চিনি মুক্ত খাদ্য উপাদান: আমরা যেমন ভাবি সুইটেনার কী আসলেই তেমন ক্ষতিকর না?
মিষ্টি খাদ্য ও পানীয়ের প্রতি আসক্তি রয়েছে অনেকেরই। উত্তর-আধুনিক জীবনযাত্রায় যেন বাড়ছে দিনে দিনে এ আসক্তি। তবে স্বাস্থ্যগত ঝুঁকির জন্য সরাসরি চিনিকেই বলা হচ্ছে 'এক নম্বর জনশত্রু'। সে তুলনায় সুইটেনার বা মিষ্টিকারক উপাদান নিয়ে রয়েছে ইতিবাচক প্রচারণা। আর তাতে আস্থা রেখে মানুষ ঝুঁকছেও চিনির বিকল্প এমন সুইটেনার সমৃদ্ধ খাদ্যপণ্যে। দ্য গার্ডিয়ান অবলম্বনে
শুধু ডায়াবেটিসের মতো দীর্ঘস্থায়ী রোগ নয়, ওজন কমানোর জন্য লো-ক্যালোরি ডায়েট করতেও মানুষ ঝুঁকছে চিনির এসব কৃত্রিম বিকল্পে। এ যুগের মানুষের পক্ষে এসব সুইটেনার এড়ানোর উপায়ও কমছে দিনকে দিন। না চাইলেও নিজের অজান্তেই হয়তো সেগুলি আপনি গ্রহণ করে চলেছেন।
যেমন ২০২১ সালে হংকংয়ে বিক্রি হওয়া খাদ্যপণ্যের ওপর এক জরিপে দেখা গেছে, সালাদ ড্রেসিং, পাউরুটি, ইনস্ট্যান্ট ন্যুডলসের মতো বহু পণ্যেই রয়েছে এর উপস্থিতি।
সুইটেনার আমাদের খাদ্যাভ্যাসের সাথে এমনভাবে জড়িয়ে পড়েছে যে, জলাশয় বা নদীতে মানব বর্জ্যের দূষণের মাত্রা নির্ধারণের সময় পরিবেশ বিজ্ঞানীরা সেখানে এসসালফেম পটাশিয়ামের মতো সুইটেনারে ব্যবহৃত উপাদান খোঁজেন। বেশিরভাগ সময়েই এসব উপাদান আমাদের অন্ত্রে পরিপাক না হয়েই শরীর থেকে নিঃসৃত হয়।
সুইটেনারের এই সর্বব্যাপীতার অন্যতম কারণ কিন্তু উন্নত দেশগুলোয় চিনির ওপর আরোপিত নানান কর ব্যবস্থার সাফল্য, যা ২০১০ সাল থেকে ৪০টির বেশি দেশে চালু করা হয়েছে। যেমন যুক্তরাজ্যে ২০১৬ সালে কোমল পানীয় শিল্পে এই কর চালু হয়, আর তা কার্যকর করা হয় হয় ২০১৮ সালে। চিনিযুক্ত খাদ্য/পানীয়ে জনগণের মুটিয়ে যাওয়া বাড়ছে, এই উদ্বেগ থেকেই এই শিল্পে চিনির ব্যবহার কমাতে করটি আরোপ করা হয়, যাতে বেড়ে যায় চিনিযুক্ত পণ্যের দাম। তাই এক পর্যায়ে যুক্তরাজ্যের বাজারে ব্যবসা করা সব সফট ড্রিংকস কোম্পানি তাদের পণ্যে চিনির পরিমাণ কমায়, কিন্তু একইসঙ্গে মিষ্টতা অক্ষুন্ন রাখতে তার বদলে কৃত্রিম সুইটেনার ব্যবহার বাড়ায়। কোকোকোলা, পেপসির মতো কোমল পানীয় খাতের জায়ান্টরাও এই মিছিলে শামিল হয়। ২০১৯ সাল নাগাদ যুক্তরাজ্যের বাজারে তাদের সব ধরনের পানীয়ের ৮৩ শতাংশই ছিল 'সুগার ফ্রি'।
যেহেতু বিশ্বের বড় ভোগ্যপণ্যের কর্পোরেশনগুলো পশ্চিমা দেশগুলো দ্বারা নিয়ন্ত্রিত বা প্রভাবিত, তাই বিশ্বের অন্যান্য স্থানেও আছড়ে পরে এই 'সুগার ফ্রি' ট্রেন্ড। উন্নয়নশীল দেশগুলোতে শহুরে জনগোষ্ঠী বৃদ্ধি, শিক্ষার বিস্তার, পশ্চিমা জীবনযাত্রা বা খাদ্যাভ্যাসের অনুকরণ, জনপ্রিয়তা, গণমাধ্যমের প্রচারণা এবং স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধির অংশ হিসেবে চিনি এড়িয়ে চলার প্রবণতাও এই কৃত্রিম মিষ্টিকারকের বিস্তারের কারণ হয়েছে। আজকাল তো এনার্জি ড্রিংকস বাজারজাতকরণেও দেওয়া হচ্ছে 'সুগার ফ্রি' স্লোগান। অথচ, এনার্জি ডিংকসে চিনিই সেই উপাদান যা আপনাকে চনমনে করবে বা এনার্জি দেবে, তাহলে এই প্রচারে যুক্তিটাই বা কোথায়?
সুইটেনার কী?
সুইটেনার বলে আসলে চিনির বদলে ব্যবহার করা অনেক ধরনের রাসায়নিক উপাদানকে বোঝানো হয়। এদের অধিকাংশই একই পরিমাণ ওজনের দিক থেকে প্রতিগ্রাম চিনির তুলনায় অনেকবেশি মিষ্ট স্বাদযুক্ত। কিন্তু, এগুলোয় ক্যালোরির পরিমাণ থাকে খুবই কম বা কোনো কোনোটিতে মোটেও থাকে না। যুক্তরাষ্ট্রে অনুমোদিত এমন একটি মিষ্টকারক হলো– অ্যাডভান্টেম। এটি চিনির তুলনায় ২০ হাজার গুণ বেশি মিষ্ট। আবার চুইংগামে ব্যবহৃত জাইলিটলের মতো উপাদান চিনির মিষ্টতার সম-পর্যায়ের।
অনেক জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ কেন সুইটেনারকেই চিনির চেয়ে ভালো বিকল্প মনে করেন তার বেশকিছু কারণও আছে। যেমন চিনির ক্ষতি সম্পর্কে আমরা অনেক কিছু জানি, প্রতিদিন বেশিমাত্রায় চিনি গ্রহণে টাইপ-২ ডায়াবেটিস, হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে। তার সঙ্গে ওজন বৃদ্ধি ও দাঁতের ক্ষতির মতো আপদ তো আছেই।
এসব স্বাস্থ্যগত সমস্যার প্রেক্ষাপটে কৃত্রিম মিষ্টকারক উপাদানের পক্ষে প্রধানত তিনটি দাবি করা হয়। এগুলো হলো ওজন, ডায়াবিটিস ও দাঁতের স্বাস্থ্য সম্পর্কিত। আন্তর্জাতিক সুইটেনার অ্যাসোসিয়েশন হলো– এ ধরনের কৃত্রিম মিষ্টকারক উৎপাদনকারীদের একটি জোট। তাদের পরিচালিত একটি ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, সুইটেনার গ্রহণ 'ওজন নিয়ন্ত্রণে' অবদান রাখে (কারণ এতে কোনো ক্যালোরি নেই)। আবার ডায়াবেটিস আক্রান্তরাও এটি গ্রহণ করতে পারেন (যেহেতু তাদের দাবি হলো– এতে রক্তে সুগারের মাত্রা কোনোভাবে প্রভাবিত হয় না) এবং দাঁতের স্বাস্থ্যের জন্যও ভালো (যেহেতু এতে দাঁতের ক্ষয় বৃদ্ধি হয় না)।
সুইটেনার শিল্পের এসব দাবি বিশ্বের অধিকাংশ দেশের জনস্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ বহুলাংশে মেনেও নিয়েছে। বিশেষ করে, ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে তারা চিনির বিকল্প অবলম্বনের পরামর্শ দেয়। যেমন যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের ওয়েবসাইটে একজন ডায়েটিশিয়ানের বক্তব্য তুলা ধরা হয়েছে, যিনি সুইটেনার সম্পর্কে বলেছেন, 'ডায়াবেটিস আক্রান্ত ব্যক্তিদের পছন্দের খাদ্যগ্রহণের সময় ব্লাড সুগার লেভেল নিয়ে শঙ্কায় থাকতে হয়। তাদের জন্য কার্যকর বিকল্প এটা'।
সুইটেনার তাহলে উপকারী, সত্যিই?
নানাবিধ খাদ্যপণ্যে সুইটেনার হিসেবে বহু ধরনের কৃত্রিম উপাদানের ব্যবহার যেভাবে বাড়ছে, তাতে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে এগুলো সত্যিই তেমন গুণ সম্পর্কিত কিনা– যা এগুলোর সম্পর্কে বলা হয়। ২০২২ সালের জুলাইয়ে সুইটেনার নিয়ে ব্যাপক এক গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও বা হু)। এই গবেষণার ভিত্তিতে হু' 'নন সুগার সুইটেনার' সম্পর্কিত নতুন এক খসড়া গাইডলাইন জারি করে, যা সুইটেনার বিপুলভাবে ব্যবহারকারী কোমল পানীয় শিল্পকে উৎকণ্ঠিত করেছে।
আসলে হু'র গবেষকরা বৈজ্ঞানিক তথ্যপ্রমাণের এক ব্যাপক পুনঃপর্যালোচনা করেন, যার আওতায় মানবদেহে সুইটেনারের প্রভাব সম্পর্কিত আগের অনেক গবেষণার ফলাফলকে খতিয়ে দেখেন তারা। আর তারা যে সিদ্ধান্তে উপনীত হন- সেটা বেশ চাঞ্চল্যকর বললেও কম বলা হয়।
সুইটেনারে স্বাস্থ্য ঝুঁকি না থাকার যেসব দাবি করা হয়, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গবেষকরা তার বিপরীত বাস্তবতাই আবিষ্কার করেন এ অনুসন্ধানে। তারা জানান, বেশিমাত্রায় সুইটেনার গ্রহণের সাথে টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বৃদ্ধির সম্পর্ক রয়েছে। এর ফলে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ারও ঝুঁকি বাড়ে। একইসঙ্গে, যেসব ব্যক্তি দীর্ঘদিন ধরে সুইটেনারযুক্ত খাদ্য ও পানীয় গ্রহণ করেন দীর্ঘমেয়াদে তাদের ওজন বেড়ে যায়।
গবেষণা প্রতিবেদনে ওজন বৃদ্ধির বিষয়ে কিছু স্বল্প-মেয়াদি গবেষণার কথাও উল্লেখ করা হয়। তিন মাসব্যাপী বা তার কম সময়ে করা এসব গবেষণায় দেখা গেছে, এসময়ে যারা চিনিযুক্ত পানীয় ছেড়ে কৃত্রিমভাবে মিষ্ট করা পানীয় গ্রহণ শুরু করেছেন, তাদের ওজন কমেছে খুবই সামান্য বা মাত্র দশমিক ৭১ কেজি।
বিজ্ঞানীরা আরও দেখেন, দাঁতের স্বাস্থ্যের বিষয়েও সুইটেনারের তথাকথিত উপকারিতার জোরালো প্রমাণ নেই। । যেমন কয়েকটি গবেষণায় দেখা গেছে, স্টেভিয়া নামক একটি সুইটেনারযুক্ত খাদ্য নিয়মিত গ্রহণ করলে শিশুর দাঁতে ক্ষয় সৃষ্টি কিছুটা কমে। কিন্তু, আরেক গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব শিশু চিনিযুক্ত কোমল পানীয় বা এনার্জি ড্রিংকস পান করে, তাদের তুলনায় যারা দিনে গড়ে আড়াইশ মিলিলিটার সুইটেনারযুক্ত পানীয় গ্রহণ করছে, তারা দাঁতের ব্যথায় বেশি ভোগে।
এই ফলাফলের ভিত্তিতেই কৃত্রিম মিষ্টকারক সম্পর্কে আগের অবস্থান থেকে সরে এসেছে হু, তাদের খসড়া গাইডলাইনে বলা হয়েছে, 'ওজন কমানোর জন্য বা অসংক্রামক রোগের (যেমন ডায়াবিটিস ও হৃদরোগ) ঝুঁকি কমানোর লক্ষ্যে সুইটেনার ব্যবহার করা উচিত হবে না'।
এভাবে সুইটেনার সম্পর্কে প্রচলিত ধ্যানধারণা ভেঙে পড়েছে রাতারাতি। আগামী গ্রীষ্মে একটি গণ-আলোচনার পর খসড়া দিকনির্দেশনাটি হু'র বাইরের একটি বিশেষজ্ঞ প্যানেল পিয়ার-রিভ্যিউ করবে। এরপর সেটি চূড়ান্ত করার সময়ে কিছু পরিবর্তন আসতে পারে। ২০২৩ সালের এপ্রিলে চূড়ান্ত দিকনির্দেশনাটি প্রকাশ করা হবে।
কিন্তু, এই গবেষণার বিরোধিতা করেছে একটি ব্যবসায়িক জোট ক্যালোরি কন্ট্রোল গ্রুপ, যার সদস্য কোকোকোলা ও পেপসিকো'র মতো বড় সংস্থা। হু'র খসড়া গাইডলাইন নিয়ে তারা 'অসন্তোষ' প্রকাশ করে বলেছে, সুইটেনার 'শরীরের ওজন ও রক্তে শর্করার (ব্লাড গ্লুকোজ) মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে বলে (আগে) প্রমাণিত হয়েছে'। তবে হু'র অনুসন্ধানে শুধু এসব দাবিকেই প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়নি। রয়েছে আরও অন্যান্য স্বাস্থ্যঝুঁকির দিকও।
গবেষক যখন নিজেই 'গিনিপিগ'
কৃত্রিম মিষ্টকারক দ্রব্যের স্বাস্থ্যগত উপকার নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে সন্দেহ পোষণ করে আসছেন লন্ডনের কিংস কলেজের জেনেটিক এপিডেমিওলজির অধ্যাপক টিম স্পেকটর।
১০ বছর আগেও ডায়েট কোক পান করতেন তিনি। তারপর একদিন সুইটেনার সম্পর্কে অধ্যয়ন শুরু করেন এবং জনসংখ্যার মধ্যে বড় পরিসরে পরিচালিত গবেষণা প্রতিবেদনগুলোয় লক্ষ করেন যে, এটি মানুষের ওজন হ্রাসে খুব একটা সাহায্য করে না। সুইটেনারে ক্যালোরি কম থাকার পরও এমন ঘটনায় তিনি বিস্মিত হন, খটকাও লাগে তার।
এরপর নিজেই পরীক্ষা চালানোর সিদ্ধান্ত নেন, নিজের গবেষণায় 'গিনিপিগ' হন নিজেই। রক্তে গ্লুকোজ মাপক যন্ত্রের সাথে নিজেকে যুক্ত করে খেলেন চা ও কফিতে চিনির বিকল্প হিসেবে বহুল ব্যবহৃত 'স্প্লেনডা' নামক দ্রব্য। এতে তার ব্লাড সুগার আকস্মিকভাবে উল্লম্ফন করতে দেখলেন মনিটরে। যেন এইমাত্র তিনি চিনিই খেয়েছেন!
ওই সময়ের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, সুইটেনারে 'এমনটা হওয়ার কথা তো ছিল না'। তারপরেও হয়েছে। তবে এই পরীক্ষার ফলাফলের সমস্যা হলো– মাত্র একজন ব্যক্তির স্বাস্থ্য প্রতিক্রিয়া ব্যাপক পরিসরে পরিচালিত ও পিয়ার-রিভ্যিউ এর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়ার সমান নয়। এজন্য নিজের সহকর্মীদেরও মধ্যেও এটি পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেন। আর তাতেই ঘটে বিপত্তি। দেখা যায়, তাদের মধ্যে স্পেকটরের মতো স্বাস্থ্যগত প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে না স্প্লেনডা। অবশ্য এতে একটা উপকারও হয়, তিনি অনুসন্ধানে দেখতে পান মানবদেহে সুইটেনারের প্রভাব নিয়ে গবেষণামূলক তথ্যের যথেষ্ট অভাব রয়েছে। তবে তিনি যে ভুল কিছু অনুমান করেননি, সেটা গত বছরের ডিসেম্বরে ইসরায়েলে প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে উঠে আসে।
প্রতিবেদনটি তেল আবিবের ওয়েজম্যান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্সের অধ্যাপক ও ইমিওনোলজিস্ট এরান এলিনাভের। তার গবেষণা সেটাই প্রমাণ করেছে, যাতে ব্যর্থ হয়েছিলেন টিম স্পেকটর।
ক্ষতি যেভাবে করছে
সুইটেনারের পক্ষে শিল্পগুলোর অন্যতম দাবি, এটি পাচনতান্ত্রিকভাবে এক ধরনের জড় বা নিষ্ক্রিয় দ্রব্য। অর্থাৎ, এতে আমাদের মুখে মিষ্টতার স্বাদ যুক্ত হওয়া ছাড়া শরীরে কোনো প্রভাব পড়ে না। তবে অধ্যাপক এলিনভ ও তার ২০ জন সহকর্মী যুক্তরাজ্য, জার্মানি ও ইসরায়েলে যে গবেষণা করেন, তার ফলাফল এই দাবির ভিত্তি নিয়ে গুরুতর প্রশ্নের উদ্রেক করেছে।
গবেষণা নিবন্ধটি প্রকাশিত হয়, গুরুত্বপূর্ণ বৈজ্ঞানিক জার্নাল- 'সেল'- এ।
এই গবেষণা পূর্ণবয়স্ক ও স্বাস্থ্যবান ১২০ জন ব্যক্তির ওপর পরিচালিত হয়, যারা আগের ছয় মাসে কোনো প্রকার সুইটেনারযুক্ত খাদ্য বা পানীয় গ্রহণ করেননি। এরপর তাদের ছয়টি দলে ভাগ করে, কন্ট্রোল গ্রুপ হিসেবে নির্বাচিত দুটি দল বাদে– বাকি চার দলের জন্য আলাদা আলাদা ধরনের সুইটেনার গ্রহণ ঠিক করা হয়। দুই সপ্তাহব্যাপী গবেষণা চলাকালে দলগুলোর সদস্যরা তাদের জন্য নির্ধারিত সুইটেনারটি দিনে অন্তত দুইবার করে খান। এসময় তাদের ব্লাড সুগার লেভেল ও মলের নমুনায় মাইক্রোব বা অনুজীবের মাত্রা পরিমাপ করা হয়।
ফলাফল ছিল চমকে দেওয়া মতো। এতে দেখা যায়, অ্যাসপারটেম ও স্টেভিয়ার মতো সুইটেনার ব্লাড সুগার লেভেলে উল্লেখযোগ্য প্রভাব না ফেললেও, অন্যদুটি সুইটেনার সাকরালোজ ও স্যাচারিন গ্রহণকারী সকলের ব্লাড সুগার বেড়েছে। সাকরালোজ গ্রহণকারী দলের মধ্যে কারো কারো ব্লাড সুগারের মাত্রা অন্যদের চেয়ে তীব্রভাবে বেড়ে যায়। এতে ইঙ্গিত মেলে যে, সুইটেনারের প্রভাব ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হতে পারে।
কৃত্রিম মিষ্টকারক ব্লাড সুগারে কোনো প্রভাব ফেলে না, এতদিন ধরে জনস্বাস্থ্য খাতে প্রচলিত এই ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করছে এ গবেষণার ফলাফল। এছাড়া আরও দেখা গেছে, গবেষণায় ব্যবহৃত চারটি সুইটেনার দ্রব্যই আমাদের অন্ত্রে থাকা ব্যাকটেরিয়া বা মাইক্রোবকে বদলে দিচ্ছে। এই পরিবর্তনই ব্লাড সুগারকে উস্কে দিচ্ছে। অর্থাৎ, এটা মোটেও নিষ্ক্রিয় নয়।
বছর ৪০ ধরে মানবদেহে সুইটেনারের প্রভাব নিয়ে গবেষণা করছেন সাসেক্স বিশ্ববিদ্যালয়ের সায়েন্স পলিসি রিসার্চের অধ্যাপক এরিক মিলস্টোন। সুইটনার যে স্বাস্থ্যে প্রভাব ফেলে সেবিষয়ে তিনি টিম স্পেকটরের সাথে একমত। তিনি সেল জার্নালে প্রকাশিত এলিনাভদের গবেষণা প্রতিবেদনটিরও প্রশংসা করে বলেন, 'এটা আরও প্রমাণ করেছে যে পাচনতান্ত্রিকভাবে সুইটেনার নিষ্ক্রিয় বা অসার নয়, যেমনটা আগে অনেকেই মনে করতেন'।