সাকিব জাদুতে রেকর্ড গড়া জয়ে সুপার টুয়েলভে বাংলাদেশ
বাংলাদেশ যখন খাদের কিনারে, তখনই ত্রাতা সাকিব আল হাসান। ওমানের বিপক্ষে হারলে থেমে যেতে পারতো বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মিশন। এই ম্যাচেই চেনা চেহারায় ফিরে ব্যাটে-বলে আলো ছড়িয়ে দলকে দারুণ এক জয় উপহার দেন বিশ্বের অন্যতম সেরা এই অলরাউন্ডার। আর পাপুয়া নিউ গিনির (পিএনজি) বিপক্ষে সাকিব হয়ে উঠলেন অনবদ্য। তার চোখ ধাঁধানো অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে পিএনজিকে হারিয়ে বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভে উঠে গেল বাংলাদেশ।
বৃহস্পতিবার মাসকাটের আল আমেরাত ক্রিকেট গ্রাউন্ডে পিএনজিকে উড়িয়ে দিয়েছে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের দল। ওশেনিয়া অঞ্চলের দলটিকে ৮৪ রানের বিশাল ব্যবধানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এটা বাংলাদেশের সপ্তম জয় এবং রানের হিসাবে সবচেয়ে বড় জয়। আগের বড় জয়টি ছিল ওমানের বিপক্ষে, ৫৪ রানে।
বাংলাদেশ সুপার টুয়েলভের কোন গ্রুপে যাবে সেটা নির্ভর করবে স্কটল্যান্ড-ওমান ম্যাচের ফলের ওপর। স্কটিশরা জিতলে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে সুপার টুয়েলভে গ্রুপ -২ এ যোগ দেবে। ওমান জিতলে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সুযোগ থাকবে বাংলাদেশের। নেট রান রেটে এগিয়ে থাকতে বাংলাদেশের চেয়ে বড় ব্যবধানে জিততে হবে তাদের।
পিএনজির বিপক্ষে টস জিতে আগে ব্যাটিং করতে নামে বাংলাদেশ। শুরুটা ভালো না হলেও ম্যাচ সেরা সাকিব, মাহমুদউল্লাহ ও সাইফউদ্দিনের ঝড়ো ইনিংসে ৭ উইকেটে ১৮১ রানের বড় সংগ্রহ গড়ে বাংলাদেশ। যা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ। জবাবে সাকিবসহ বাংলাদেশের বাকি বোলারদের তোপের মুখে মাত্র ৯৭ রানেই শেষ হয় পিএনজির ইনিংস।
জয়ের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুতেই বিপাকে পড়ে পিএনজি। ওপেনার লেগা সিয়কাকে সাইফউদ্দিন ফিরিয়ে দিলে শুরু হয় দলটির আসা যাওয়ার মিছিল। সাকিব, তাসকিন, মেহেদী; সবাই মিলে চেপে ধরেন প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানদের। তাতে জয়ের অনেক দূরে থাকতেই শেষ হয় পিএনজির ইনিংস।
সাকিব একাই পিএনজির ইনিংস ধসিয়ে দেন। ৪ ওভারে মাত্র ৯ রান খরচায় ৪টি উইকেট নেন তিনি, যা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে তার সেরা বোলিং ফিগার। এই ৪ উইকেটে বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি পাকিস্তানের সাবেক লেগ স্পিনার শহীদ আফ্রিদিকে ছুঁয়ে ফেলেছেন সাকিব। দুজনের উইকেটই এখন ৩৯টি, আরেকটি উইকেটে রেকর্ডটি নিজের করে নেবেন বিশ্বের অন্যতম সেরা এই অলরাউন্ডার।
এক মুস্তাফিজুর রহমান ছাড়া বাংলাদেশের বাকি বোলাররা জাদুমাখা বোলিং করেছেন। মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন ৪ ওভারে ২১ রান খরচায় ২টি উইকেট নেন। তাসকিন আহমেদ ৩.৩ ওভারে মাত্র ১২ রানে ২টি উইকেট পান। শেখ মেহেদী হাসান ৪ ওভারে ২০ রানে নেন একটি উইকেট। মুস্তাফিজ ৪ ওভারে ৩৪ রান খরচায় কোনো উইকেট পাননি।
পিএনজির হয়ে কিপলিন ডোরিগা একাই যা রান করেছেন। ডানহাতি উইকেটরক্ষক এই ব্যাটসম্যান ৩৪ বলে ২টি করে চার ও ছক্কায় ৪৬ রানে অপরাজিত থাকেন। এ ছাড়া ১১ রান করেন চ্যাড সোপার। বাকি ব্যাটসম্যানদের কেউই দুই অঙ্কের রান করতে পারেননি, তারা উইকেটে গেছেন আর ফিরেছেন।
এর আগে ব্যাটিং করা বাংলাদেশ এবারের আসর ছাপিয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ইতিহাসের নিজেদের সেরা সংগ্রহ তোলে। অপেক্ষাকৃত দুর্বল দলের বোলিং দুর্বলতা কাজে লাগিয়ে দাপুটে ব্যাটিং করে বাংলাদেশ। যদিও টি-টোয়েন্টি মেজাজে ব্যাটিং করে রান তোলেন কেবল কয়েকজন। এদের মধ্যে সেরা অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।
অভিজ্ঞ এই ব্যাটসম্যান মাত্র ২৭ বলে ৩টি চার ও ৩টি ছক্কায় হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন। তার প্রথম ও দলের ইতিহাসের দ্রুততম এই হাফ সেঞ্চুরিতে বড় সংগ্রহের পথে এগিয়ে যায় দল।
টস জিতে আগে ব্যাটিং করতে নামা বাংলাদেশ দ্বিতীয় বলেই নাঈম শেখকে হারায়। দলকে এগিয়ে নিতে থাকেন লিটন দাস ও সাকিব আল হাসান। লিটন ২৩ বলে ২৯ রান করে থামলেও সাকিব আরও কিছুক্ষণ ব্যাটিং করেন। বিশ্বের অন্যতম সেরা এই অলরাউন্ডার ৩৭ বলে ৩টি ছক্কায় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৪৬ রান করেন।
এরপর মাহমুদউল্লাহ হাফ সেঞ্চুরি করে আউট হলে আফিফ হোসেন ধ্রুব ২১ রান করেন। শেষ দিকে ঝড় তোলেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান মাত্র ৬ বলে একটি চার ও ২টি ছক্কায় অপরাজিত ১৯ রান করেন। বাকিরা কেউ দুই অঙ্কের রানও করতে পারেননি। নাঈম ০, মুশফিকুর রহিম ৫, নুরুল হাসান সোহান ০ ও শেখ মেহেদী অপরাজিত ২ রান করেন।
পাপুয়া নিউ গিনির হয়ে ২টি করে উইকেট নেন অধিনায়ক আসাদ ভালা, ড্যামিয়ের রাভু ও কাবুয়া মোরিয়া। একটি উইকেট পান সাইমন আতাই।