চুল পড়া বা পাতলা হয়ে যাওয়া যেভাবে প্রতিরোধ করবেন
চুল পড়া, চুল পাতলা হয়ে যাওয়া কিংবা অল্প বয়সেই মাথায় টাক পড়ে যাওয়ার সমস্যায় ভুগছেন, এমন মানুষের সংখ্যাটা কম নয়, বরং বেশিই। কিন্তু জানেন কি, এইসব সমস্যার পেছনে অধিকাংশ কারণই আপনার নিজের নিয়ন্ত্রণে? অর্থাৎ, আপনি নিজেই চাইলে এসবের অনেকটা সমাধান করে ফেলতে পারবেন।
টাক পড়ার মতো সমস্যা যদি আপনার বংশগতভাবেই থাকে, নিজের সেই জেনেটিক কোড বদলাতে না পারলেও, অপুষ্টিজনিত কারণে বা অন্যান্য অযত্নের ফলে চুল পড়ার সমস্যার সমাধান অবশ্যই আছে।
প্রথমেই আসা যাক খাদ্যাভ্যাসের কাছে। পুষ্টিকর খাবার ও ভিটামিনের অভাব এবং পর্যাপ্ত প্রোটিন গ্রহণ না করলে চুল পড়ার সমস্যা তৈরি হয়। ফ্যাড বা ক্র্যাশ ডায়েট করলেও একই রকম নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। তাই শরীরে যথাযথ পুষ্টি নিশ্চিত করতে হলে যা যা করতে হবে:
দৈনিক বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি ও ফল খাওয়া
কেউ যদি ভেজিটারিয়ান হয়ে থাকেন, তাহলে মাংসজাতীয় খাবার বাদে অন্যান্য খাবার থেকেই আপনাকে প্রোটিনের উৎস খুঁজে নিতে হবে। সেক্ষেত্রে মটরশুটি, বাদাম, পনির এবং কম ফ্যাটযুক্ত দুগ্ধজাত খাবার গ্রহণ করতে হবে।
নিজের উচ্চতা, ওজন এবং স্বাস্থ্যের লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ক্যালরি গ্রহণের পরিমাণ নির্ধারণ করতে হবে।
স্বাস্থ্যকে নিজের নিয়ন্ত্রণে আনা
থাইরয়েড, ইনফেকশন বা দুশ্চিন্তাসহ নানা ধরনের স্বাস্থ্যজনিত সমস্যার কারণে চুল পড়ে। এই সমস্যাগুলোরও সমাধান করতে হবে আপনাকে।
নিজের দেহ-মনকে প্রশান্ত রাখতে দুশ্চিন্তা কমানোর পদ্ধতি অনুসরণ করুন।
থাইরয়েডজনিত যেকোনো সমস্যার ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা ও ওষুধ গ্রহণ করুন।
টিনিয়া ক্যাপিটিস (মাথার তালুতে হওয়া দাদ) এবং অন্যান্য ফাঙ্গাল ইনফেকশন হলে চুলের বৃদ্ধি কমে যায়। তাই এ ধরনের ইনফেকশনের জন্য যথাযথ চিকিৎসা নিতে হবে।
লুপাস ও ডায়াবেটিসের মত রোগ, যেগুলোর ফলে চুল পড়তে থাকে; সেসব রোগ সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
নিজের চুলের যত্ন নিন
চুল পড়ে হালকা হয়ে যাওয়া ও টাক দেখা দেওয়ার মতো সমস্যাগুলো আপনার নিজের অভ্যাসের কারণেই হতে পারে। অতিরিক্ত স্টাইলিংয়ের ফলে চুল খুব সহজেই শুষ্ক ও ভঙ্গুর হয়ে যেতে পারে। নিয়মিত হট স্টাইলিং টুল ব্যবহার করা, যখন তখন শ্যাম্পু করা, যেনতেনভাবে চুল আঁচড়ানো এবং একসঙ্গে অনেক জিনিস চুলে ব্যবহার করলে চুল পাতলা হয়ে যায় এবং ফাটতে থাকে।
তাহলে চলুন এবার জেনে নেয়া যাক কীভাবে চুলের সঠিক যত্ন নিবেন
* কখনোই চুল জোরে টানবেন না বা জোরে আঁচড়াবেন না।
* আপনার চুলের ধরন যদি এমনিতেই শুষ্ক হয়, তাহলে বারবার শ্যাম্পু করা যাবে না।
* ব্লো ড্রায়ার, কার্লিং আয়রন এবং স্ট্রেইটনারের মতো হিটেড স্টাইলিং টুলগুলোর ব্যবহার কমিয়ে আনতে হবে।
* ক্ষতিকর কেমিক্যাল চুলে ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
* মোটা ও বড় দাঁতের চিরুনি দিয়ে চুলের জট ছাড়াতে হবে।
* চুল টেনে বা খুব শক্ত করে বাঁধা হয়- এমন স্টাইলিং বাদ দিতে হবে। কারণ এতে চুল ভঙ্গুর হয়ে যায়।
সমস্যা বোঝার জন্য ডাক্তারের কাছে যাওয়া
বড় ধরনের কোনো মানসিক বা শারীরিক অসুস্থতা, গর্ভাবস্থা পরবর্তী হরমোনজনিত পরিবর্তন ও কেমোথেরাপির মতো চিকিৎসা নেওয়ার ফলে চুল পড়া শুরু হলে; এক্ষেত্রে নিজের তেমন কিছুই করার থাকে না (যদিও কখনো কখনো প্রাকৃতিকভাবেই আবার চুল গজায়)। কিন্তু এসব জটিল রোগ বাদে, এমনিতেই যদি হঠাৎ লক্ষ্য করেন যে, স্বাভাবিকের চাইতে বেশি চুল পড়ছে বা একদলা চুল হাতে উঠে আসছে, তাহলে সমস্যা বোঝার জন্য ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিত।
চুল পড়ার সমস্যার পাশাপাশি চিকিৎসকের সাথে নিজের ডায়েট, জীবনের নানা দুশ্চিন্তা এবং অন্যান্য উপসর্গ নিয়েও কথা বলতে পারেন। এতে শারীরিক ও মানসিক- সব দিক থেকেই উপকৃত হবেন।
-
সূত্র: এভরিডে হেলথ