সড়কবাতির আলোক দূষণে কমছে কীটপতঙ্গ: গবেষণা
গত কয়েক দশকে আলোক দূষণের কারণে পোকামাকড়ের সংখ্যা 'উদ্বেগজনকভাবে' কমে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
যুক্তরাজ্যের বিজ্ঞানীদের করা একটি গবেষণার বরাতে বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সড়কবাতির কৃত্রিম আলো নিশাচর পতঙ্গের স্বাভাবিক আচরণে বাঁধা দেয় এবং শুঁয়োপোকার সংখ্যা অর্ধেক কমিয়ে দেয়।
বিজ্ঞানীদের ভাষ্য, আলোর এ দূষণের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলছে আধুনিক এলইডি সড়কবাতিগুলো।
নানা সময়েই বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, জলবায়ু পরিবর্তন, আবাসস্থল হ্রাস এবং কীটনাশকের কারণে পোকামাকড়ের সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে।
এই ফ্যাক্টরগুলো ছাড়াও বিজ্ঞানীরা বলছেন, রাতের বেলায় কৃত্রিম আলোর ব্যবহার পোকার সংখ্যা কমে যাওয়ার ক্ষেত্রে একটি চলক হিসেবে কাজ করে। তবে এটার পরিমাণ ঠিক কতোটুকু সে বিষয়ে অস্পষ্টতা রয়ে গেছে।
'সায়েন্স অ্যাডভান্সে' প্রকাশিত এই গবেষণাটিতে বলা হয়েছে, আলোক দূষণের কারণে পোকামাকড়ের সংখ্যার উপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়ায় খাদ্যের জন্য তাদের উপর নির্ভরশীল পাখি, বন্যপ্রাণিসহ বাস্তুতন্ত্রের অন্যান্য প্রাণিরাও বিপাকে পড়ে।
যুক্তরাজ্যের সেন্টার ফর ইকোলজি অ্যান্ড হাইড্রোলজির প্রধান গবেষক ডগলাস বয়েস বলেন, "আমরা এখন যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী যে আলোক দূষণ মারাত্মক। কিন্তু আমরা যদি সবকিছু বিবেচনা করতে যাই, তখন এটি অতোটা প্রভাব বিস্তার করছে বলে মনে হবে না।"
তিনি আরও বলেন, "আমরা মনে করি পোকামাকড় এ কারণে সমস্যায় পড়ছে। এই মনে করার পেছনে যথেষ্ট প্রমাণও আমাদের কাছে আছে। পোকামাকড়ের উপর এই নেতিবাচক প্রভাবগুলো কমাতে আমাদের যথাসাধ্য চেষ্টা করা উচিত।"
গবেষকরা মনে করেন, রাস্তার আলো নিশাচর পতঙ্গকে তাদের ডিম পাড়া থেকে বিরত রাখতে পারে।
তারা মনে করেন, যেসব শুঁয়োপোকা স্ট্রিটলাইটের নিচে বিশেষ করে এলইডি লাইটের নিচে জন্মায় সেগুলো তাদের খাদ্যাভ্যাসও পরিবর্তন করে ফেলে।
গবেষণাটিতে এ বিষয়ে কিছু সমাধানের পথও বলে দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। তবে সেগুলোর কোনোটিই মানুষের নিরাপত্তার সঙ্গে আপোস করে নয়। এর মধ্যে রয়েছে রাতের প্রথম প্রহরে স্ট্রিটলাইটের আলো কমিয়ে দেওয়া, মোশন সেন্সর লাগানো বা সবচেয়ে ক্ষতিকর তরঙ্গদৈর্ঘ্য কাটাতে রঙিন ফিল্টার ব্যবহার করা।
পোকামাকড়ের সংখ্যা কমে যাওয়ায় বিজ্ঞানীরা বেশ উদ্বিগ্ন।
২০১৯ সালের আরেকটি বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখা যায়, বিশ্বজুড়ে ৪০ শতাংশ প্রজাতির পোকামাকড়ের সংখ্যা নাটকীয়ভাবে হ্রাস পেয়েছে।
গবেষণায় দেখা যায়, স্তন্যপায়ী প্রাণি, পাখি বা সরীসৃপের তুলনায় মৌমাছি, পিঁপড়া এবং গুবরে পোকা আটগুণ দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে। অন্যদিকে, মাছি এবং তেলাপোকার মত প্রজাতিগুলো আবার বিকশিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
পোকামাকড়ের এই ক্ষতি সমগ্র বাস্তুতন্ত্রের উপর সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলবে বলে জানিয়েছেন গবেষকরা।
কারণ পাখি, অনেক উভচর প্রাণী, বাদুড় এবং সরীসৃপের খাদ্যের উৎস হলো পোকামাকড়। আবার অন্যদিকে, পরাগায়নের জন্য গাছপালাও পোকামাকড়ের উপর নির্ভরশীল।