লিটনের হাফ সেঞ্চুরির পর নাসুমের অবিশ্বাস্য বোলিং, বাংলাদেশের দাপুটে জয়
লিটন কুমার দাস ছাড়া কেউ-ই ব্যাট হাতে আলো ছড়াতে পারলেন না। সাদামাটা ইনিংস নিয়ে চিন্তাতেই থাকতে হলো বাংলাদেশকে। কিন্তু বল হাতে আলো ঝলমলে শুরু, বাঁ হাতের স্পিন ভেল্কিতে রং ছড়ালেন নাসুম আহমেদ। বাংলাদেশের বাঁহাতি এই স্পিনারের অবিশ্বাস্য বোলিংয়ে শুরুতেই দিকহারা আফগানিস্তান। পরে চেপে ধরলেন সাকিব আল হাসান, মুস্তাফিজুর রহমান, শরিফুল ইসলামরাও। তাতে হেসেখেলেই চলে এলো জয়।
দুই ম্যাচ সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে বৃহস্পতিবার আফগানিস্তানকে ৬১ রানের বড় ব্যবধানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। টি-টোয়েন্টিতে আফগানদের বিপক্ষে এটাই বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় এবং সব মিলিয়ে তৃতীয় বড় জয়। এই জয়ে সংক্ষিপ্ততম ফরম্যাটে আফগানিস্তানের বিপক্ষে কিছুটা ব্যবধান ঘোচানো গেল। আগের ছয় সাক্ষাতে চারবারই জেতে আফগানিস্তান, দুটি জয় ছিল বাংলাদেশের ঝুলিতে। সপ্তম ম্যাচটি জিতে জয়ের সংখ্যাটা তিনে নিয়ে গেল মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের দল। টি-টোয়েন্টিতে জয়ের খরাও কাটলো বাংলাদেশের। টানা আট ম্যাচ হারের পর মিললো জয়ের স্বাদ।
মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে আগে ব্যাটিং করতে নামে বাংলাদেশ। লিটন কুমার দাসের দারুণ ইনিংসের পরও বড় সংগ্রহ তুলতে ব্যর্থ হয় ঘরের মাঠের দলটি। ৮ উইকেট ১৫৫ রান তোলে বাংলাদেশ। যদিও এটাই আফগানদের বিপক্ষে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ। জবাবে স্পিন জাদু দেখানো ম্যাচসেরা নাসুম আহমেদ ও সাকিব আল হাসানের বোলিং তোপে ১৭.৪ ওভারে ৯৪ রানেই অলআউট হয়ে যায় আফগানিস্তান।
আফগানিস্তানের ইনিংসের ১০ উইকেটই নিয়েছেন বাংলাদেশের বাঁহাতি বোলাররা। উইকেট ভাগাভাগি করে নেন নাসুম, সাকিব, শরিফুল ও মুস্তাফিজ। এতে রেকর্ডও হয়েছে, টি-টোয়েন্টি ইতিহাসে এই প্রথম ইনিংসের সবগুলো উইকেট নিলেন বাঁহাতি বোলাররা।
আফগানদের কাছে রীতিমতো যমদূত হয়ে উঠেছিলেন ম্যাচসেরা নাসুম। বাঁহাতি এই স্পিনার একাই তুলে নেন আফগানদের প্রথম চার উইকেট। ৪ ওভারে মাত্র ১০ রান খরচায় ৪ উইকেট নেন নাসুম। যা তার টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেরা বোলিং। গত বছর ঘরের মাঠে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষেও ৪ ওভারে ১০ রানে ৪ উইকেট নেন তিনি। তবে সেখানে ছিল দুটি মেডেন ওভার।
নাসুমের শিকারে পরিণত হয়ে একে একে ফিরে যান রহমানউল্লাহ গুরবাজ, হজরতউল্লাহ জাজাই, দারবিশ রসুলি ও করিম জানাত। ২০ রানে ৪ উইকেট হারানো দলকে কিছুটা স্বস্তি দেন নাজিবুল্লাহ জাদরান ও অধিনায়ক মোহাম্মদ নবী। এ দুজন পঞ্চম উইকেটে ৩৭ রান যোগ করেন। ১৯ বলে ১৬ রান করা নবীকে ফিরিয়ে এই জুটি ভাঙেন সাকিব।
এর কিছুক্ষণ পর আফগানদের ইনিংসের সর্বোচ্চ রান করা নাজিবুল্লাহকেও ফেরান সাকিব। এর আগে ২৬ বলে একটি করে চার ও ছক্কায় ২৭ রান করেন তিনি। শেষ দিকে আজমতউল্লাহ ওমরজাই যা রান করেন। তার ব্যাট থেকে আসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২০ রান। বাকিরা ছিলেন আসা যাওয়ার মিছিলে। সাকিব ৪ ওভারে ১৮ রান খরচায় ২টি উইকেট নেন। ২৯ রানে ৩ উইকেট শিকার শরিফুলের, বাকি এক উইকেট নেন মুস্তাফিজ।
এর আগে ব্যাটিং করা বাংলাদেশের পুরো ইনিংসজুড়ে কেবল একটিই নাম, লিটন। রশিদ খান, মুজিব-উর-রাহমান, মোহাম্মদ নবী, কাইস আহমেদদের নিয়ে গড়া আফগানদের বিশ্বমানের স্পিনের বিপক্ষে কেবল তিনিই দাপুটে ছিলেন। ধীর-স্থির মেজাজে রান এগিয়ে নেওয়া আফিফ হোসেন ধ্রুবকে পালন করতে হয়েছে দায়িত্বশীল ভূমিকা। এ ছাড়া কয়েকজন ভালো শুরু করেও ইনিংস বড় করতে পারেননি।
এর মধ্যে অভিষিক্ত মুনিম অন্যতম। জাতীয় দলের হয়ে প্রথম ম্যাচ খেলতে নামা মুনিম শুরু থেকেই চড়াও মেজাজে ছিলেন, সাবলীলও দেখাচ্ছিল ডানহাতি এই ওপেনারকে। কিন্তু আফগানদের তারকা লেগ স্পিনার রশিদ খানের বাধায় বেশি পথ পাড়ি দেওয়া হয়নি তার। ১৮ বলে ৩টি চারে ১৭ রান করেন থামেন বিপিএলে জড়ো গতির ব্যাটিং দিয়ে জাতীয় দলে জায়গা করে নেওয়া মুনিম।
এর আগেই ফিরে যান নাঈম শেখ। বিপিএলে চরম বাজে সময় কাটানোর পরও দলে সুযোগ পাওয়া বাঁহাতি এই ওপেনার ৫ বলে ২ রান করে আফগান পেসার ফজল হক ফারুকীর ভেতরের দিকে ঢোকা ডেলিভারিতে এলবিডব্লিউ হন। নাঈম, মুনিমের বিদায়ের পর সাকিব যান উইকেটে। ২৫ রানে ২ উইকেট হারানো দলকে স্বস্তি দিতে পারেননি তিনিও। লিটনের সঙ্গে কিছু সময় উইকেটে থাকা বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান ৬ বলে ৫ রান করেন।
লিটনের সঙ্গে যোগ দিয়ে ভালো কিছুরই আভাস দেন প্রথম বল থেকেই চার-ছক্কা মারার ঘোষণা দেওয়া মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। যদিও টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক তেড়েফুঁরে শুরু করে উইকেটে স্থায়ী হতে পারেননি। কাইসের বলে দারুণ এক ছক্কা মারা মাহমুদউল্লাহ ৭ বলে ১০ রান করে ফিরে যান। তখনও এক পাশ আগলে টি-টোয়েন্টি মেজাজেই খেলে যাচ্ছেন লিটন। তার সঙ্গী হন আফিফ হোসেন ধ্রুব।
এই জুটি ১০.৫ ওভার থেকে ১৭ ওভার পর্যন্ত স্থায়ী হয়, রান আসে ৪৬। এর মাঝে ৩৪ বলে ৩টি চার ও ২টি ছক্কায় টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের পঞ্চম হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন লিটন। হাফ সেঞ্চুরি তুলে যেন কিছুটা খেই-ই হারান তিনি। পরের ১০ বলে একটি চারে করেন ১০ রান। শেষ পর্যন্ত ৪৪ বলে ৪টি চার ও ২টি ছক্কায় ৬০ রান করেন থামেন টপ অর্ডার এই ব্যাটসম্যান।
লিটন ফেরার পর রান তোলার গতি হারায় বাংলাদেশ, হারায় উইকেটও। পরের ওভারেই ক্যাচ তুলে সাজঘরে ফেরেন ইনিংসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান করা আফিফ। বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান ২৪ বলে ২টি চারে ২৫ রান করেন। শেষ দিকে আর রান ওঠেনি। অভিষিক্ত ইয়াসির আলী রাব্বি ৮, শেখ মেহেদি হাসান ৫, নাসুম আহমেদ ৩ ও শরিফুল ইসলাম ৪ রান করেন। আফগানিস্তানের ফজল হক ও আজমতউল্লাহ ওমরজাই ২টি করে উইকেট নেন। একটি করে উইকেট নেন দুই লেগ স্পিনার রশিদ ও কাইস।