গুলশানে এক্সপ্রেস শপ ‘ল্যাভেন্ডার’, শীঘ্রই পাওয়া যাবে ২৪/৭ সেবা
ধরুন, সারাদিন অফিস শেষে আপনি ক্লান্ত। অথচ বাসায় গিয়ে রান্না চড়াতে হবে। এদিকে বড় পরিসরে রান্না করার ইচ্ছে কিংবা এনার্জি কোনটিই নেই আপনার। কী করবেন তখন? অথবা রাত জেগে কাজ করতে করতে বা খেলা দেখতে দেখতে হঠাৎ ক্ষুধা পেয়েছে অনেক। সেই ক্ষুধা মেটানোর জন্যই বা কী আয়োজন করবেন? তাৎক্ষণিক সমাধান হিসেবে তখন আপনার দরকার হবে 'রেডি টু কুক মিল' অথবা কিছু স্নাক্সের। কিন্তু হাতের কাছে চাওয়ামাত্রই যেমন সব পাওয়া যায় না, মাঝরাতেও খাবার মেলে না অনেক জায়গায়। ইনস্ট্যান্ট খাবার ও অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য নিয়ে কর্মব্যস্ত মানুষের এসব বিড়ম্বনার সমাধান হিসেবেই গুলশানে যাত্রা শুরু করেছে একটি এক্সপ্রেস শপ। নাম 'ল্যাভেন্ডার এক্সপ্রেস'।
এক্সপ্রেস শপকে বলা যায় মুদি দোকানের পশ্চিমা সংস্করণ। এগুলো এমন ধরনের দোকান, যেখানে বড় পরিসরে পণ্য বিক্রি না করে বরং মানুষের দৈনন্দিন প্রয়োজন বুঝে অল্প পরিমাণে পণ্য বিক্রি করা হয়। যার বড় উদাহরণ বিশ্বের প্রায় ১৯টি দেশে কাজ করা সেভেন-ইলেভেন স্টোর। মূলত ইউরোপীয় এই আইডিয়া নিয়েই কার্যক্রম শুরু করেছে ল্যাভেন্ডার এক্সপ্রেস, যা বাংলাদেশে প্রথম। গুলশান ১১১ নম্বর রোডের এলিগ্যান্ট স্কোয়ারে গত বছরের শেষদিকে শুরু হয় দোকানটির কার্যক্রম, যা ইতোমধ্যেই পেয়েছে জনপ্রিয়তা। গুলশানের মত অভিজাত এলাকায়, যেখানে মুদি দোকান খোলা পাওয়া যায় না সবসময়, সেখানেই রাত-দিন যেকোনো সময় মুদিপণ্য মিলবে ল্যাভেন্ডার এক্সপ্রেসে।
ল্যাভেন্ডারের ব্রান্ড ও মার্কেটিং ম্যানেজার আব্দুল মতিন তারেক জানান, চলতিপথে কিংবা কর্মব্যস্ততার ফাঁকে অল্প সময়ে মধ্যে দিনের কাঙ্ক্ষিত পণ্যটি যাতে কিনতে পারেন একজন ক্রেতা, সেটি নিশ্চিত করাই এই এক্সপ্রেস শপের লক্ষ্য। তিনি বলেন, "সারাদিন কর্মব্যস্ততা শেষে বাসায় যাওয়ার পথে আপনি দোকানে দাঁড়ালেন, কোনো একটি ফুড আইটেম পিক করলেন, বাসায় গিয়ে দু'তিন মিনিটে এই প্রসেসড ফুডগুলো রেডি হয়ে যাবে। ছোট ছোট আইটেম, যা ইনস্ট্যান্ট দরকার, সাথে সাথে এখানে পাওয়া যাবে।"
গুলশান-১ থেকে অনতিদূরে অবস্থিত দোকানটিতে গিয়ে দেখা গেলো, আয়তনে ছোট হলেও দোকানটি সজ্জিত মনোরম সাজে। দোকানের বাইরের দিকটিতে ক্রেতাদের বসার জন্য রয়েছে একটি সিটিং জোন। ভেতরে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের পাশাপাশি আছে ইনস্ট্যান্ট খাবার তৈরির ব্যবস্থা। তাতে পাওয়া যায় নানা ধরনের ফাস্টফুড ও হরেক রকমের জুস আইটেম। চিকেন ও বিফ সসেজ, বিফ মিটবল, চিকেন নাগেটস ও নুডুলস যেমন পাওয়া যায়, তেমনি পাওয়া যায় সিঙ্গাড়া, সমুচা বা চিকেন রোলের মতো খাবার। জুস স্লাশার, সফট ড্রিংস কর্নার ছাড়াও আছে আইসক্রিম মেকার। ক্রেতা চাইলে দোকানে বসে খেতে পারবেন, অথবা নিয়ে যেতে পারবেন এসব খাবার। ফলে চলতি পথে ভোজন রসিক পথিকের প্রিয় জায়গা হয়ে উঠছে 'ল্যাভেন্ডার এক্সপ্রেস'।
আব্দুল মতিন তারেক জানালেন, তাদের রয়েছে বেশ কয়েক ধরনের হট ও কোল্ড ব্রেভারেজ, ড্রিংস, ডেইরি আইটেম, বেকারি ও প্রায় সবধরনের মুদি পণ্য। তবে সেগুলো সুপার শপের মত পরিমাণে বেশি নয়। তাদের কাছে প্রাধান্য পায় ছোট ছোট নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস। বললেন, "আমাদের চিলার আছে, রেডি তো কুক খাবার আমরা দিয়ে থাকি। আইসক্রিম, ফ্রোজেন আইটেম, মানুষ জুস খেতে পছন্দ করে, সেসব রয়েছে। স্টেশনারি আইটেম আছে, আশেপাশে যেহেতু স্কুল, অনেকগুলো অফিস। এর বাইরে ভ্যারাটিস ধরনের ছোট ছোট আইটেম, কিছু দুগ্ধজাত খাবার, বাচ্চাদের জন্য চকলেট, আইসক্রিম এসবের একটা ব্যবস্থা করেছি। বাইরের দেশের এক্সপ্রেস শপগুলোর যে ফ্লেভারটা, সেটিই আমরা এখানে আনার চেষ্টা করেছি।"
লবণ থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের বাদাম, প্রায় সব ধরনের মুদি পণ্যের দেখা মেলে সারি সারি সাজানো তাকগুলোতে। কোনো সারিতে রয়েছে হরেক রকমের বিস্কুট, ফলফলাদি, ডেইরি প্রডাক্ট, কোনোটিতে দেশি-বিদেশি নানান ব্রেভারেজ। একপাশে রয়েছে তেল, মশলা, ঘি সহ রান্নার যাবতীয় সামগ্রী, অন্যপাশে কসমেটিকস প্রডাক্ট। অভিজাত এলাকায় একটি সমৃদ্ধ মুদি দোকানে যা থাকা দরকার, সবই রয়েছে এই এক্সপ্রেস শপে।
এসব পণ্য সংগ্রহ ও মান নিয়ন্ত্রণেও ল্যাভেন্ডার অত্যন্ত সতর্ক বলে জানালেন আব্দুল মতিন তিনি। ল্যাভেন্ডারের বেশিরভাগ পণ্যই সংগ্রহ করা হয় সুনামধন্য সব বিদেশি রপ্তানিকারকদের থেকে। "আমাদের সব প্রডাক্টই অথেনটিক অথোরিটির। রেস্টুরেন্ট আইটেমগুলো অবশ্য নিজেদের। সকল পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণে আমরা স্ট্রিক্ট। গুলশান খুব সেনসেটিভ জায়গা তো, এখানে হুটহাট করে কোনো কিছু করা সম্ভব নয়," বললেন তারেক।
ল্যাভেন্ডার এক্সপ্রেস শপের ম্যানেজার হিসেবে কাজ করছেন কে এম দিদারুল ইসলাম। তিনি ছাড়াও মোট ১৫ জন কর্মী দুই সিফটে ভাগ কাজ করেন তুলনামূলক ছোট এই দোকানটিতে। দিদারুল জানালেন, মাত্র ৬০০ স্কোয়ার ফিটের দোকান ইতোমধ্যে বেশ সাড়া ফেলেছে স্থানীয় মানুষের মধ্যে। আপাতত সকাল ৯ টা থেকে রাত ১ টা পর্যন্ত খোলা থাকে দোকান। মানুষ অভ্যস্ত হয়ে উঠলে কার্যক্রম চলবে সারারাত।
গুলশান-১ এ একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে কাজ করেন নিতেশ ধর। ল্যাভেন্ডার এক্সপ্রেস শপে এসেছেন প্যাকেটজাত দুধ কিনতে। জানালেন, এই দোকানটি থেকেই নিত্য প্রয়োজনীয় অনেক কিছু কিনে থাকেন তিনি। "যাওয়া আসার পথে এখানে কেনাকাটা করি। আমার বাসা কাছেই, ছোটখাটো টুকটাক জিনিস কিনতে এখানে আসি। অনেক রাত অবধি খোলা থাকে, এটি আরেক সুবিধা।"
এই এক্সপ্রেস শপটি ছাড়াও ল্যাভেন্ডারের রয়েছে একাধিক সুপার শপ। সুপার শপ ছেড়ে এই এক্সপ্রেস শপ চালু করার আইডিয়া কীভাবে এলো? প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা টি.ডি. পাকির জানালেন, মূলত ইউরোপীয় বিভিন্ন এক্সপ্রেস শপের ধারণা থেকেই গুলশানে তিনি এটি করেছেন। বললেন, "প্রতিদিনের খাবার, ছোট ছোট নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস যাতে মানুষ সহজে পেতে পারে, সেই লক্ষ্যেই আমরা এটি করেছি। তবে বাংলাদেশে এই ধারণা একদমই নতুন।"
তা অনেক ব্যয়বহুল এই প্রজেক্টটি মানুষ গ্রহণ করেছে কি? আব্দুল মতিন তারেক এর মতে, গুলশানের জীবনযাত্রা তুলনামূলক ব্যয়বহুল বলেই এখানে এমন প্রজেক্ট করা। কার্যক্রমের সফলতা নিয়ে বললেন, "মানুষকে তো আগে অভ্যস্ত হতে হবে। আমাদের এখানে এসে যদি বলে ২০ কেজি চাল দেন, এখন আমরা তো চালের বস্তা রাখি না। যেহেতু নতুন কনসেপ্ট, বাংলাদেশে আমরাই ফার্স্ট তৈরি করলাম, এখন তিন চারমাসে তো সফল হয়েছি কিনা বলা কঠিন। আমরা একটা অ্যানালাইসিস করছি যে অভ্যস্ত হতেই অন্তত ৬ মাস সময় লাগবে। তবে ইতোমধ্যে আমরা ওপরের দিকে উঠছি, সফলতা দেখা দিচ্ছে।"
সিইও টি.ডি. পাকিরও জানালেন একই কথা। বললেন, "৩ মাসের মধ্যে আমরা করে দেখিয়েছি। ছোট জায়গা, কম মানুষ দরকার হয় ম্যানেজ করতে। এই ধরনের শপই বাংলাদেশের জন্য আইডিয়াল ফর্ম্যাট।"
এটি পুরোপুরি সফল হলে আস্তে আস্তে ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য স্থানেও এক্সপ্রেস শপের শাখা করার কথা জানালেন তিনি। "আমরা এটিকে ফ্রাঞ্চাইজ করবো। গুলশান যেহেতু ব্যয়বহুল, তাই ডেকোরেশন বেশি, খরচও বেশি হয়েছে। আমরা উত্তরা, বনানী, ধানমন্ডি করবো, মগবাজার কিংবা অন্যান্য জায়গায় এটা করবো। তখন খরচ কমে আসবে।"
ল্যাভেন্ডার এক্সপ্রেস শপটির মূল লক্ষ্য মানুষকে ২৪/৭, অর্থাৎ দিন রাত ২৪ ঘণ্টা সেবা দেওয়া। সকল দোকান বন্ধ থাকলেও খোলা পাওয়া যাবে ল্যাভেন্ডার, ক্রেতাদের কাছে এমনই ভরসার নাম হয়ে উঠতে চায় ল্যাভেন্ডার। কিন্তু মানুষ এখনও অভ্যস্ত নয় বলে আপাতত দোকানটি খোলা রাখা হচ্ছে রাত ১টা পর্যন্ত। তবে খুব শীঘ্রই ২৪/৭ সার্ভিস শুরু করতে পারবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত ল্যাভেন্ডার এক্সপ্রেস শপের ম্যানেজার কে এম দিদারুল ইসলাম।