ক্ষুদ্ধ মেসিকে দেখতে ভালোবাসি: পাবলো জাবালেতা
ফুটবল বিশ্বের অন্যতম এক নক্ষত্রের নাম পাবলো জাবালেতা। লিওনেল মেসি, সার্জিও আগুয়েরো, গঞ্জালো হিগুয়াইন যখন গোল করতে ছুটছেন, তখন আর্জেন্টিনার রক্ষণভাগ সামলাতে ব্যস্ত এই ডিফেন্ডার। বর্তমানে ফুটবল থেকে দূরে থাকলেও, মেসিদের নিয়মিত পর্যবেক্ষণ থেকে যেন বিরতি নেই ৩৭ বছর বয়সী এই সাবেক ফুটবলারের।
আলবিসেলেস্তের বর্তমান দলকে নিয়ে সন্তুষ্ট তিনি। তার মতে, আর্জেন্টিনার এবারের দল 'সম্পূর্ণ'। নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে জয় এবং খেলা শেষে মেসির প্রতিক্রিয়া দেখে আরেকটু আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেছেন জাবালেতা। সম্প্রতি তিনি মেসিকে নিয়ে বিবিসি স্পোর্ট'কে বলেছেন, 'আমরা ক্ষুদ্ধ মেসিকে দেখতে ভালোবাসি।' খবর গোল ডট কম-এর।
আর্জেন্টিনার জাতীয় ফুটবল দলে ম্যারাডোনাকে কেউ যদি প্রতিস্থাপন করে থাকেন, তিনি হলেন মেসি। ক্লাব লেভেলের প্রায় সব মর্যাদা অর্জন করতে পেরেছেন মেসি। কেবল বিশ্বকাপটাই এখনো বাকি।
সাতবার ব্যালন ডি'অর জয়ী এই তারকার জন্য কাতার বিশ্বকাপই বোধহয় শেষ আসর। তাই এই টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হতে মরিয়া তিনি। গত ম্যাচগুলোতে তার পারফরম্যান্স দেখেই তা বোঝা যায়। সৌদি আরবের বিপক্ষের ম্যাচ বাদে বাকি সবকটিতেই হয়েছেন ম্যান অব দ্য ম্যাচ। গোলের দিক থেকে ছাড়িয়ে গেছেন পূর্বসূরী ম্যারাডোনাকে। সতীর্থদের দিচ্ছেন দারুণ সব অ্যাসিস্ট।
টানটান উত্তেজনাপূর্ণ শেষ ম্যাচে অর্থাৎ নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে জয়লাভ করে যে আবেগ তিনি দেখিয়েছেন, তা দেখে ভক্তকূলের মনে হতেই পারে, মেসি নিজের ভেতরে থাকা সুপ্ত '১৯৮৬ সালের জয়ী ম্যারাডোনার সত্ত্বা'কে জাগিয়ে তুলেছেন।
জাবালেতা বিবিসি স্পোর্ট'কে বলেন, 'খেলা শেষে মেসির প্রতিক্রিয়া আমি বেশ পছন্দ করেছি; তার গোল উদযাপনের ভঙ্গি, ফন গালকে বলে আসা কথা (যা-ই বলুক না কেন) - সবকিছুই পছন্দ হয়েছে আমার। আমরা ক্ষুদ্ধ মেসিকে দেখতে ভালোবাসি।'
খেলা শেষে মেসির এ প্রতিক্রিয়া জাবালেতাকে ম্যারাডোনার কথা স্বরণ করিয়ে দিয়েছিল। বিশ্বকাপ জেতাতে এমন দৃঢ় মানসিকতা ভালো ফল বয়ে আনবে বলে মনে করেন তিনি। মেসির এই 'এখন অথবা কখনোই না' মানসিকতা তাকে সামনে এগিয়ে নিচ্ছে বলে বিশ্বাস তার।
তিনি বলেন, মেসি তরুণ খেলোয়াড়ের এমন এক স্কোয়াডকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন, যাদের অনেকেরই এটা প্রথম বিশ্বকাপ। টানেল থেকে তাকে বের হতে দেখলেই মনে হয় তার পেছনে যে সতীর্থরা আছেন, তারা যেন মেসির দেহরক্ষী। এমনকি মাঠে খেলার সময়ও মনে হয়, তারা প্রত্যেকে যেন মেসির জন্যেই লড়াইয়ে নেমেছেন, মেসিকেই রক্ষা করে চলেছেন।'
মেসির সাথে খেলার দিনগুলোরও স্মৃতিচারণ করেন জাবালেতা। তিনি বলেন, 'তার সাথে খেলেছি বলে জানি, মেসির মধ্যে সতীর্থদের সামনে একটা মানদণ্ড বা উদাহরণ সৃষ্টি করার দায়িত্ববোধ কাজ করে। আমি এটাও নিশ্চিত করে বলে দিতে পারি যে, এই বিশ্বকাপের প্রতিটি মুহূর্ত সে উপভোগ করছে। কারণ সে জানে, তার সাথে রয়েছে প্রত্যেক সতীর্থের অকুণ্ঠ সমর্থন।'
'বরাবরই দলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় ছিল মেসি। ২০১৪ সালে ফাইনালে ওঠা আর্জেন্টিনার সেই দলে আমিও ছিলাম। সেবার আমরা হেরে গিয়েছিলাম। কিন্তু মনে রাখতে হবে, তার বয়স তখন ২৭ ছিল, ৩৫ নয়। তখন আর এখনের মধ্যে পার্থক্য হলো, এটি তার শেষ সুযোগ, তার শেষ নৃত্য! এ কারণেই সবকিছু আরও বেশি জরুরী হয়ে উঠেছে। আমাদের দলের পারফরম্যান্স দেখলেই তা বোঝা যায়।'
এবার জয়টা যেমন গুরুত্বপূর্ণ, হার দতটাই ভারী হয়ে নেমে আসবে আর্জেন্টিনার ওপর - এমনটা স্বীকার করেন ম্যানচেস্টার সিটির এই সাবেক ডিফেন্ডার। তার কাছে, এবার হেরে যাওয়া মানে এক কথায়, মেসির স্বপ্নের সমাপ্তি। তাই দলের ওপর চাপটা একটি বেশিই।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ সময় আজ রাত একটায় সেমিফাইনালের লড়াইয়ে মাঠে নামবে ক্রোয়েশিয়া এবং আর্জেন্টিনা।