার ইচ্ছা হয় জানতে– কে আসে, নারী না পুরুষ। সাবানটা ব্যবহার হয়েছে বোঝা যায়। যে আসে সে তার ঘরের চাবি পায় কোত্থেকে? জীবিত কেউ, নাকি তার মতো প্রয়াত? দেখা করে না? কেন আসে? যে আহার সে খায় না, যে বিছানায় ঘুমায় না, যে কলঘর তার দরকার নেই, তার দেখাশোনা কেন করে?
এই ঘরে নাকি অনন্ত নামে কেউ থাকত, সে এখনো থাকে? আত্মহত্যা করেছিল তার মতো?