শতশত বাতিঘর ঢাকায় দেখা গেল
কৃষ্ণরাও শ্রীধর আসেননি, তবে অবাক করা কয়েক শ ডাকটিকিট পাঠিয়েছেন। সবগুলোই বাতিঘর বা লাইটহাউজের। খাম-টিকিট মিলিয়ে লাইটহাউজের সংগ্রহ তার চার হাজার। ভারতের তামিলনাড়ুর বাসিন্দা শ্রীধর ম্যাঙ্গালোর (আরব সাগরপাড়ে কর্ণাটকের শিল্পশহর) রিফাইনারি অ্যান্ড পেট্রোকেমিক্যালস লিমিটেড-এর মহাব্যবস্থাপক। ছোটবেলা থেকেই তার ডাকটিকিট সংগ্রহের শখ ছিল। মাঝখানে ছাত্রাবস্থায় শখে ছেদ পড়লেও ২০০০ সালে দক্ষিণ কন্নড় ফিলাটেলিক অ্যান্ড ন্যুমিসম্যাটিক অ্যাসোসিয়েশন-এর সদস্য হয়ে নতুন উদ্যমে সংগ্রহকাজ চালিয়ে যান। অ্যাসোসিয়েশনের সতীর্থরাই তাকে প্রথম থিমেটিক (বিষয়ভিত্তিক) সংগ্রহে উৎসাহ দেন। এ প্রসঙ্গে ম্যাঙ্গালোরডটকমকে শ্রীধর বলেছেন, 'তারা (সহকর্মীরা) আমাকে তেল ও গ্যাস বিষয়ক ডাকটিকিট সংগ্রহ করার পরামর্শ দিলেন। সে মতো আমি শুরু করলাম। লাইটহাউজের পাশাপাশি তেল ও গ্যাস বিষয়ক টিকিট, খাম ইত্যাদি সংগ্রহ করেছি প্রায় তিন হাজার।'
লাইটহাউজ সংগ্রহ শুরুর গল্প বলতে গিয়ে শ্রীধর বলেন, 'সাপ্তাহিক ছুটির দিনে সুরথকাল সমুদ্রসৈকতে বেড়াতে যাই। যতবার যাই সেখানকার বাতিঘরটি আমাকে আকৃষ্ট করে। সুরথকালের বাতিঘরটিই আমাকে লাইটহাউজ সংগ্রহে উৎসাহী করেছে। গেল দুই দশকে আমি লাইটহাউজ নিয়ে চার হাজার ডাক-উপকরণ সংগ্রহ করেছি।'
২৯ সেপ্টেম্বর থেকে ২ অক্টোবর পর্যন্ত ঢাকার শিল্পকলা একাডেমিতে অনুষ্ঠিত হলো 'বাংলাদেশ ২০২৩' শীর্ষক আন্তর্জাতিক ডাকটিকিট প্রদর্শনী। এতে বাংলাদেশ, অস্ট্রেলিয়া, চীন, ওমান, কাতার, ফিজি, মালয়েশিয়া, ভারত ও নেপালসহ ১৭টি দেশের সংগ্রাহকেরা অংশ নিয়েছেন। ৪০০টি ফ্রেমে দুই হাজারেরও বেশি শীটে (পাতা) লাখখানেক স্ট্যাম্প প্রদর্শিত হয়েছে।
এর মধ্যে শ্রীধর পাঠিয়েছেন তিন শতাধিক টিকিট, মোট পাতা আশি। বাইশটি শিরোনামে তিনি টিকিটগুলো সাজিয়েছেন যার মধ্যে অনশোর (তীরবর্তী) লাইটহাউজগুলোর জন্য ৭টি এবং অফশোরের (জলভাগের মধ্যে) জন্য ৬টি পাতা বরাদ্দ। এছাড়া টাওয়ারের আকার, ভিত্তি ও গঠন উপকরণ, লণ্ঠন ঘর, লাইটহাউজ পরিচালন প্রতিষ্ঠান, বাতিঘরের বাতি, চলচ্চিত্রে ব্যবহৃত লাইটহাউজ ইত্যাদি নিয়ে আলাদা আলাদা পাতা তৈরি করা হয়েছে। বেশ কাব্যিক একটি শিরোনাম দিয়েছেন তার প্রদর্শনীর — ক্যান্ডেল অন দ্য ওয়াটার বা জল-মাঝে মোমবাতি।
ভূমিকায় শ্রীধর লিখেছেন: 'সমুদ্রে পথ হারিয়ে ফেলা বা ঝড়ের কবলে পড়া একটা নৈমিত্তিক ব্যাপার। প্রাচীনকাল থেকেই মানুষ সমুদ্রে চলাচল করে। তাই দেখা যায়, পৃথিবীর প্রথম বাতিঘরটি নির্মিত হয়েছিল খ্রিস্টপূর্ব ২৭০ অব্দে, মিসরের আলেকজান্দ্রিয়ার কাছে ফারো দ্বীপে। আলেকজান্ডারের মৃত্যুর কিছুকাল পরে প্রথম টলেমি এর নির্মাণকাজ শুরু করেছিলেন আর শেষ করেছিলেন দ্বিতীয় টলেমি। ১৯৭৭ সালে আলেকজান্ডারের ২,৩০০ তম জন্মবার্ষিকীতে গ্রিস এ নিয়ে স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশ করে।'
শ্রীধর আরও জানাচ্ছেন, বাতিঘরের প্রাথমিক উদ্দেশ্য নাবিককে পথ দেখানো। সাধারণত উঁচু এ স্থাপনার শীর্ষে থাকে বাতি। ২,০০০ বছরের ইতিহাসে বাতিঘরের গঠনে পরিবর্তন খুব বেশি আসেনি, সে সঙ্গে এর আকর্ষণ এবং প্রয়োজনীয়তাও ফুরোয়নি। 'জল-মাঝে মোমবাতি' শীর্ষক এ প্রদর্শনীতে বাতিঘরের কার্যক্রম, বাতির প্রাযুক্তিক বিবর্তন, স্থানভেদে এগুলোর গড়নের ভিন্নতা প্রদর্শনের চেষ্টা করা হয়েছে।
যাত্রীবাহী জাহাজ এসএস স্টেলা'র সাগরে নিমজ্জিত হওয়ার স্মারক ডাকটিকিট দিয়ে খাতা খুলেছেন শ্রীধর। দৃশ্যটির দিগন্তে এক বাতিঘর দাঁড়িয়ে। ইউনিভার্সাল পোস্টাল ইউনিয়নের ১২৫তম বার্ষিকী উপলক্ষে এটি প্রকাশিত হয়। ১৮৯০ সালে গ্লাসগোতে নির্মিত হয়েছিল স্টেলা। সাউদাম্পটন থেকে ইংলিশ চ্যানেল দ্বীপপুঞ্জের মধ্যে যাতায়াত করত জাহাজটি। ১৮৯৯ সালে ডুবে থাকা গুচ্ছ শিলার সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে ডুবে যায় জাহাজটি।
পরের পাতায় ফারো দ্বীপের প্রথম বাতিঘরটির সঙ্গে আছে একটি রোমান লাইটহাউজ, যার নাম টাওয়ার অভ হারকিউলিস। উত্তর-পশ্চিম স্পেনে অবস্থিত এ বাতিঘরটি।
মধ্যযুগে সমুদ্রপথে যাতায়াত বৃদ্ধি পাওয়ায় বাতিঘরও নির্মিত হয় অধিক পরিমাণে। ১৫৮৪ থেকে ১৬১১ সালের মধ্যে যেমন ফ্রান্সে নির্মিত হয় ট্যুর ডি করডুয়ান নামক বাতিঘরটি। এর নকশাকার ছিলেন প্যারিসের স্থপতি লুই ডি ফয়। রোমান সমাধি, প্রাসাদ, ক্যাথেড্রাল ও দুর্গ থেকে প্রেরণা নিয়ে গড়ে ওঠা এ বাতিঘর রেনেসাঁ আমলের এক অনন্য নিদর্শন। এর উচ্চতা ২২১ ফুট। পরের স্ট্যাম্পটি ফকল্যান্ড দ্বীপের একটি বাতিঘরের। টু সিস্টার্স পাহাড়ের ওপর এটি তৈরি হয়েছিল ১৮৫৫ সালে। এরপর আছে এস্তোনিয়া ও লাটভিয়ার দুটি এবং আর্জেন্টিনার একটি বাতিঘরের স্ট্যাম্প। শ্রীধর এখানে জানিয়েছেন, অঞ্চলভেদে বাতিঘরকে বিভিন্ন নামে ডাকা হয়। যেমন, এস্তোনিয়ায় টুলেটর্ন, লাটভিয়াতে বাকা এবং আর্জেন্টিনায় ফ্যারো।
পরের পুরো পাতাজুড়ে শ্রীধর শ্রদ্ধা জানিয়েছেন এক লাইটহাউজ স্থপতি জর্জ জি. মিয়াদেকে। তিনি ছিলেন মার্কিন সেনাবাহিনীর একজন সেনাপতি এবং সিভিল ইঞ্জিনিয়ার, যুক্ত ছিলেন বেশ কয়েকটি বাতিঘর নির্মাণের সঙ্গে। আমেরিকার গৃহযুদ্ধকালে গেটিসবার্গে তার বাহিনী কনফেডারেটদের পরাজিত করেছিল যার ফলে যুদ্ধের মোড় ঘুরে যায়। যুক্তরাষ্ট্রের ডাকবিভাগের মিয়াদেকে স্মরণ করে প্রকাশিত খাম শ্রীধরের সংগ্রহে রয়েছে।
স্থপতি বিভাগে শ্রীধর ঠাঁই দিয়েছেন রোমান সম্রাট ক্লদিয়াসকেও। কারণ তিনি প্রথম শতকের দ্বিতীয়ার্ধে নির্মাণ করিয়েছিলেন ডোভার উপকূলে ইংল্যান্ডের প্রথম বাতিঘর। ১৯৯৩ সালে প্রকাশিত এ স্মারক ডাকটিকিটের মূল্য ২৪ পেন্স। ক্লদিয়াসের পরে আছেন জার্মান প্রকৌশলী ও বন্দরনির্মাতা কার্ল ফ্রিডরিখ হ্যাংকে। রটার স্যান্ড লাইটহাউজের প্রস্তাবক ছিলেন তিনি যা এখন জার্মানির একটি ঐতিহাসিক স্থাপনা।
লাইটহাউজ পরিচালনা প্রতিষ্ঠানকেও আমলে এনেছেন শ্রীধর। তিনি জানাচ্ছেন, গ্রেট ব্রিটেনের লাইটহাউজ কর্তৃপক্ষের নাম দ্য ট্রিনিটি হাউজ। ইংল্যান্ড, ওয়েলশ, ইংলিশ চ্যানেল দ্বীপপুঞ্জ এবং জিব্রাল্টারের বাতিঘরগুলো পরিচালনা করে ওই প্রতিষ্ঠান। সবমিলিয়ে মোট বাতিঘরের সংখ্যা ৬৫। আমেরিকার পরিচালনা প্রতিষ্ঠানটির নাম দ্য ইউএস লাইটহাউজ সার্ভিস। আগে নাম ছিল ইউএস লাইটহাউজ বোর্ড। বাতিঘর ও হালকা নৌযান রক্ষণাবেক্ষণ ও সম্প্রসারণের দায়িত্ব পালন করে এটি। এর ২০০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ১৯৮৯ সালে প্রকাশিত খাম ও টিকিট সংগ্রহ করেছেন শ্রীধর।
দ্য ডিরেকটরেট অভ লাইটহাউজেস অ্যান্ড লাইটশিপস হচ্ছে ভারতের বাতিঘর পরিচালনা প্রতিষ্ঠান। গান্ধিধাম, জামনগর, মুম্বাই, গোয়া, কোচিন, চেন্নাই, বিশাখাপত্তনম, কোলকাতা ও পোর্ট ব্লেয়ারে প্রতিষ্ঠানটির আঞ্চলিক হেডকোয়ার্টার আছে। ২০১২ সালের ২৩ ডিসেম্বর প্রকাশিত লাইটহাউজেস অভ ইন্ডিয়া নামক ফার্স্ট ডে কভার (প্রকাশের প্রথমদিনে ডাকটিকিটযুক্ত খাম ) আছে শ্রীধরের প্রদর্শনীতে।
অনশোর বা সাগরতীরের বাতিঘর বিভাগে শ্রীধর প্রথমে ঠাঁই দিয়েছেন নিউ জার্সির স্যান্ডি হুক লাইটহাউজকে। ১৭৬৪ সালে নির্মিত এ বাতিঘরটি আমেরিকার সবচেয়ে বেশি বয়সি বাতিঘর। ১৯৭৮ সালে বাতিঘরটি নিয়ে প্রকাশিত হয় ২৯ সেন্ট মূল্যের ডাকটিকিট যার গায়ে লেখা আছে: নিঃসঙ্গ আলোকবর্তিকা-সাগরযাত্রায় সহায়। তালিকায় আরও আছে নিউজিল্যান্ডের মোয়েরাকি লাইটহাউজ, পোল্যান্ডের হেল লাইটহাউজ, জার্মানির কেপ আরকোনা যেটি জার্মানির বাল্টিক উপকূলের সবচেয়ে বিপজ্জনক জায়গায় অবস্থিত।
শ্রীধর লিখছেন, অনশোর বাতিঘরগুলো মূলত পাহাড়ের ওপর, বাঁধের ওপর, উপসাগরের প্রবেশমুখে এবং দ্বীপের উঁচু স্থানে নির্মিত হয়। ইউরোপা পয়েন্ট লাইটহাউজটি যেমন জিব্রাল্টারের দক্ষিণ অংশের সবচেয়ে উঁচু জায়গায় যার পূর্বদিকে ভূমধ্যসাগর, উত্তর-পশ্চিমে জিব্রাল্টার প্রণালী এবং দক্ষিণ-পশ্চিমে আটলান্টিক মহাসাগর। আবার নিউজিল্যান্ডের কেপ এগমন্ট লাইটহাউজটি এগমন্ট পাহাড়ের মাথায়, যুক্তরাষ্ট্রের পয়েন্ট লামা লাইটহাউজ অবস্থিত সান দিয়াগো উপসাগরের প্রবেশমুখে। শ্রীলঙ্কার সবচেয়ে পুরোনো লাইটহাউজ গল অবস্থিত প্রাচীন এক দুর্গের ভেতর। শ্রীধরের সংগ্রহের অফশোর বা জলভাগের লাইটহাউজগুলোর মধ্যে আছে বারমুডার হগ ফিশ বিকন ও নর্থ রক লাইটহাউজ, জার্মানির নিউরেক লাইটহাউজ (১৩০০ থেকে ১৩১০ সালের মধ্যে ওয়াচটাওয়ার হিসেবে নির্মিত), ব্রাজিলের সেন্ট পিটার ও সেন্ট পল রকস লাইটহাউজ ইত্যাদি।
শ্রীধরের সংগ্রহের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিভাগের নাম টাওয়ার বা বুরুজ: ভিত্তি, গড়ন ও উপকরণ। তিনি লিখেছেন, অনেক রকমের হয় লাইটহাউজ, যেমন লম্বা, বেঁটে, বর্গাকার, কোণাকৃতির বা চোঙাকৃতির। কোনোটাকে আবার দেখায় কঙ্কালের মতো। আধুনিককালের বাতিঘরগুলো লম্বা হয়ে থাকে বেশি আর স্থাপত্যশৈলীতেও হয় নজরকাড়া। শ্রীধরের মতে, গ্রিসের রোডস দ্বীপের দ্য কলোসাস অভ রোডস ইতিহাসের সবচেয়ে অদ্ভুত বাতিঘর। দুটি স্তম্ভের ওপর দুই পা রেখে দাঁড়ানো গ্রিক টাইটান গড হেলিওসের মাথায় আলো রেখে এ লাইটহাউজ নির্মিত।
তিনি আরও লিখেছেন, আধুনিক বাতিঘরগুলোর তিনটি অংশ থাকে — প্রশস্ত ভিত্তিমূল, বুরুজ এবং স্বচ্ছ খাঁচার ভেতরে বাতি। ভিত্তিমূল হয় বর্গাকার, ছয় অথবা অষ্ট কোণাকৃতির। বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে গঠিত লাইটহাউজ আছে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে। পাথরের তৈরি, ইটের তৈরি লাইটহাউজের সঙ্গে লোহার এবং কাঠের তৈরি লাইটহাউজেরও দেখা মেলে। যেগুলোকে ঢেউয়ের প্রবল ধাক্কা সইতে হয় সেগুলোর প্রায় সবগুলোই পাথরের তৈরি। বারান্দাযুক্ত লাইটহাউজের কথাও বলেছেন শ্রীধর। বারমুডার সেন্ট ডেভিড লাইটহাউজ এবং উরুগুয়ের পোলোনিও লাইটহাউজের মতো অনেক লাইটহাউজে দুটি বারান্দারও দেখা মেলে।
বাতিঘরের বাতি নিয়েও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ডাকটিকিট শ্রীধরের সংগ্রহে আছে । তার বর্ণনা থেকে জানা যাচ্ছে, ১৭ শতক পর্যন্ত বাতি রাখার জায়গা খোলাই থাকত আর সেখানে জ্বলত আগুন। কয়লা বা তেল ছিল আগুন জ্বালানোর মাধ্যম। কাচঘেরা জায়গায় বাতি রাখার প্রচলন হয় অষ্টাদশ শতকে। বাতিঘরের বাতিতে পরিবর্তন নিয়ে আসেন ফরাসি পদার্থবিদ অগস্ত জঁ ফ্রেসনেল। ১৮২০ সালে তিনি ফ্রেসনেল লেন্স (কম্পোজিট কমপ্যাক্ট লেন্স) আবিস্কার করেন যেটি ১৮২৩ সালে প্রথম ব্যবহৃত হয় করডুয়ান লাইটহাউজে। হাওয়াই পোস্ট তার স্মরণে ২০০২ সালের অক্টোবরের ২১ তারিখে ফার্স্ট ডে কভার প্রকাশ করে। গ্যাস দিয়ে বাতি জ্বালানোর উপায় আবিস্কৃত হয় ১৮৬৫ সালে বেইলি লাইটহাউজে। আইসল্যান্ডের ভাডারনেস লাইটহাউজে গ্যাসবাতির পাশাপাশি বৈদ্যুতিক বাতির ব্যবহার শুরু হয় । ১৯৮১ সালে সৌরশক্তি দিয়ে চালিত প্রথম বাতিঘরটি হলো কানাডার ফলস ডাক লাইটহাউজ।
শ্রীধরের প্রদর্শনীর শেষদিকের একটি বিভাগ স্মৃতিস্তম্ভ বা জাদুঘর। মধ্যযুগের এবং তার পরেরও অনেক বাতিঘর এখন আর সচল নেই। সেগুলো স্মৃতিস্তম্ভ বা জাদুঘর হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। ডমিনিকান রিপাবলিকের কলম্বাস লাইটহাউজ তার একটি। ওয়াশিংটনের অ্যাডমিরালটি হেড লাইটহাউজ এখন তত্ত্বাবধান করে ওয়াশিংটন পার্কস ও রিক্রিয়েশন ডিপার্টমেন্ট।
পরের বিভাগটির নাম চলচ্চিত্রে বাতিঘর। শ্রীধর জানাচ্ছেন, যুক্তরাষ্ট্রের পোর্টল্যান্ড হেড লাইটহাউজ প্রদর্শিত হয়েছে স্নো ফলিং অন সিডারস (১৯৯৯) চলচ্চিত্রে। টাইটানিক (১৯৯৭) চলচ্চিত্র মনে করিয়ে দেয় কানাডার কেপ রেস লাইটহাউজের কথা, সেখানেই প্রথম ওয়্যারলেস রেডিও মারফত পৌঁছেছিল যাত্রীদের হাহাকার। অস্ট্রেলিয়ার রটনেস্ট আইল্যান্ড লাইটহাউজ প্রদর্শিত হয়েছে আন্ডার দ্য লাইটহাউজ ডান্সিং (১৯৯৭) ছবিতে। ১৯৮৩ সালে টিন ক্যান মেইল সার্ভিস প্রকাশিত একটি স্মারক খামের শোভা বাড়িয়েছে ওই লাইটহাউজ । ১৮৮২ সালে জনৈক উইলিয়াম ট্র্যাভার্স জাহাজে করে বিস্কুটের টিন পাঠানোর সেবা চালু করেছিলেন, খামটি তারই স্মারক।
শেষ বিভাগটির নাম সংরক্ষণ। মূলত সাগরতীরের ক্ষয় বৃদ্ধি পাওয়ায় অনেক লাইটহাউজই আজ হুমকির মুখে। তাই শ্রীধর এগুলোকে সরিয়ে নিয়ে নির্দিষ্ট স্থানে সংরক্ষণের কথা বলেছেন। উদাহরণ হিসাবে শ্রীধর নর্থ ক্যারোলাইনার কেপ হাটেরাস লাইটহাউজের কথা বলছেন। এটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে দেড় হাজার ফুট উঁচুতে নির্মিত হয়েছিল, কিন্তু দিনে দিনে তলার বালি সরে গিয়ে এটি এখন দাঁড়িয়ে আছে মোটে ১২০ ফুট উঁচুতে। শেষে শ্রীধর বলছেন, 'পৃথিবীর বাতিঘরগুলো নিরাপত্তা ও রোমাঞ্চের প্রতিরূপ। বিভিন্ন স্থানে গড়ন, ধরন, আকার-আকৃতির বিভিন্নতা সত্ত্বেও বাতিঘর শিহরণ যোগান দেবে যুগে যুগে।'