ভারত-পাকিস্তান ধ্রুপদী লড়াইয়ে এবার বাবরদের জয়
আগের ম্যাচও ছিল উত্তেজনায় ঠাসা, ম্যাচ গড়িয়েছিল শেষ ওভারে। হার্দিক পান্ডিয়ার বীরত্বে পাকিস্তানকে হারিয়েছিল ভারত। এশিয়া কাপে এই দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর মধ্যকার দ্বিতীয় ম্যাচেও হলো রুদ্ধশ্বাস লড়াই। এবারও ম্যাচ গড়ালো শেষ ওভারে। তবে এবার শেষ ওভারের রোমাঞ্চ জিতে ভারতকে হারিয়ে দিলো পাকিস্তান।
রোববার দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে এশিয়া কাপে সুপার ফোরে নিজেদের প্রথম ম্যাচে ভারতকে ৫ উইকেটে হারিয়েছে বাবর আজমের দল। এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ের এই টুর্নামেন্টে প্রথম ম্যাচে পাকিস্তানকে ৫ উইকেটেই হারায় ভারত। সাত দিন পরই বদলাটা নিয়ে নিলেন বাবর-রিজওয়ানরা।
টস হেরে আগে ব্যাটিং করতে নামা ভারতের শুরুটা হয় দুর্বার। অধিনায়ক রোহিত শর্মা ও লোকেশ রাহুলের দারুণ শুরু পর প্রায় শেষ পর্যন্ত ব্যাটিং করেন দারুণ এক ইনিংস খেলা বিরাট কোহলি। ছোট ছোট ইনিংসে অবদান রাখেন সূর্যকুমার যাদব, ঋষভ পন্ত, দীপক হুদারা, ৭ উইকেটে ১৮১ রানের বড় সংগ্রহ পায় ভারত।
জবাবে ভালো শুরু না পেলেও মোহাম্মদ রিজওয়ানের ব্যাটে জয়ের পথেই থাকে পাকিস্তান। রিজওয়ানের সঙ্গে ইনিংসের সবচেয়ে বড় জুটি গড়ার পথে খুনে এক ইনিংস খেলেন অলরাউন্ডার মোহাম্মদ নওয়াজ। শেষ দিকে রান-বলের ব্যবধান বেশি থাকলেও খুশদিল শাহ ও আসিফ আলীর দারুণ ব্যাটিংয়ে ১ বল বাকি থাকতে ৫ উইকেটের জয় নিশ্চিত হয় পাকিস্তানের। ভারতের বিপক্ষে এটাই পাকিস্তানের সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জয়।
জয়ের লক্ষ্যে ব্যাটিং করতে নেমে ভালো শুরুর ইঙ্গিত দেন মোহাম্মদ রিজওয়ান ও অধিনায়ক বাবর আজম। আগের দুই ম্যাচে রান না পাওয়া বাবর ছন্দময় ব্যাটিং করছিলেন। কিন্তু তাকে থামিয়ে দেন ভারতের তরুণ লেগ স্পিনার রবি বিষ্ণয়। ১০ বলে ২টি চারে ১৪ রান করে থামেন পাকিস্তান অধিনায়ক।
দ্বিতীয় উইকেটে ফকর জামানের সঙ্গে ৪১ রানের জুটি গড়ে নিমেষেই উইকেট হারানোর চাপ কাটিয়ে তোলেন মুড়ি-মুড়কির মতো করে রান করে আসা রিজওয়ান। ১৮ বলে ১৫ রান করে আউট হন ফকর, ৮.৪ ওভারে পাকিস্তানের রান তখন ৬৩। এখান থেকে শুরু হয় রিজওয়ান ও মোহাম্মদ নওয়াজ।
দারুণ ব্যাটি ৪১ বলে ৭৩ রানের জুটি গড়ে তোলেন এ দুজন। এ সময় ভারতের বোলারদের ওপর দিয়ে ঝড় বইয়ে দেন নওয়াজ। বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান ২০ বলে ৬টি চার ও ২টি ছক্কায় ৪০ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলেন। কিছুক্ষণ পর পাকিস্তানের বিপদ বাড়ে। শুরু থেকেই দলকে পথ দেখিয়ে আনা রিজওয়ানকে হারায় তারা। হার্দিক পান্ডিয়ার বলে আউট হওয়া ডানহাতি এই ওপেনার ৫১ বলে ৬টি চার ও ২টি ছক্কায় ৭১ রানের অসাধারণ ইনিংস খেলেন।
দলকে জেতানোর গুরুদায়িত্ব ওঠে খুশদিল শাহ ও আসিফ আলীর কাঁধে। যা ভালোভাবেই পালন করেন এ দুজন। স্নায়ুর লড়াই জিতে ভুবনেশ্বর কুমারের করা ১৯তম ওভার থেকে ১৯ রান তোলেন খুশদিল ও আসিফ। যদি আসিফ শেষ করতে পারেননি। ৮ বলে ২টি চার ও একটি ছক্কায় ১৬ রান করে আউট হন তিনি। খুশদিলের সঙ্গে যোগ দিয়ে শেষ করেন শেষ ওভারের পঞ্চম বলে ২ রান নিয়ে দলকে জয় এনে দেওয়া ইফতিখার আহমেদ। খুশদিল ১১ বলে একটি চারে ১৪ রানে অপরাজিত থাকেন। ভারতের ভুবনেশ্বর, আর্শদীপ, বিষ্ণয়, হার্দিক ও যুজবেন্দ্র একটি করে উইকেট পান।
এর আগে ব্যাটিং করতে নামা ভারতের হয়ে উড়ন্ত সূচনা করেন রোহিত ও রাহুল। ৫ ওভারেই ৫৪ রানের জুটি গড়েন তারা। দারুণ শুরুর স্বস্তি অবশ্য বেশিক্ষণ থাকেনি ভারত শিবিরে। রোহিতকে ফিরিয়ে এই জুটি ভাঙেন পাকিস্তানের লেগ স্পিনার শাদাব খান। এর আগে ১৬ বলে ৩টি চার ও ২টি ছক্কায় ২৮ রান করেন ভারতের অধিনায়ক।
কিছুক্ষণ পর বিদায় নেন রাহুলও। ২০ বলে একটি চার ও ২টি ছক্কায় ২৮ রান করা ভারতীয় এই ওপেনারকেও সাজঘর দেখিয়ে দেন শাদাব। কোহলি এক পাশে থাকলেও দ্রুত দুই উইকেট পতনে কিছুটা চাপে পড়ে ভারত। কোহলি সূর্যকুমারের ব্যাটে চাপ দূর হয় ভারতের। তবে বড় জুটি গড়তে পারেননি এ দুজন। ২১ বলে ২৯ রানের জুটি গড়েন তারা।
১০ বলে ১৩ রান করে আউট হন সূর্যকুমার। এরপর ঋষভ পন্তও বেশি সময় টিকতে পারেননি। ১২ বলে ১৪ রান করে আউট হন তিনি। অন্য প্রান্তে ভাঙনের সুর বেজে থাকলেও অবশ্য সাবলীল বাটিং করে যেতে থাকেন ছন্দে ফেরার ইঙ্গিত দেওয়া কোহলি। দারুণ ব্যাটিং টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের ৩২তম হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন তারকা এই ব্যাটসম্যান।
দুই বল বাকি থাকতে আউট হন ৪৪ বলে ৪টি চার ও একটি ছক্কায় ৬০ রান করা কোহলি। দীপক হুদার ব্যাট থেকে আসে ১৪ বলে ১৬ রান। ৮ রানে অপরাজিত থাকেন রবি বিষ্ণয়। পাকিস্তানের শাদাব খান ২টি উইকেট নেন। একটি করে উইকেট পান নাসিম শাহ, মোহাম্মদ হাসনাইন, হারিস রউফ ও মোহাম্মদ নওয়াজ।