অ্যানফিল্ডে লিভারপুলের বুলডোজারে পিষ্ট ইউনাইটেড
আজকের দিনটা কীভাবে ভুলবেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ভক্তরা? লিভারপুল সমর্থকরা আদৌ কী ভুলতে দেবেন? যা ঘটল, তার জন্য প্রস্তুত ছিলো কী দুই দলের কোনো খেলোয়াড়-কোচ কিংবা সমর্থক? আপনি না দেখে থাকলে ভাষায় আটকে কী ঘটল তার বর্ণনা দেওয়া কষ্টসাধ্য কাজ।
প্রিমিয়ার লিগ তো বটেই, নিজেদের ফুটবল ইতিহাসেই সবচেয়ে বড় হারের রেকর্ড সঙ্গী হয়েছে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের। তাও সেটি আবার নিজেদের সবচেয়ে বড় শত্রু লিভারপুলের বিপক্ষে।
এই মৌসুমের গতিপথ যেভাবে চলছিলো তাতে বরং লিভারপুলই শঙ্কায় ছিলো ৭ বছর পর নিজেদের মাঠে ইউনাইটডের কাছে হেরে যাওয়ার। কিন্তু ফুটবল বিধাতা যে মুচকি হেসেছেন তাতে, ম্যাচের ফলাফল? লিভারপুলের ৭ গোলের বিপরীতে সদ্যই ইংলিশ লিগ কাপ জিতে ছয় বছরের ট্রফি খরা ঘোচানো ইউনাইটেডের বড়সড় একটি গোল্লা।
অ্যানফিল্ডে জুর্গেন ক্লপের দল লিখল এক নতুন ইতিহাস। প্রিমিয়ার লিগ যুগে এটি লিভারপুলের সবচেয়ে বড় জয়গুলোর একটি। যদিও ৭-০ গোলের জয় আরো আছে অলরেডদের, কিন্তু সেগুলোর কোনোটি তো আর ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের বিপক্ষে নয়!
গত মৌসুমেই ইউনাইটেডের মাঠে ৫-০ আর নিজেদের মাঠে ৪-০ গোলে জিতেছে লিভারপুল। তবে এবার ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে এরিক ট্যান হাগের দল ২-১ গোলে জেতার পর মনে হচ্ছিল, হাওয়া বদলাচ্ছে। অ্যানফিল্ডে লিভারপুল যা দেখাল তাতে ইউনাইটেডের ওই জয়কে 'ফ্লুক' বলে মনে হওয়াটাই স্বাভাবিক।
এই মৌসুমের যা চিত্র তাতেও এগিয়ে ছিলো ট্যান হাগের দল। প্রিমিয়ার লিগের তৃতীয় স্থানে আছে তারা, কেবলই জিতেছে ইংলিশ লিগ কাপের শিরোপা, বার্সেলোনাকে ইউরোপা লিগে হারিয়ে উঠেছে শেষ ষোলোয়। অপরদিকে লিগের ৬ নম্বরে ধুঁকছিল ক্লপের দল। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শেষ ষোলোর প্রথম লেগে নিজেদের মাঠে রিয়াল মাদ্রিদের কাছে বিধ্বস্ত হয়েছে ৫-২ গোলে, বাদ পড়েছে লিগ কাপ আর এফএ কাপ থেকেও।
সবমিলিয়ে সুসময় চলছিলো রেড ডেভিলদের আর দুঃসময়ের গ্যাঁড়াকলে বন্দি ছিলো অলরেডরা। সব যেন মিলিয়ে গেল এক ম্যাচেই, ৯০ মিনিটের ব্যবধানে।
ম্যাচের প্রথম ২০ মিনিট দেখেই মনে হচ্ছিল এ যেন এক অন্য লিভারপুল। যেই লিভারপুলকে দেখে অভ্যস্ত সবাই। যদিও গোল আসেনি তখনও, প্রথমার্ধ শেষ হবার মিনিট তিনেক আগে কোডি গাকপোর দুর্দান্ত ফিনিশ এগিয়ে দেয় ক্লপের দলকে। ১-০ গোলে এগিয়ে থেকে বিরতিতে যায় লিভারপুল।
তখনও বোঝা যায়নি কী আসতে যাচ্ছে ইউনাইটেডের ভাগ্যে। দ্বিতীয়ার্ধে রীতিমতো ছেলেখেলা করলেন সালাহ-নুনেজরা। শুরুটা উরুগুইয়ান নুনেজের মাধ্যমে, এলিয়টের ক্রস থেকে তার হেডে হলো ২-০।
এরপর গাকপোর আরেকটি অসাধারণ ফিনিশে ৩-০। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের সঙ্গে খেলা আর সালাহ গোল করবেন না, তা কী হয়! স্কোরশিটে নাম লিখালেন মিশরের রাজাও। এরপর আবার নুনেজ হয়ে সালাহ, শেষে রবার্তো ফিরমিনো, মিলে হলো ৭-০।
একে অপরের মুখপানে চেয়ে থাকা ছাড়া যেন কিছুই করার ছিলো না ইউনাইটেড খেলোয়াড়দের। এমন দিনে আর কী-ই বা করার থাকে! এই হারে মানসিকভাবে যে পর্যদুস্ত হলো রেড ডেভিলরা, সেটি থেকে বেরিয়ে আসাই দায়। আর যে মানসিক শক্তি পেল লিভারপুল, প্রিমিয়ার লিগের সেরা চারে থাকার সম্ভাবনা উজ্জ্বল হলো আরো।