মরুর কাঁটায় ক্ষত-বিক্ষত মেসিরা
অবিশ্বাস্য! অসম্ভব! রূপকথা! যাই বলুন না কেন, আর্জেন্টিনার বিপক্ষে সৌদি আরবের এই জয়কে ব্যাখায় করার মতো কোনো শব্দই যে নেই। যেখানে গ্রুপ পর্ব থেকে এক পয়েন্ট পেলেই নিজেদের স্বার্থক মনে করতো সৌদি আরব, সেখানে কিনা তারা হারিয়ে দিল বিশ্বকাপেরই অন্যতম ফেভারিট আর্জেন্টিনাকে!
আর্জেন্টিনার ৩৬ ম্যাচ অপরাজিত থাকার রেকর্ড ভেঙে দিল সৌদি আরব। ম্যাচের আগেই সবাইকে চমকে দিতে চান বলে মন্তব্য করেছিলেন সৌদি আরব কোচ হারভে রেনার্ড। তার দল যে আসলেই সবাইকে এভাবে চমকে দিবে এই প্রত্যাশা করেনি কেউই। কিন্তু বিশ্বকাপের ইতিহাসের অন্যতম বড় অঘটন ঘটিয়ে ফেভারিট আর্জেন্টিনাকে ২-১ গোলে হারিয়েছে ঈগল রা।
ম্যাচের আগে সৌদি আরবের সম্ভাবনা দেখছিলেন না কেউই। কিন্তু লুসাইল স্টেডিয়ামের দর্শকসারিতে সৌদি সমর্থকদেরই আনাগোণা ছিল বেশি, কাতারের পাশের দেশ বলে সহজেই আসতে পেরেছে তারা। কিন্তু সৌদির এতো সমর্থকদেরকে হতাশ করবে আর্জেন্টিনা, এমনটিই ধারণা ছিল সবার। ম্যাচের শুরুতেই গোল করে এগিয়ে গিয়ে সেটি আরো জোরদার করে আলবিসেলেস্তেরা।
হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের প্রথমার্ধ শেষে ১-০ গোলে এগিয়ে থাকে আর্জেন্টিনা। ম্যাচের ১০ মিনিটে পেনাল্টি থেকে গোলটি করেন লিওনেল মেসি। কাতার বিশ্বকাপে এটি মেসির প্রথম গোল এবং সব মিলিয়ে বিশ্বকাপে ৭ম।
শক্তির ব্যবধানে আর্জেন্টিনার থেকে ঢের পিছিয়ে থাকলেও প্রথমার্ধে সমানতালে লড়েছে সৌদি আরব। গোলের পরিস্কার সুযোগ তৈরি না করতে পারলেও আর্জেন্টিনাকে স্বভাবসুলভ খেলা খেলতে দেয়নি হার্ভে রেনার্ডের দল।
ম্যাচের ৮ মিনিটে ডি-বক্সের ভেতর আর্জেন্টিনার পারেদেস কে জাপ্টে ধরার শাস্তি হিসেবে পেনাল্টি দেন রেফারি। যদিও প্রথমে পেনাল্টির বাঁশি দেননি তিনি, ভিডিও অ্যাসিস্টিং রেফারি পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের ইশারা দেন তাকে। পেনাল্টি থেকে গোল করতে ভুল করেননি লিওনেল মেসি।
এরপর আর্জেন্টিনার ৩ টি গোল বাতিল হয়ে যায় অফসাইডের কারণে। যার মধ্যে দুটি গোল লাউতারো মার্টিনেজের, একটি মেসির।
এরপর দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকেই সৌদি আরবের আক্রমণে কোণঠাসা হয়ে পড়ে আর্জেন্টিনার রক্ষণ। ৪৮ মিনিটে অসাধারণ ফিনিশে ম্যাচে সমতা ফেরান আল শেহরি। এরপর ৫৩ মিনিটে দুর্দান্ত একটি গোল করেন সৌদি অধিনায়ক সালেম আল দাওসারি।
২-১ এ এগিয়ে যাওয়ার পরেও আক্রমণ চালাতে থাকে সৌদি আরব। তবে আর্জেন্টিনার ম্যানেজার স্কালোনি কয়েকটি বদল আনার পরে কিছুটা গুছিয়ে উঠে এলেমেলো হয়ে যাওয়া আর্জেন্টিনা। কিন্তু শত চেষ্টা করেও সৌদির রক্ষণ ভাঙতে পারেননি মেসি-ডি মারিয়ারা। সৌদি গোলকিপার আল ওয়াইস যেন হয়ে উঠেছিলেন চীনের মহাপ্রাচীর!
গোটা ম্যাচেই সাহসিকতার সাথে খেলেছে সৌদি আরব। তবে বল দখলের লড়াইয়ে স্বাভাবিকভাবেই পিছিয়ে ছিল তারা। আর্জেন্টিনার ৭০% বল দখলের পাশাপাশি ১৫টি গোল প্রচেষ্টার বিপরীতে সৌদির গোলমুখী প্রচেষ্টা ছিল মাত্র ৩ টি। যার দুটিই জালে জড়াতে সক্ষম হয় ঈগলরা।
গ্রুপ পর্বের প্রথম ম্যাচেই এই হার চাপের মুখে ফেলবে শিরোপা প্রত্যাশী আর্জেন্টিনাকে। আর গ্রুপ পর্ব পার হওয়ার সুযোগ তৈরি হল সৌদি আরবের সামনে। আর্জেন্টিনার পরবর্তী দুই ম্যাচের প্রতিপক্ষ মেক্সিকো এবং পোল্যান্ড, যার মধ্যে শনিবার মেক্সিকোর মুখোমুখি হবে তারা। সৌদি আরবও খেলবে এই দুই দলের বিপক্ষেই, পরবর্তী ম্যাচে তাদের প্রতিপক্ষ পোল্যান্ড।