যে চার কারণে বিশ্বকাপ জিতেছে আর্জেন্টিনা
৩৬ বছরের দীর্ঘ প্রতিক্ষার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে বিশ্বকাপ জিতেছে আর্জেন্টিনা। লিওনেল মেসি পেয়েছেন তার পরম আরাধ্য শিরোপার দেখা। আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ের পেছনে দলীয় সমন্বয়ের পাশাপাশি কোচ লিওনেল স্কালোনির দিক নির্দেশনাও ছিল বড় প্রভাবক।
লিওনেল মেসির শেষ বিশ্বকাপ হওয়াতে এটি তার জন্য আলাদা উদ্দীপনা হিসেবে কাজ করেছে। নিজের সর্বস্ব দিয়ে খেলেছেন তিনি। আর্জেন্টিনা দলে ছিল অভিজ্ঞতা এবং তারুণ্যের মিশেল, এমন আরো কয়েকটি প্রভাবক কাজ করেছে আলবিসেলেস্তেদের বিশ্বজয়ের পেছনে।
বিশ্বকাপে মেসির সেরা পারফরম্যান্স
নিজের পঞ্চম বিশ্বকাপের জন্য সেরাটা জমিয়ে রেখেছিলেন লিওনেল মেসি। আগের খেলা চারটি বিশ্বকাপ থেকে হতাশ হয়ে ফিরতে হয়েছে মেসিকে।
এবার হতাশ হওয়ার আর কোনো সুযোগ রাখেননি তিনি। ৭ গোল করে সর্বোচ্চ গোলদাতার তালিকায় হয়েছেন দ্বিতীয়। নক আউট পর্বের সব ম্যাচে গোল করেছেন, বিশ্বকাপের ইতিহাসেই যা প্রথম নজির। বিশ্বকাপের ইতিহাসে প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে দুটি গোল্ডেন বল জিতেছেন মেসি।
মেসি জ্বলে উঠলে প্রতিপক্ষের খুব বেশি কিছু করার থাকে না সেটি আরেকবার প্রমাণ হল কাতার বিশ্বকাপে।
অভিজ্ঞতা এবং তারুণ্যের মিশেল
আর্জেন্টিনার এই দলে ছিল অভিজ্ঞতা এবং তারুণ্যের দুর্দান্ত মিশেল। লিওনেল মেসি, আনহেল দি মারিয়া, নিকোলাস ওতামেন্দিদের মতো দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞদের সঙ্গে ছিলেন এনসো ফার্নান্দেজ, হুলিয়ান আলভারেজ, অ্যালেক্সিস ম্যাকএলিস্টার, ক্রিস্টিয়ান রোমেরোদের মতো তরুণেরা।
সবাই যার যার জায়গা থেকে সর্বোচ্চ দিয়ে পারফর্ম করেছেন। ২১ বছর বয়সী মিডফিল্ডার এনসো ফার্নান্দেজ হয়েছেন বিশ্বকাপের সেরা উদীয়মান তারকা। মেসির পাশে খেলে ৪ গোল করেছেন হুলিয়ান আলভারেজ।
দুর্দান্ত 'ব্রেক-আপ' প্লে
লিওনেল স্কালোনির পরিকল্পনা ছিল আর্জেন্টিনাকে প্রতি-আক্রমনণভিত্তিক ফুটবল খেলা। প্রতিপক্ষ বুঝে পরিকল্পনা সাজিয়েছেন স্কালোনি। পুরো টুর্নামেন্টেই আর্জেন্টিনার খেলায় ছিল আধিপত্যের ছাপ। প্রতিপক্ষের আক্রমণ ভেঙ্গে দ্রুতগতিতে প্রতি-আক্রমণে যাওয়া ছিল আর্জেন্টিনার খেলার বৈশিষ্ট্য।
ফাইনালের প্রতিপক্ষ ফ্রান্সের শক্তিমত্তার থেকে কম ছিল না আর্জেন্টিনার সামর্থ্য। সমানে সমানে লড়াইয়ে নিজেদের পরিকল্পনা কাজে লাগিয়েই জিতেছে আর্জেন্টিনা।
একজন এমিলিয়ানো মার্তিনেস
তিন বছর আগেও তাকে চিনতো না বিশ্ব। ২০২১ কোপা আমেরিকা জেতার পেছনে বড় ভূমিকা ছিল মার্তিনেসের। এবার তো সবচেয়ে বড় শিরোপাটাই আর্জেন্টিনাকে জিতিয়েছেন পরম নির্ভরতায় গোলপোস্ট সামলে।
শেষ ষোলোর ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে শেষ মুহূর্তের দুর্দান্ত সেইভ, কোয়ার্টার-ফাইনালে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে টাইব্রেকারে দুটি শট সেইভ, ফাইনালে ৩-৩ সমতা থাকা অবস্থায় ১২৩ মিনিটে নিশ্চিত গোল সেইভের পর টাইব্রেকারে কোম্যানের শট ঠেকানো। শুধু এমিলিয়ানো মার্তিনেসের বিশ্বকাপ পারফরম্যান্স নিয়েই লেখা যাবে মহাকাব্য।
বিশ্বকাপ জয়ের জন্য মাঠের পারফরম্যান্সের সাথে লাগে ভাগ্যের ছোঁয়াও। আর্জেন্টিনা সেটি পেয়েছে বটে, কিন্তু আলবিসেলেস্তেরা নিজেদের নৈপুণ্য দেখিয়েই জয় করেছে বিশ্ব।