জাদরান ঝড়ে বাংলাদেশের হার
১২৭ রানের পূঁজি নিয়ে কে-ই বা স্বস্তিতে থাকে, বাংলাদেশও ছিল না। তবু বল হাতে দারুণ শুরুর পর আফগানিস্তানের রান চাকায় লাগাম টেনে জয়ের স্বপ্নই বুনছিল তারা। একটা সময়ে গিয়ে রান বলের ব্যবধান এমন ছিল যে, বাংলাদেশের পক্ষেই জয়ের পাল্লা ভারী ছিল। কিন্তু হঠাৎ-ই সব পাল্টে গেল নাজিবুল্লাহ জাদরানের ব্যাটিং ঝড়ে। খুনে ব্যাটিংয়ে বল-রানের ব্যবধান নিমেষেই ঘুচিয়ে আফগানিস্তানকে দারুণ এক জয় এনে দিলেন বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান। টানা দুই জয়ে সবার আগে এশিয়া কাপের সুপার ফোরে উঠলো মোহাম্মদ নবীর দল।
মঙ্গলবার শারজাহ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে এশিয়া কাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ৭ উইকেটের বড় ব্যবধানে হেরে গেছে বাংলাদেশ। টি-টোয়েন্টিতে আফগানদের বিপক্ষে এটা বাংলাদেশের ষষ্ঠ হার। দলটির বিপক্ষে এই ফরম্যাটে বাংলাদেশের জয় মাত্র ২ ম্যাচে। এই ম্যাচ হারে এশিয়া কাপের সুপার ফোরে ওঠার পথ কঠিন হয়ে পড়লো সাকিব আল হাসানের দলের। পরের ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জিতলেই কেবল মিলবে সুপার ফোরের টিকেট।
টস জিতে আগে ব্যাটিং করতে নেমে ৭ উইকেটে ১২৭ রান তোলে বাংলাদেশ। আফগানিস্তানের দুই স্পিনার মুজিব-উর-রহমান ও রশিদ খানের জাদুকরী বোলিংয়ের সামনে মুখ থুবড়ে পড়া বাংলাদেশের হয়ে কেবল মাহমুদউল্লাহ ও মোসাদ্দেক প্রত্যাশা মতো ব্যাটিং করতে পেরেছেন। শেষ দিকে কিছুটা অবদান রাখেন শেখ মেহেদি হাসান। তাকে নিয়েই ইনিংসের সবচেয়ে বড় জুটি গড়েন দারুণ ব্যাটিং করা মোসাদ্দেক।
জবাবে শুরুটা ভালো না হলেও খেই হারায়নি আফগানরা। ধীর গতিতে ব্যাট চালালেও ঠিক পথেই এগিয়ে যেতে থাকে তারা। একটা সময়ে গিয়ে বল-রানের ব্যবধান বাড়লেও তা আর সমস্যা হয়নি। মাত্র ১৭ বলে ৪৩ রানের দানবীয় ইনিংস খেলে দলকে অসাধারণ এক জয় এনে দেন ম্যাচসেরা নাজিবুল্লাহ। তাকে যোগ্য সঙ্গ দেওয়া ইব্রাহিম জাদরানও খেলেন দারুণ এক ইনিংস। এই দুজনের ৩৩ বলে ৬৮ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে ৩ উইকেট হারিয়ে ৯ বল হাতে রেখেই জুয় তুলে নেয় আফগানরা।
ছোট লক্ষ্য হলেও জয়ের লক্ষ্যে ভালো শুরু করতে পারেনি আফগানিস্তান। ইনিংসে পঞ্চম ওভারেই আফগান ওপেনার রহমানউল্লাহ গুরবাজকে ফিরিয়ে দেন সাকিব। এগিয়ে খেলতে গিয়ে স্টাম্পিং হন ১৮ বলে ১১ রান করা ডানহাতি এই ওপেনার। যদিও আগেই ফিরতে পারতেন তিনি। ইনিংসের তৃতীয় ওভারে সাকিবের বলে ক্যাচ তুললেও তা নিতে পারেননি মাহমুদউল্লাহ।
শুরুতে উইকেট তুলে নেওয়ার পাশাপাশি রান আফগানদের রান চাকাতেও লাগাম দিয়ে রাখে বাংলাদেশ। অধিনায়ক সাকিবের সঙ্গে দারুণ বোলিং করতে থাকেন মোসাদ্দেক, তাসকিন আহমেদরা। রান আটকে রাখা গেলেও উইকেটের দেখা মিলছিলো না। দশম ওভারে গিয়ে ব্রেক থ্রু এনে আগে দেন ব্যাট হাতে দলকে পথ দেখানো মোসাদ্দেক।
২৬ বলে ৩টি চারে ২৩ রান করা আরেক ওপেনার হজরতউল্লাহ জাজাইকে ফিরিয়ে দেন ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান। অধিনায়ক মোহাম্মদ নবীও টিকতে পারেননি। ১৩তম ওভারের শেষ বলে মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের শিকারে পরিণত হন ৯ বলে ৮ রান করা অভিজ্ঞ এই ওপেনার। ১৩ ওভারে ৩ উইকেটে আফগানিস্তানের সংগ্রহ তখন ৬২ রান।
৪২ বলে জয়ের জন্য তাদের তখন দরকার ৬৬ রান। দারুণ বোলিংয়ে ব্যবধান আরও বাড়িয়ে নিচ্ছিল বাংলাদেশ। কিন্তু এখান থেকে ইব্রাহিমের সঙ্গে যোগ দিয়ে দ্রুতই উইকেটে নিজেকে মানিয়ে নেন নাজিবুল্লাহ। এরপর ইব্রাহিমকে একপাশে রেখে ধংশযজ্ঞ চালান নাজিবুল্লাহ। বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান ১৭ বলে একটি চার ও ৬টি ছক্কায় ৪৩ রানের হার না মানা ইনিংস খেলেন। ইব্রাহিম ৪১ বলে ৪টি চারে ৪২ রানে অপরাজিত থাকেন।
অবিশ্বাস্য বোলিং করা সাকিব ৪ ওভারে মাত্র ১৩ রানে একটি উইকেট নেন। মোসাদ্দেকও দারুণ বোলিং করেন, ২.৩ ওভারে ১২ রানে এক উইকেট নেন তিনি। হতাশ করেছেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন ও মুস্তাফিজুর রহমান। ১৮তম ওভারে ২২ রান দেন সাইফউদ্দিন, দুই ওভারে তার খরচা ২৭ রান। এর আগের ওভারেই মুস্তাফিজ খরচা করেন ১৭ রান, তিন ওভারে তিনি ৩০ রান দেন। তাসকিন ৩ ওভারে ২২ ও মেখ মেহেদি ৪ ওভারে ২৬ রান দিয়ে উইকেটশূন্য থাকেন।
এর আগে ব্যাটিং করা বাংলাদেশ দ্বিতীয় ওভারেই ওপেনার নাঈম শেখকে হারায়। দারুণ এক ক্যারম বলে বাঁহাতি এই ওপেনারের স্টাম্প উপড়ে নেন মুজিব। ৮ বলে ৬ রান করে থামেন নাঈম। নিজের দ্বিতীয় ওভারে এনামুল হক বিজয়কে সাজঘর দেখিয়ে দেন আফগান অফ স্পিনার। এলবিডব্লিউ হয়ে ফেরার আগে ১৪ বলে ৫ রান করেন বিজয়।
উইকেট নেওয়ার ধারাবাহিকতা তৃতীয় ওভারেও ধরে রাখেন মুজিব। এই ওভারে তার শিকার বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। ক্যারম বলেই নিজের তৃতীয় উইকেট ঝুলিতে পোড়েন আফগান অফ স্পিনার। এই উইকেট দিয়ে দ্বিতীয় কনিষ্ঠ বোলার হিসেবে টি-টোয়েন্টিতে ২০০ উইকেট পূর্ণ হয় তার। ৯ বলে ২টি চারে ১১ রান করেন সাকিব।
দলের দুঃসময়ে হাল ধরতে পারেননি মুশফিকুর রহিমও। অভিজ্ঞ এই ব্যাটসম্যানের উইকেট তুলে নেন রশিদ খান। তারকা এই লেগ স্পিনারের বলে পরাস্থ হন মুশফিক, জোড়ালো আবেদন করে আফগানিস্তান। আম্পায়ার আউট না দিলে রিভিউ নিয়ে মেলে সফলতা। ৪ বলে ১ রান করে ফেরেন মুশফিক।
এরপর জুটি গড়েন আফিফ হোসেন ধ্রুব ও মাহমুদউল্লাহ। যদিও তাদের জুটি বড় হতে দেননি রশিদ খান। ১৫ বলে ১৫ রান করা আফিফকে ফিরিয়ে দেন তারকা এই লেগ স্পিনার। মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে যোগ দেন মোসাদ্দেক। শুরু থেকেই টি-টোয়েন্টি মেজাজে খেলতে থাকেন দলকে খাদের কিনার থেকে টেনে তোলা ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান।
ষষ্ঠ উইকেটে ৩৬ রান যোগ করেন মাহমুদউল্লাহ ও মোসাদ্দেক। রশিদ খানের বলে তুলে মারতে গিয়ে আউট হন সাবলীল ব্যাটিং করতে থাকা মাহমুদউল্লাহ। অভিজ্ঞ এই ব্যাটসম্যান দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৫ রান করেন। এরপর মেহেদিকে নিয়ে লড়াই শুরু করেন এক পাশ আগলে রান তুলে যেতে থাকা মোসাদ্দেক। এই জুটি থেকে সর্বোচ্চ ৩৮ রান পায় বাংলাদেশ।
শেষ বলে আউট হন ১২ বলে ২টি চারে ১৪ রান করা মেহেদী। মোসাদ্দেক ৩১ বলে ৪টি চার ও একটি ছক্কায় ৪৮ রানের দারুণ ইনিংস খেলেও অপরাজিত থাকেন। মুজিব ৪ ওভারে মাত্র ১৬ রানে ৩টি উইকেট নেন। ৪ ওভারে ২২ রান খরচায় রশিদের শিকারও ৩ উইকেট। বাংলাদেশের যাওয়া ৭ উইকেটের ৬টিই তাদের ঝুলিতে। একটি উইকেট রান আউট থেকে পায় আফগানরা।