বিশ্বকাপে এশিয়ার দলগুলোর ইতিহাস ও সাফল্য
চার বছর পর আসে 'দ্য গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ।' ফুটবলের এই মহাযজ্ঞ এলে তাতে বুঁদ হয়ে থাকে গোটা দুনিয়া। মাসব্যাপী চলে ফুটবল উন্মাদনা। এই উন্মাদনার বড় অংশ এশিয়া অঞ্চলও। বিশ্বকাপের প্রায় প্রতিটি আসরেই এশিয়া থেকে বেশ কয়েকটি দেশ অংশ নেয়। বাছাই পর্ব পেরিয়ে এবারের আসরে জায়গা করে নেয় জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, ইরান ও সৌদী আরব। আয়োজক হিসেবে সুযোগ পায় কাতার।
প্রতি আসরেই থাকে এশিয়ার প্রতিনিধি। কিন্তু তাদের সাফল্যের প্রথটা কেমন? এমন প্রশ্নের উত্তরে মেলে না ইতিবাচক কিছু। ফুটবল বিশ্বকাপের ৯২ বছরের দীর্ঘ ইতিহাসে শাসন করে গেছে কেবল ইউরোপ ও লাতিন আমেরিকা অঞ্চলের দেশগুলো। সবগুলো আসরেই সেরার মুকুট উঠেছে এই দুই অঞ্চলের কোনো দলের মাথায়। অঘটন বাদ দিলে ফুটবল বিশ্বকাপে এশিয়ার বলার মতো বিশেষ কিছু নেই।
এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ সাফল্য দক্ষিণ কোরিয়ার। ঘরের মাঠের সেই আসরে সেবার সেমি-ফাইনাল খেলে তারা। ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে জার্মানির বিপক্ষে ১-০ গোলে হেরে যায় দেশটি। এশিয়ার দলগুলোর মধ্যে এটাই সর্বোচ্চ সাফল্য, কোরিয়া ছাড়া এশিয়ার আর কোনো দল বিশ্বকাপে দ্বিতীয় রাউন্ড বা শেষ ষোলোর বাধা ডিঙাতে পারেনি। এর বাইরে ২০১৮ সালে জার্মানিকে কোরিয়ার হারানোটা ছিল এশিয়ার দলগুলোর মধ্যে অন্যতম প্রাপ্তি।
তবে এবার ভিন্ন গল্প লিখেছে এশিয়ার কয়েকটি দল। যার নেতৃত্বে আছে জাপান। সূর্যোদয়ের দেশটি 'ই' গ্রুপ থেকে অবিশ্বাস্য পারফরম্যান্স করেছে। জার্মানি ও স্পেনের মতো দলের সঙ্গে পড়েও গ্রুপ সেরা হয়ে শেষ ষোলোর টিকেট কেটেছে ব্লু সামুরাইরা। এতোটুকুতে অবশ্য জাপানের এবারের পারফরম্যান্স প্রকাশ পায় না। দ্বিতীয় রাউন্ডে ওঠার পথে জার্মানি ও স্পেন; দুই দলকেই হারিয়েছে তারা।
উত্তানের গল্প লিখেছে সৌদী আরবও। নিজেদের প্রথম ম্যাচেই ফুটবল দুনিয়াকে স্তব্ধ করে লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনাকে হারিয়ে দেয় তারা। পরের দুই ম্যাচে হারলেও ফুটবলে তাদের উন্নতির ছাপ স্পষ্ট। ইরানও পেয়েছে সাফল্য। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বিশাল হারে বিশ্বকাপ শুরু হলেও পরের ম্যাচে গ্যারেথ বেলের দল ওয়েলসকে হারায় তারা। যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষেও বুক চিতিয়ে লড়ে দেশটি, যদিও হার মানে ১-০ গোলে। দক্ষিণ কোরিয়া একটি করে ড্র ও হার নিয়ে এখনও শেষ ষোলোর লড়াইয়ে টিকে আছে। এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে কাতারই কেবল কিছু করতে পারেনি। তিন ম্যাচেই হার মানে স্বাগতিকরা।
জাপান
এবারের আসরে রীতিমতো শাসন করা জাপান এশিয়া থেকে ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে দুই নম্বরে। ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে ২৪ নম্বরে থাকা দেশটি ১৯৯৮ সালে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে। এর আগে চেষ্টা করেও কখনও সুযোগ করে নিতে পারেনি তারা। তবে এর মধ্যে ১৯৩৮ বিশ্বকাপে নিজেরাই নাম প্রত্যাহার করে নেয় তারা। এ ছাড়া ১৯৫০ বিশ্বকাপে ফিফা জাপানকে নিষিদ্ধ করে।
১৯৯৮ বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো বিশ্ব আসরে অংশ নেওয়া জাপান পরের সবকটি আসরে খেলেছে। এই ছয় আসরের মধ্যে তিনবারই শেষ ষোলোতে উঠেছে তারা। সেটার ধারাবাহিকতায় এবারও দ্বিতীয় রাউন্ডের টিকেট কেটেছে এশিয়ার দেশটি। আর এবার তাদের দাপটে বিস্মিত গোটা ফুটবল দুনিয়া।
দক্ষিণ কোরিয়া
ফিফা র্যাঙ্কিং ২৮ নম্বরে থাকা দক্ষিণ কোরিয়ার বিশ্বকাপ ইতিহাস সবচেয়ে পুরনো। এশিয়ার এই দেশটি প্রথমবারের মতো ১৯৫৪ বিশ্বকাপে অংশ নেয়। প্রথম আসরেই তারা শেষ ষোলোতে ওঠে। এরপর সাতটি আসরে বাছাই পর্ব পেরোতে পারেনি কোরিয়া। ১৯৮৬ বিশ্বকাপ দিয়ে ফেরা দক্ষিণ কোরিয়ার এরপর প্রতিটি আসরেই অংশ নিয়েছে। দেশটির সর্বোচ্চ সাফল্য ২০০২ বিশ্বকাপে ঘরের মাঠে সেমি-ফাইনাল খেলা। এ ছাড়া একবার প্রথম রাউন্ড পেরোয় তারা। ২০১৮ বিশ্বকাপে জার্মানিকে হারিয়ে বিদায় করে দেয় কোরিয়া।
ইরান
এশিয়ার মধ্যে ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে সবচেয়ে এগিয়ে ইরান। মধ্যপ্রাচ্যের দেশটি ১৯৭৮ বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো অংশ নেয়। প্রথম তিনটি আসরে ফিফার সদস্য দেশ ছিল না তারা। প্রথম বিশ্বকাপ খেলার পর ২০ বছর অপেক্ষা করতে হয় তাদের। ১৯৯৮ বিশ্বকাপ দিয়ে ফেরা ইরান পরের ছয় আসরের চারটিতে খেলে। কিন্তু কোনোবারই প্রথম রাউন্ড পার হতে পারেনি ইরান। এবার আশা জাগিয়েও বাদ পড়ে দলটি।
সৌদি আরব
মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশটির ফিফা র্যাঙ্কিং ৫১। এবারের আসরে অবিশ্বাস্য ফুটবলে আর্জেন্টিনাকে হারিয়ে চমক উপহার দেওয়া দেশটি ১৯৯৪ সালে প্রথম বিশ্বকাপ খেলে। সেবারই তারা পেরিয়ে যায় প্রথম রাউন্ড। এবার মিলিয়ে বিশ্বকাপে ছয়টি আসরে অংশ নিয়েছে দেশটি। তাদের সর্বোচ্চ সাফল্য ওই প্রথম বিশ্বকাপই।
কাতার
আয়োজক হিসেবে এবারের আসরে খেলার সুযোগ পায় কাতার। ফিফা র্যাঙ্কিংয়ের ৫০ নম্বরে থাকা দেশটি এর আগে কখনই বিশ্বকাপে জায়গা করে নিতে পারেনি। প্রথম আসরটিও মনে রাখার মতো হয়নি তাদের। তিন ম্যাচ হারা কাতার সবার আগে ছিটকে যায় ঘরের মাঠের বিশ্বকাপ থেকে। সাফল্যের বদলে অনেক অস্বস্তির রেকর্ডে নাম উঠেছে কাতারের।
বিশ্বকাপ ইতিহাসের প্রথম আয়োজক দেশ হিসেবে নিজেদের প্রথম ম্যাচট হারে তারা। প্রথম আয়োজক হিসেবে দ্রুততম সময়ে বাদ পড়ে। দক্ষিণ আফ্রিকার পর দ্বিতীয় দল হিসেবে শেষ ষোলোয় উঠতে ব্যর্থ হয় কাতার। এ ছাড়া বিশ্বকাপের দীর্ঘ ইতিহাসে প্রথম দল হিসেবে গ্রুপ পর্বে সব ম্যাচ হারে তারা।