বিশ্বকাপে তৃতীয় স্থান নির্ধারণী খেলা এখনো কেন হয়? পুরোটাই টাকার জন্য!
যদি হুট করে একজন ফুটবল দর্শককে জিজ্ঞাসা করা হয় যে, ২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপের তৃতীয় স্থান নির্ধারণ করেছে কোন দল তবে সহসাই দর্শক এ প্রশ্নের জবাব দিতে পারবেন না। কেননা পৃথিবীর ইতিহাসের মতো ফুটবল ইতিহাসেও শুধু বিজয়ীদেরই মনে রাখা হয়, বড়জোর বিজয়ীদের আলোচনায় উঠে আসে রানার্স আপ দলের নাম। তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে প্রতি বছর ঘটা করে কেন তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচের আয়োজন করা হয়! কঠিন এ প্রশ্নের এক কথায় সহজ উত্তর হচ্ছে, টাকা। মূলত ফিফা নিজেদের বাড়তি আয়ের জন্যই বাঁচিয়ে রেখেছে নামমাত্র এই তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচকে। খবর ইয়াহু নিউজ।
ক্যাপিটালিজমের এ যুগে ফুটবলও এর বাইরে থাকতে পারেনি। বরং ফুটবলের রন্ধে রন্ধে জড়িয়ে গেছে টাকার সাথে সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি। আর এই টাকার পেছনে ছোটার দৌড়ে ফুটবলের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফাও পিছিয়ে নেই। যার জ্বলন্ত প্রমাণ এই তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচ। ১৯৫৪ সাল থেকেই বিশ্বকাপে তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়। আর বাড়তি অনুষ্ঠিত হওয়া এই এক ম্যাচের কারণে বিশ্বকাপের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্রডকাস্টার ও স্পন্সরদের কাছ থেকে বাড়তি টাকা আয় হয় ফিফার।
তবে আসর ও পুরষ্কারের ধরণ ভেদে তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচের যৌক্তিকতা থাকতে পারে। যেমনটা রয়েছে অলিম্পিকের ক্ষেত্রে। কেননা অলিম্পিকে প্রথম ও দ্বিতীয় স্থান অর্জনকারীদের জন্যই যে শুধু পুরষ্কার রয়েছে বিষয়টা এমন নয়। বরং তৃতীয় স্থান নির্ধারণকারীদের জন্যও রয়েছে সম্মানসূচক ব্রোঞ্জ পুরষ্কার। কিন্তু বিশ্বকাপ আসরে যেহেতু ব্রোঞ্জের মতো কোনো সম্মানসূচক পদক নেই সুতরাং তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচটির প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেক ফুটবল বিশ্লেষক।
২০০২ ফুটবল বিশ্বকাপের কথাই ধরা যাক। এ আসরের ফাইনালে ব্রাজিল যে জার্মানির বিপক্ষে জিতেছে সেটি তো সবারই জানা। এমনকি ফাইনালে ব্রাজিলের হয়ে কিংবদন্তি রোনালদো যে জোড়া গোল করেছে সেটিও অনেকেই জানেন। কিন্তু ঐ বিশ্বকাপেই তৃতীয় হয়েছিল কোন দল সেটি কি কেউ মনে রেখেছে? যদিও ২০০২ বিশ্বকাপে সবচেয়ে বড় চমক দেখিয়ে তুরস্ক তৃতীয় স্থান অর্জন করেছিল তবুও তাঁরা ইতিহাসের পাতায় অতটা স্মরণীয় হতে পারেনি। কেননা বাস্তবতায় বিশ্বকাপ আসরে তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচের গুরুত্ব সামান্যই।
তবে সমালোচনা যতই থাকুক না কেন চলমান কাতার বিশ্বকাপেও রীতি মেনে আয়োজিত হবে তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচ; বাড়তি আয় হবে ফিফার। শুধু কাতারেই নয়, বরং ফিফার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আগামী ২০২৬ বিশ্বকাপেও যথারীতি থাকবে তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচ। যাই হোক, বিশ্বকাপের চলতি আসরে সেমিফাইনালে আর্জেন্টিনার কাছে ৩-০ গোলের ব্যবধানে হেরে ক্রোয়েশিয়া এবং ফ্রান্সের কাছে ২-০ গোলের ব্যবধানে হেরে মরক্কো বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে পরেছে। তবুও ফিফার নিয়ম মানতেই আগামীকাল (শনিবার) রাত ৯ টায় তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচে মুখোমুখি হবে এ দুই দল।
তবে মরক্কো ও ক্রোয়েশিয়া চলতি আসরেই আরও একবার গ্রুপ পর্বে পরস্পরের মুখোমুখি হয়েছিল। গ্রুপ পর্বের নিজেদের প্রথম ঐ ম্যাচটি গোলশূন্য ব্যবধানে ড্র হয়েছিল। তবে গ্রুপ পর্বের ঐ ম্যাচের পর সময় গড়িয়েছে অনেক; পরবর্তী ম্যাচগুলোতে মরক্কো বাঘা বাঘা দলের বিপক্ষে নিজেদের জাত চিনিয়েছে। আর তাই ধারণা করা হচ্ছে যে, মরক্কোর বিপক্ষে গত আসরের রানার্স আপ দল ক্রোয়েশিয়ার সান্ত্বনাসূচক এ ম্যাচটি জেতা খুব একটা সহজ হবে না।
সূত্র: ইয়াহু নিউজ