হেলস ঝড়ে সিলেটের রান পাহাড় টপকে রংপুরের রেকর্ড গড়া জয়
সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম আয়োতনে তুলনামূলক ছোট। সেই ছোট স্টেডিয়ামে বাউন্ডারি করা হলো আরও ছোট। বিশেষ করে এক পাশের স্ট্রেইটে বাউন্ডারি একেবারেই ছোট করা হয়েছে। এমন মাঠে আগে ব্যাটিং করে বিশাল সংগ্রহ গড়ে ঘরের মাঠের দল সিলেট স্ট্রইকার্স। কে জানতো অ্যালেক্স হেলসের ব্যাটিং ঝড়ের সামনে এই সংগ্রহও হয়ে উঠবে মামুলি! ইংল্যান্ডের এই ব্যাটসম্যানের সেঞ্চুরিতে সিলেটের রান পাহাড় টপকে রেকর্ড গড়া জয় তুলে নিয়েছে দুর্বার ছন্দে থাকা রংপুর রাইডার্স।
সোমবার বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) সিলেট পর্বের প্রথম ম্যাচে সিলেট স্ট্রাইকার্সকে ৮ উইকেটের বড় ব্যবধানে হারিয়েছে রংপুর রাইডার্স। জয়ে শুরু করার পর থেকে কেবল বিজয়ের হাসিই হেসে যাচ্ছে দলটি। চার ম্যাচের সবকটিই জিতে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষস্থান আরও মজবুত করলো বিপিএলের একবারের চ্যাম্পিয়নরা। দুই ম্যাচের দুটিতেই হেরে যাওয়া সিলেট তালিকার ছয় নম্বর দল।
টস হেরে আগে ব্যাটিং করতে নামে সিলেট। ভালো শুরুর পর সিলেটকে পথ দেখান রনি তালুকদার ও জাকির হাসান। দুজনই হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন। শেষ দিকে ক্যামিও ইনিংস খেলেন যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারন জোন্স, ঝড় তোলেন জাকের আলী অনিকও। এ কজনের ব্যাটে ৪ উইকেটে ২০৫ রান তোলে সিলেট। বিপিএলে সিলেট স্ট্রাইকার্সের এটা সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ। সিলেট দলটির ইতিহাসেই এটা সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ। ২০১৭ বিপিএলে রাজশাহী কিংসের বিপক্ষে ৬ উইকেটে ২০৫ রান করেছিল সিলেট সিক্সার্স।
বড় লক্ষ্য তাড়ায় শুরুটা ভালো না হলেও রংপুর রাইডার্সকে চাপ বুঝতে দেননি ম্যাচসেরা হেলস ও সাইফ হাসান। দ্বিতীয় উইকেটে রেকর্ড জুটি গড়ে দলকে জয়ের খুব কাছে পৌঁছে দেন এ দুজন। সেঞ্চুরিয়ান হেলসের সঙ্গে দুর্বার ইনিংস খেলেন ব্যাট হাতে ধারাবাহিকভাবে রান করে আসা সাইফও। হেলস-সাইফের ব্যাটে ৬ বল হাতে রেখেই ৮ উইকেটে জেতে রংপুর। বিপিএলে এটা তাদের সফল রান তাড়া। তাদের আগের সর্বোচ্চ রান তাড়া ছিল ১৯৫।
রংপুরের রান তাড়াটি বিপিএলের ইতিহাসের দ্বিতীয় সেরা। ২১১ রান তাড়ায় ২১৩ রান তুলে সবার উপরে চারবারের চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। সিলেট-রংপুরের ম্যাচে ৩১টি ছক্কা হয়েছে, যা বিপিএলে এক ম্যাচে সর্বোচ্চ ছক্কার রেকর্ড। আগের সর্বোচ্চ ছিল ২৯টি ছক্কা, হয়েছিল দুটি ম্যাচে।
বড় লক্ষ্য তাড়ায় শুরুতেই হোঁচট খায় রংপুর, প্রথম ওভারেই ফিরে যান তরুণ ওপেনার আজিজুল হাকিম তামিম। তাকে হারানো চাপ অবশ্য দলকে বুঝতে দেননি হেলস ও সাইফ। দ্রুততার সঙ্গে উইকেটে থিতু হয়ে মারকুটে ব্যাটিং শুরু করেন এ দুজন। সময় যতো গড়িয়েছে, ততো ধার বেড়েছে তাদের ব্যাটের। এক পর্যায়ে সিলেটের বোলারদের ওপর দিয়ে ঝড় বইয়ে দেন তারা। দ্বিতীয় ১০১ বলে ১৮৬ রানের বিশাল জুটি গড়েন হেলস-সাইফ।
বিপিএলে দ্বিতীয় উইকেটে রংপুরের এটা দ্বিতীয় সেরা জুটি। দ্বিতীয় উইকেটে দলটির সেরা জুটি ২০১ রানের। ২০১৭ বিপিএলে ২০০ ছাড়ানো অবিচ্ছিন্ন জুটিটি গড়েন ক্রিস গেইল ও ব্রেন্ডন ম্যাককালাম। তাদের ২০১ রানের জুটিটি আবার বিপিএলে যেকোনো উইকেটের সেরা। রংপুরের আজকের জুটিটি আসরটির ইতিহাসের চতুর্থ সেরা। সাইফের বিদায়ে এই জুটি ভাঙে, ফেরার আগে ৪৯ বলে ৩টি চার ও ৭টি ছক্কায় ৮০ রানের ঝলমলে এক ইনিংস খেলেন ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান।
অভিজ্ঞ ইফতিখার আহমেদকে সঙ্গে নিয়ে বাকি কাজটুকু সারেন ব্যাটকে তরবারিতে পরিণত করা হেলস। ৫৪ বলে সেঞ্চুরি পূর্ণ করা ইংলিশ ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান ৫৬ বলে ১০টি চার ও ৭টি ছক্কায় ১১৩ রানে অপরাজিত থাকেন। বিপিএলে এটা তার দ্বিতীয় সেঞ্চুরি। ৪ বলে ৮ রান করেন ইফতিখার। সিলেটের পক্ষে কেবল নিয়ন্ত্রিত বোলিং করতে পেরেছেন তানজিম হাসান সাকিব, ৪ ওভারে ২৩ রানে ২ উইকেট নেন তিনি। অধিনায়ক আরিফুল হক ১৭ ইকোনমিতে ৩ ওভারে ৫১ রান খরচা করেন। আল-আমিন হোসেন ৪ ওভারে দেন ৫৩ রান। নিহাদুজ্জামানও খরুচে ছিলেন, ৪ ওভারে দেন ৪৪ রান।
এর আগে ব্যাটিং করা সিলেটের পক্ষে সর্বোচ্চ রানের ইনিংস খেলেন রনি। ডানহাতি এই ওপেনার ৩২ বলে ৭টি চার ও ৩টি ছক্কায় ৫৪ রান করেন। হাফ সেঞ্চুরির দেখা পাওয়া জাকির ৩৮ বলে ৪টি ছক্কায় ৫০ রান করেন। ১৯ বলে একটি চার ও ৪টি ছক্কায় অপরাজিত ৩৮ রান করেন জোন্স। ঝড় তোলা জাকের ৫ বলে ৩টি ছক্কায় করেন হার না মানা ২০। জর্জ মানজি ১২ বলে ১৮, পল স্টার্লিং ১৬ বলে ১৬ রান করেন। রংপুরের মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন ৪ ওভারে ৩১ রানে ২টি উইকেট নেন। একটি করে উইকেট পান শেখ মেহেদি হাসান ও আকিফ জাভেদ। ৪ ওভার করা বোলারদের মধ্যে ১২.৭৫ ইকোনমিতে ৫১ রান দেন আকিফ।