আর্থার: প্রথম পেশাদার কৃষ্ণাঙ্গ ফুটবলার
ইংল্যান্ডের ডারলিংটনের উইডোফিল্ডে আঁকা হচ্ছে প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ পেশাদার ফুটবল খেলোয়াড় আর্থার ওয়ারটনের ম্যুরাল। ১৯ শতকের খ্যাতিমান এই খেলোয়াড়ের স্মৃতি রাখতে এ আয়োজন।
আর্থার তার ১৭ বছরের ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই বর্ণবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন। বিভিন্ন সময়ে শেফিল্ড ইউনাইটেড, রদারহাম ও প্রেস্টন নর্থ এন্ড ক্লাবের হয়ে গোলরক্ষক হিসেবে খেলেছেন। সাম্প্রতিক 'ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার' আন্দোলনের পরই আর্থার ওয়ারটন ফাউন্ডেশন যুক্তরাজ্যে কৃষ্ণাঙ্গদের ইতিহাস পুনর্জীবিত করার লক্ষ্যে এই ম্যুরাল তৈরির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।
ডারলিংটনে আর্থার তার কৈশোরে ফুটবল খেলা শুরু করেন। তাই তার স্মৃতি রক্ষার্থে এখানে তৈরি হচ্ছে ম্যুরালটি। এর মাধ্যমে নতুন করে সামনে আসছে যুক্তরাজ্যের মিশ্র সংস্কৃতির ইতিহাস। আর্থারের বাবা ছিলেন গ্রেনাডিয়ান বংশোদ্ভূত স্কটিশ নাগরিক। মা ছিলেন ব্রিটিশ উপনিবেশ গোল্ড কোস্টের (বর্তমানে ঘানা) নাগরিক। আর্থার ১৯ বছর বয়সে ডরহাম কাউন্টিতে আসেন এবং এখানেই শুরু হয় তার খেলোয়াড় জীবনের যাত্রা।
বাবার পদাঙ্ক অনুসরণ করে ধর্মপ্রচারের জন্য তিনি ডারলিংটনে আসেন। তবে শীঘ্রই তিনি তার প্রকৃত আগ্রহের জায়গা খুঁজে পান। পরবর্তীতে এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন, আমি বুঝতে পেরেছিলাম ধর্ম আমার আগ্রহের বিষয়বস্তু নয়। ডারলিংটন ও প্রেস্টনের হয়ে খেলার পর ১৮৮৯ সালে রদারহামের হয়ে পেশাদার ফুটবল খেলার জগতে প্রবেশ করেন তিনি।
আর্থার ওয়ারটন ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা শন ক্যাম্পবেল দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্টকে জানান, কৃষ্ণাঙ্গদের ইতিহাসের মূল্যায়ন ছাড়া এই আন্দোলন সফল করা সম্ভব নয়। জাতিগত বৈষম্য দূরীকরণে ইতিহাস জানতে হবে। আর ইতিহাসের অগ্রগামীদের মধ্যে আর্থারের মতো গুরুত্বপূর্ণ কেউ নেই।
ইতোপূর্বে ২০১৪ সালে স্টাফোর্ডশায়ারের সেন্ট জর্জ পার্কে তার ভাস্কর্য স্থাপন করা হয়। তবে জায়গাটি ব্যক্তিমালিকানাধীন হওয়ায় শুধু যুক্তরাজ্যের খেলোয়াড়রাই প্রশিক্ষণের সময়ে ভাস্কর্যটি দেখতে পারেন।
একারণে তার স্মৃতিকে জনসাধারণের মধ্যে পুনরুজ্জিবীত করতেই ডারলিংটিনের রাস্তায় ম্যুরালটি আঁকা হচ্ছে। এ ম্যুরাল ইতিহাসের মুছে যাওয়া একটি ইতিহাসকে নতুন করে দৃশ্যমান করে তুলবে।'
১৯০২ সালে আর্থারের ফুটবল ক্যারিয়ার শেষ হওয়ার পর ধীরে ধীরে ফুটবলের ইতিহাস থেকে তার নাম মুছে যেতে থাকে। এজন্যই এই ম্যুরালটি ফুটবল বিশ্বে তার গুরুত্বকে আবার মনে করিয়ে দেবে।
ফুটবল ইউনাইটস রেসিজম ডিভাইডস (এফইউআরডি) এর মতো কিছু সংস্থা তার কৃতিত্ব প্রচারের কাজ করলেও বর্তমান সময়ে বেশিরভাগ ফুটবলপ্রেমী ও বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনকারীদের কাছে তার নাম অপরিচিত।
আর্থারের এক বংশধর ডরোথি রুনি জানান, আমরা তাকে নিয়ে গর্বিত। সাম্প্রতিক সময়ে তিনি কিছুটা পরিচিত পেলেও তিনি তার প্রাপ্য সম্মান পাচ্ছেন না। তৎকালীন সময়ে মিশ্র জাতিসত্ত্বার মানুষ হিসেবে যে পর্যায়ে গেছেন, তার জন্য অভূতপূর্ব সাহস ও দৃঢ় সংকল্পের প্রয়োজন।
তৎকালীন কোনো সংবাদপত্রে আর্থারের প্রতি বর্ণ বৈষম্যমূলক আচরণের বিস্তারিত জানা যায়নি। প্রখ্যাত লেখক ও চলচ্চিত্র নির্মাতা ফিল ভাসিলি তার 'দ্য ফার্স্ট ব্ল্যাক ফুটবলার' বইয়ে উল্লেখ করেন, সেসময় বর্ণবাদী আচরণ এতটাই স্বাভাবিক ছিল যে তৎকালীন সংবাদপত্রগুলো এনিয়ে কিছু বলার-ই প্রয়োজন বোধ করত না। জানা যায়, ১৯ শতকের ব্রিটেনে আর্থার প্রতিনিয়ত বর্ণবাদী আচরণের শিকার হতেন।
মিডেলসব্রোতে আর্থার একটি দৌড় প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হওয়ার পরও বিচারকরা তাকে বাদ দিয়ে একজন শ্বেতাঙ্গকে বিজয়ী ঘোষণা করে। ১৮৮৭ সালে আর্থার এক সাক্ষাৎকারে এ ব্যাপারে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
আর্থার পরবর্তীতে ওয়াল্টার টাল ও জ্যাক লেসলিসহ অনেক কৃষ্ণাঙ্গ খেলোয়াড়ের জন্য অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত রেখে যান। তবে তার নিজের ক্যারিয়ার-পরবর্তী জীবন তিনি বেশ কষ্টে অতিবাহিত করেন।
ক্যারিয়ার শেষে তিনি সাউথ ইউর্কশায়ারে স্থায়ীভাবে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন খনি শ্রমিক হিসেবে। আর্থিক সংকট ও বিভিন্ন পারিবারিক জটিলতায় তিনি অ্যালকোহলে আসক্ত হয়ে পড়েন। ১৯৩০ সালে ৬৫ বছর বয়সে ক্যান্সার আক্রান্ত হয়ে তিনি মারা যান। কোনো নামের ফলক ছাড়াই এডলিংটন গ্রামে তাকে দাফন করা হয়। পরবর্তীতে এফইউআরডি কবরে তার নামের ফলক স্থাপন করে।
আর্থার ওয়ারটন ছাড়াও তিনি ঘানায় কোয়ামি নামে বিশেষভাবে পরিচিত। তার স্মৃতিরক্ষার্থে আঁকা নতুন ম্যুরালে কোনো লেখা থাকবে না।
আমাদের বর্তমান অবস্থার পথিকৃৎ এই কৃষ্ণাঙ্গ খেলোয়াড়, যিনি সকল বাঁধা অতিক্রম করে কঠিন সময়ে টিকে ছিলেন বলে জানান আর্থার ওয়ারটন ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা শন ক্যাম্পবেল।