আপনার হ্যান্ড-স্যানিটাইজার কতখানি কার্যকর? আমাদের পরীক্ষায় সাত ব্র্যান্ডের পণ্য
মারাত্মক সংক্রামক ভাইরাস কোভিড-১৯ এর বিস্তার রোধে ক্ষারজাতীয় সাবান কিংবা অ্যালকোহল-যুক্ত হ্যান্ড স্যানিটাইজারের মতো ভাইরাস প্রতিরোধী উপকরণ দিয়ে নিয়মিত হাত ধোয়া অত্যাবশ্যক।
বাংলাদেশে যখন ভাইরাসটির গোষ্ঠীবদ্ধ সংক্রমণ শুরু হয়, শুরুতে দেশের সর্বস্তরের সচেতন নাগরিকরা স্বতস্ফুর্তভাবেই দ্রুত বাধ্যতামূলকভাবে ভাইরাস প্রতিরোধী এসব উপকরণ ব্যবহারে সাড়া দিয়েছেন।
ফলে বেশ কয়েকটি হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্র্যান্ডের চাহিদা দ্রুতই বেড়ে যায়। কয়েক মাস আগেও এসব হ্যান্ড স্যানিটাইজার শুধুমাত্র চিকিৎসার কাজে ব্যবহার হয়েছে। কিন্তু করোনার প্রাদুর্ভাবের কারণে সাবান ও হ্যান্ডস্যানিটাইজারের কাটতি হঠাৎ করেই বাড়তে থাকে।
ফলে মুনাফার লোভে নড়েচড়ে বসে অসাধু ব্যবসায়ীরা, সীমাহীন চাহিদার কারণে দ্রুতই ব্যাঙের ছাতার মতো নকল, নিম্নমানের স্যানিটাইজারে বাজারে সয়লাব হয়ে যায়।
আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হাতে দেশের বিভিন্ন স্থানে ভেজাল হ্যান্ড স্যানিটাজারর প্রস্তুতকারীরা ধরা পড়ার পর, দেশের মানুষ জনপ্রিয় হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্র্যান্ডগুলির গুণমান নিয়েও সন্দিহান হয়ে পড়ে।
এই উদ্বেগ ও সন্দেহকে আমলে নিয়ে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড ১২ জুলাই, বিভিন্ন ব্র্যান্ডের হ্যান্ড স্যানিটাইজারের সাতটি নমুনা- সেপনিল, হেক্সিসল, স্যানিটাইজা, স্যাভলন, লাইফবয়, হেক্সিয়ন এবং কেয়ার অন -রাষ্ট্রায়ত্ত গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা কাউন্সিলের ( বিসিএসআইআর) ল্যাবে পাঠায় পরীক্ষার জন্য।
বিসিএসআইআর এর রাসায়নিক বিশ্লেষণে দেখা যায়, সরবরাহ করা সাতটি নমুনার মধ্যে ছয়টি নমুনায় অ্যালকোহলের মাত্রা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) নির্ধারণ করে দেওয়া মাত্রার চেয়ে বেশি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বেঁধে দেওয়া মাত্রা অনুযায়ী, জীবাণু ধ্বংসের জন্য হ্যান্ড স্যানিটাইজারে কমপক্ষে ৬০ শতাংশ অ্যালকোহল বা 'নির্দিষ্ট অ্যান্টিসেপটিক' থাকা উচিত। বিসিএসআইআর এর বিশ্লেষণে দেখা যায়, স্কয়ার টয়লেট্রিজের সেপনিলে ৫০ মিলিগ্রামে রয়েছে ৭০.০৭ শতাংশ অ্যালকোহল।
২০১৩ সাল থেকে স্কয়ার সেপনিল ইনস্ট্যান্ট হ্যান্ড স্যানিটাইজার উৎপাদন করে আসছে। সেপনিলের প্রচারে, স্কয়ার দাবি করছে; যে সেপনিল ব্যবহারে ৯৯.৯ শতাংশ জীবাণু ধ্বংস হয়।
স্কয়ার টয়লেট্রিজের হেড অফ অপারেশনস মালিক মোহাম্মদ সাঈদ বলেন, সেপনিলকে জীবাণুনাশে আরও বেশি কার্যকর করার জন্য তারা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বেঁধে দেওয়া মাত্রার চেয়েও বেশি অ্যালকোহল ব্যবহার করছেন পণ্যটিতে।
মালিক আরও দাবি করেন, সেপনিল একটি জনপ্রিয় ব্র্যান্ড, দেশে করোনভাইরাসের সংক্রমণের অনেক আগে থেকেই মানুষ এ পণ্যটি ব্যবহার করে আসছে।
ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের ১০০ মি.লি'র স্যানিটাইজায় ৭০ শতাংশ আইসোপ্রোপাইল অ্যালকোহল বি- এর মধ্যে আরও রয়েছে ০.৫ শতাংশ ক্লোরহেক্সিডিন গ্লুকোনেট।
দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের প্রশ্নের জবাবে বিসিএসআইআর জানাচ্ছে; ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালসের স্যানিটাইজায় ৭১.৫৭ শতাংশ আইসোপ্রোপাইল অ্যালকোহল রয়েছে।
অ্যাডভান্সড কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজের হেক্সিসলে আইসোপ্রোপাইল অ্যালকোহল পাওয়া গেছে ৭১.১৩ শতাংশ। এই কোম্পানির স্যাভলন স্যানিটাইসার জেলে ৭০.৫০ শতাংশ ইথানল রয়েছে।
ইউনিলিভার বাংলাদেশের লাইফবয়ে আছে ৭১.০১ শতাংশ আইসোপ্রোপাইল অ্যালকোহল।
জিসকা ফার্মাসিউটিক্যালসের কেয়ার-অনে রয়েছে ৫৯.৫৭ শতাংশ অ্যালকোহল।
ওরিয়ন ফার্মার জনপ্রিয় হ্যান্ড স্যানিটাইজার হেক্সিয়নেও পরীক্ষায় ৭০ শতাংশ অ্যালকোহল পাওয়া গেছে।
জিসকা ফার্মাসিউটিক্যালসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমিনুল ইসলাম খান জানিয়েছেন, এ বছরের এপ্রিলে তারা কেয়ার-অন বাজারে এনেছেন।
তিনি বলেন, 'শুরু থেকেই গ্রাহকরা, কেয়ার-অনে অতিরিক্ত অ্যালকোহল থাকায় একে ব্যবহার-বান্ধব বলে গ্রহণ করেছে। কারণ অতিরিক্ত অ্যালকোহল থাকায় এটা আঠালো না। আর আমরা সব সময় আমাদের পণ্যের সর্বোচ্চ মান ধরে রাখার চেষ্টা করি।'