ব্যাট হাতে সেই ব্যর্থতার গল্পই লিখলো বাংলাদেশ
ক্রিকেটকে বলা হয় গৌরবময় অনিশ্চয়তার খেলা। এই খেলায় ক্ষণে ক্ষণে রং বদলায়। খাদের কিনার থেকে উঠে আসা দল লেখে বিজয়ের গল্প, ভালো অবস্থায় থেকেও নিকষ কালো অন্ধকারে পতিত হয় কোনো কোনো দল। বাংলাদেশই কেবল ব্যতিক্রম। তাদের ধারাপাতে নেই ঘুরে দাঁড়ানোর সমীকরণ, তাই নেই ভাগ্য বদলের গল্পও। বিশ্বকাপে ব্যাটিং ব্যর্থতার বৃত্তে বন্দী হয়ে যাওয়া দলটি পাকিস্তানের বিপক্ষেও ব্যাটিং করলো খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে, মিললো অল্প পুঁজি।
মঙ্গলবার কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে টস জিতে আগে ব্যাটিং করা বাংলাদেশ ৪৫.১ ওভারে ২০৪ রানেই অলআউট হয়ে গেছে। বাংলাদেশের চারজন ব্যাটসম্যান দুই অঙ্কের রান করেছেন, বাকিরা যোগ দনে আসা-যাওয়ার মিছিলে। চরম ব্যর্থতার অধ্যায়েও হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন বিশ্বকাপে ব্যাট হাতে বাংলাদেশের একমাত্র ধারাবাহিক ফারফর্মার মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। লিটন কুমার দাস ও অধিনায়ক সাকিব আল হাসান চল্লিশোর্ধ্ব ইনিংস খেলেন।
টানা পাঁচ ম্যাচ হারে কোণঠাসা হয়ে পড়া বাংলাদেশের শুরুটা হয় দুঃস্বপ্নের মতো। প্রথম ওভারেই ফিরে যান তানজিদ হাসান তামিম। তরুণ বাঁহাতি এই ওপেনারকে ফিরিয়ে ওয়ানডেতে ১০০ উইকেট পূর্ণ করেন পাকিস্তানের তারকা পেসার শাহিন শাহ আফ্রিদি, যা ওয়ানডেতে পেসারদের মধ্যে দ্রুততম। রানের খাতা খোলার আগেই এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়ে সাজঘরে ফেরেন তানজিদ। বিশ্বকাপে সাত ম্যাচের মধ্যে তিন ম্যাচে দুই অঙ্কের রান করতে ব্যর্থ হলেন তিনি।
শুরুতেই বাংলাদেশের ইনিংসে আঘাত হানা শাহিন আফ্রিদি নিজের পরের ওভারেও তোপ দাগেন, এবার তার শিকার নাজমুল হোসেন শান্ত। ফ্লিক করতে গিয়ে উসামা মীরের হাতে ধরা পড়েন ৩ বলে ৪ রান করা বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান। প্রথম ম্যাচে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ৫৯ রান করার পর থেকে নিজের ছায়া হয়ে আছেন শান্ত। পরের ছয় ম্যাচে একবারও দুই অঙ্কের রান করতে পারেননি তিনি, রানের খাতা খোলার আগেই আউট হয়েছেন দুবার।
অনেক সমালোচনার পর এই ম্যাচে মুশফিকুর রহিমের ব্যাটিং অর্ডারে পরিবর্তন আনা, এগিয়ে তাকে চার নম্বরে নামানো হয়। অভিজ্ঞ এই ব্যাটসম্যান অবশ্য এদিন টিকতে পারেননি, হারিস রউফের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেওয়ার আগে ৮ বলে ৫ রান করেন তিনি। ২৩ রানেই তিন উইকেট হারানো দলের হাল ধরেন লিটন কুমার দাস ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। শুরুর চাপ কাটিয়ে সাবলীল ব্যাটিং-ই করছিলেন এ দুজন।
কিন্তু দলীয় সংগ্রহ ১০০ ছাড়িয়ে প্রতিপক্ষকে ক্যাচ অনুশীলন করিয়ে বিদায় নেন লিটন। এমন আউট যে সবার জন্যই হতাশার, লিটনের শারীরিক ভাষাই সেটা বলে দিচ্ছিল। আউট হওয়ার পর নিজেই যেন বিশ্ব করতে পারছিলেন না ডানহাতি এই ওপেনার। ২১তম ওভারে ইফতিখার আহমেদের করা পায়ের ওপরের ডেলিভারি ঘুরিয়ে খেলতে গিয়ে মিড উইকেটে আগা সালমানের হাতে ক্যাচ তুলে দেন লিটন। ৬৪ বলে ৬টি চারে ৪৫ রান করেন তিনি।
আউট হওয়ার আগে চতুর্থ উইকেটে মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে ৭৯ রানের জুটি গড়েন লিটন, যা এবারের বিশ্বকাপে যেকোনো উইকেটে বাংলাদেশের দ্বিতীয় সেরা জুটি। এরপর মাহমুদউল্লাহও বেশি সময় টিকতে পারেননি, তবে তিনি হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন। এটা তার বিশ্বকাপের তৃতীয় ও এবারের আসরের প্রথম হাফ সেঞ্চুরি। শাহিন আফ্রিদির বলে বোল্ড হওয়ার আগে ৭০ বলে ৬টি চার ও একটি ছক্কায় ইনিংস সেরা ৫৬ রান করেন মাহমুদউল্লাহ।
চাপের মাঝেও ভালো শুরু করেন তাওহিদ হৃদয়। তবে ছক্কা মারার পরের বলেই স্লিপে ক্যাচ দিয়ে আউট হন কয়েক ম্যাচ পর সুযোগ পাওয়া তরুণ এই ব্যাটসম্যান। ৩ বলে একটি ছক্কায় ৭ রান করেন হৃদয়। ১৪০ রানে ৬ উইকেট হারানো দলে কিছুটা হলেও স্বস্তি ফেরান সাকিব ও মেহেদী হাসান মিরাজ। সপ্তম উইকেটে ৪৫ রান যোগ করেন এ দুজন।
এদিন সাকিবকে রান তুলতে সংগ্রাম করতে দেখা যায়। ব্যক্তিগত ২৪ রান পর্যন্ত ধুঁকতে থাকেন তিনি। এরপর ছন্দ মিললেও বেশি পথ এগোনো হয়নি তার। ৬৪ বলে ৪টি চারে ৪৩ রান করেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। এরপর লড়াই করতে থাকা মিরাজকে ফিরিয়ে শাসন শুরু করা পাকিস্তান পেসার চোখের পলকেই বাংলাদেশের ইনিংস গুটিয়ে দেন। মিরাজ ৩০ বলে একটি করে চার ও ছক্কায় ২৫ রান করেন।
আগুনে বোলিংয়ে শুরুতেই বাংলাদেশকে দিক ভুলিয়ে দেওয়া পাকিস্তানের বাঁহাতি পেসার শাহিন আফ্রিদি ১০ ওভারে এক মেডেনসহ মাত্র ২৩ রান খরচায় ৩টি উইকেট নেন। বাংলাদেশের শেষের ৩ উইকেট নেওয়া ওয়াসিম ৮১.১ ওভারে ৩১ রান দেন। হারিস রউফ ২টি এবং ইফতিখার আহমেদ ও ইসামা মীর একটি করে উইকেট পান।