হ্যান্ড স্যানিটাইজারে শিশুর চোখের ক্ষতি!
বিশ্বব্যাপী মহামারি আকারে যখন করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে, এর বিস্তার রোধের সবচেয়ে সহজ, সাশ্রয়ী ও কার্যকর উপায়গুলোর একটি হয়ে দাঁড়ায় ঘন-ঘন সাবান ও পানি দিয়ে হাত ধোয়া। কিন্তু যখন পানি বা সাবান হাতের নাগালে থাকে না, তখন হ্যান্ড স্যানিটাইজারই ভরসা।
হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যাপক ব্যবহার দেখা মেলে শপিং মল, অফিস বা বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে। কোনোভাবে এই অ্যালকোহল মেশানো ঘন তরল গিলে ফেললে পেট ব্যথা, বমি, গা-গোলানোর পাশাপাশি কোমায় পর্যন্ত চলে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে।
আমেরিকান গবেষকরা জানান, যেসব বাচ্চা হ্যান্ড স্যানিটাইজার খেয়ে ফেলেছে, তাদের শরীরে এর সাংঘাতিক প্রভাব পড়েছে। মার্কিন সংস্থা সেন্টার ফর ডিজিস কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন গবেষণা চালিয়ে দেখেছে, হ্যান্ড স্যানিটাইজার গিলে ফেলা বাচ্চাদের বয়স অধিকাংশ ক্ষেত্রে ৬ থেকে ১২ বছরের মধ্যে।
রিপোর্ট বলছে, ২০১১-১৪ সাল পর্যন্ত হ্যান্ড স্যানিটাইজার খেয়ে ফেলেছে অন্তত ৭০ হাজার ৬৬৯ শিশু। এদের মধ্যে ৯২ শতাংশ শিশুই খেয়ে ফেলেছে অ্যালকোহল মেশানো স্যানিটাইজার।
সম্প্রতি ফ্রান্সের কিছু শিশুর চোখে স্যানিটাইজার পাওয়া গেছে। যার ফলে, রাসায়নিক জখম হয়ে তাদের চোখের মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে।
ফ্রেঞ্চ পয়জন কন্ট্রোল সেন্টারের তথ্য অনুসারে, গত বছরের ১ এপ্রিল থেকে ২৪ আগস্ট পর্যন্ত হ্যান্ড স্যানিটাইজারে চোখের ক্ষতি হয়েছে এমন শিশুর সংখ্যা আগের বছরের তুলনায় সাত গুণ বেশি।
ওই একই কারণে, একই সময়ে, প্যারিসের পেডিয়াট্রিক অপথালমোলজি হসপিটালে ১৬ শিশুকে ভর্তি করানো হয়েছিল; যেখানে এর আগের বছর এ ধরনের শিশু ছিল শুধুই একজন। ওই শিশুদের কর্নিয়ায় টিস্যু প্রতিস্থাপনের জন্য অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হয়েছিল। ওরা সবাই ৪ বছরের কম বয়সী শিশু।
এজন্য ফরাসী গবেষকরা শিশু ও তার কাছে হ্যান্ড স্যানিটাইজার সরবরাহকারীদের উচ্চতাকে দায়ী করেছেন। তারা মনে করছেন, সরবরাহকারীদের উচ্চতা সাধারণত শিশুদের তুলনায় ৩ ফুট বেশি হওয়ায় ওদের চোখের সমতায় থাকে বেশিরভাগ প্রাপ্তবয়স্কের কোমর।
ফরাসি ডাটাবেস অনুসারে, ২০১৯ সালে শিশুদের এ ধরনের ঘটনার হার ছিল মাত্র ১.৩%, যা ২০২০ সালে ছিল ৯.৯%।
গবেষণাটি আরও জানিয়েছে, শিশুদের সবচেয়ে বড় ঝুঁকির জায়গা হলো রাস্তাঘাট, শপিং মল বা জনসাধারণের জায়গাগুলো। ২০২০ সালে প্রকাশিত ঘটনাগুলো থেকে জানা যায়, ৬৩টি ঘটনা ঘটেছে জনসমাগমের স্থান থেকে। যদিও ২০১৯ সালে এ নিয়ে কোনো প্রতিবেদনের কথা জানা যায়নি।
আবার, অনেক হ্যান্ড স্যানিটাইজারে রয়েছে উচ্চ পরিমানে ইথানল, যা কর্নিয়ার কোষগুলোকে মেরে ফেলতে পারে।
একই জার্নালে প্রকাশিত আরেকটি গবেষণায় ভারতের চিকিৎসকরা দুটি শিশুর ঘটনা বিশদভাবে তুলে ধরেছেন, যেখানে চোখে স্যানিটাইজার বিস্ফোরণের ফলে এর ভয়াবহ পরিণতি নিয়ে আলোচনা রয়েছে।
সেখানে ৪ বছর বয়সী এক শিশু অভিযোগ করে, সে আলোর দিকে তাকাতে পারত না। অন্যদিকে, ৫ বছর বয়সী আরেক শিশুর কথা লেখা রয়েছে, যার চোখের পাতার ক্ষতি হয়েছিল। অবশ্য, ওরা দুজনই চিকিৎসার পর সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠেছে।
তবে চিকিৎসকরা বলেন, জনসমাগমের স্থানগুলো এবং স্কুলে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহারের সম্ভাব্য বিপদগুলো আমাদের বিবেচনা করা প্রয়োজন।
চিকিৎসকরা কয়েকটি নির্দেশনা মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছেন:
- হাত ধোয়ার জন্য সাবান ও পানি ব্যবহার করা।
- হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহারের জন্য শিশুদের প্রশিক্ষণ দেওয়া।
- দোকান বা শপিং মলগুলোতে শিশুদের জন্য আলাদা সরবরাহকারীর ব্যবস্থা করা।
(স্যানিটাইজার শিশুদের নাগালের মধ্যে রাখতে হবে।) - স্যানিটাইজার সরবরাহকারীদের চারপাশে সাবধানতার চিহ্ন এঁকে দেওয়া।
নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির গ্রসম্যান স্কুল অব মেডিসিনের চক্ষুবিদ্যা বিভাগের ডা. ক্যাথরিন কলবি বলেন, অভিভাবকদের এ বিষয়ে সতর্ক থাকা উচিত। শিশুরা অ্যালকোহল স্যানিটাইজারের সংস্পর্শে এলে হেলাফেলা না করে দ্রুত পেশাদারদের মাধ্যমে পরীক্ষা করানো জরুরি।
- সূত্র: সিএনএন