অভিজাত হোটেলে বদলে গেছে যশোরের চিত্র
১৯৯৫ সালে যশোর শহরের গাড়িখানা সড়কে ৯ শতক জমির উপর গড়ে উঠে ৬তলা বিশিষ্ট ম্যাগপাই আবাসিক হোটেল। তৎকালীন সময়ে ৪০ রুমের হোটেলটি ছিল এ অঞ্চলের সর্বাধুনিক হোটেল। কিন্তু বড় বিনিয়োগের কারণে সেই ম্যাগপাই হোটেলই এখন ব্যবসা হারাতে বসেছে।
তবে পদ্মা সেতু চালু ও অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপিত হলে যশোরের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি বাড়বে। একই সঙ্গে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যশোরে আবাসিক হোটেলখাতে বিনিয়োগ বেড়েছে। গত ২ বছরের ব্যবধানে এখানে গড়ে উঠেছে অভিজাত দু’টি আবাসিক হোটেল। যেখানে আধুনিক সব সুযোগ সুবিধা বিদ্যমান। হোটেল দু’টি হলো- জাবের হোটেল ইন্টারন্যাশনাল ও হোটেল ওরিয়ন।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, খুলনা বিভাগের মধ্যস্থল হিসেবে যশোর জেলা পরিচিত। এখানে রয়েছে বিমানবন্দর, দেশের সর্ববৃহৎ স্থলবন্দর বেনাপোল, নওয়াপাড়া নৌ-বন্দর, পাশ^বর্তী মোংলা সুমদ্রবন্দর ও ভোমরা স্থলবন্দর। আছে ট্রেন যোগাযোগেরও ব্যবস্থা। যশোর থেকে ১৮টি রুটে চলে পরিবহন। এছাড়া যশোর বিমানবন্দর ব্যবহার করছে খুলনা, মাগুরা, ঝিনাইদহ ও কুষ্টিয়ার ব্যবসায়ী, সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা।
অথচ এতদিন জেলাটিতে ভালোমানের আবাসিক হোটেল না থাকায় সভা-সেমিনার খুলনাতে হতো। কিন্তু সেই চিত্র বদলে গেছে। উন্নতমানের আবাসিক হোটেল শহরের চেহারা পাল্টে দিয়েছে। ইতিমধ্যে জাবের হোটেল ইন্টারন্যাশনাল পুরোদমে তাদের কার্যক্রম চালু করেছে। আর হোটেল ওরিয়নও চালুর অপেক্ষায়।
শহরে বর্তমানে ৫টি আবাসিক হোটেল রয়েছে। ম্যাগপাই হোটেলটি সেকেলে হওয়ায় ব্যবসা হারিয়েছে। অন্য হোটেলগুলো হলো- জাবের হোটেল ইন্টারন্যাশনাল, হোটেল ওরিয়ন, হোটেল হাসান ইন্টারন্যাশনাল ও হোটেল সিটি প্লাজা।
হোটেল সিটি প্লাজা ইন্টারন্যাশনালের স্বত্ত্বাধিকারী এস এম ইয়াকুব আলী বলেন, ২০১৪ সালে ৪২ শতক জমির উপর হোটেলটি গড়ে তুলি। এখানে রয়েছে ৫০টি আধুনিক মানের রুম। এছাড়া নিজস্ব রেস্টুরেন্টসহ সব ধরনের সুবিধা এখানে রাখা হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘‘পদ্মা সেতু চালু এবং অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপিত হলে যশোরে হোটেল ব্যবসার পরিধি বাড়বে। কেননা খুলনা বিভাগের মধ্যস্থল হওয়ায় যশোরে সরকারি-বেসরকারি উচ্চ পর্যায়ের লোকজন এখানে যাতায়াত করে থাকে।’’
শহরের মাইকপট্টিতে অবস্থিত হোটেল হাসান ইন্টারন্যাশনালের পরিচালক মিজানুর রহমান জানান, ১০ কাটা জমির উপর ২০০৩ সালে হোটেলটি গড়ে তোলা হয়েছিল। তখন আমাদের হোটেলটি ছিল সর্বাধুনিক। এখানে রয়েছে ৬২টি রুম। সভাকক্ষ ও রেস্টুরেন্টের সুবিধাও আছে। ভাড়া রুমভেদে ১২শ’ টাকা থেকে সবোর্চ্চ ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। এখনও আমাদের হোটেল ভালোভাবে চলছে।
জাবের হোটেল ইন্টারন্যাশনাল খুলনা বিভাগের একমাত্র পাঁচ তারকা মানের ও সুবিধার হোটেল দাবি করে প্রতিষ্ঠানটির জেনারেল ম্যানেজার রাকেশ কুনার জানান, ১৬ তলা বিশিষ্ট হোটেলটিতে ৯৬টি আধুনিক রুম রয়েছে। যার ভাড়া ৫ হাজার টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৯ টাকা পর্যন্ত। এখানে আগতদের জন্য রয়েছে সুইমিংপুল, সকালের নাশতা, বার, রুফটপ, স্প্যা ও বারবিকিউ রেস্টুরেন্ট। রয়েছে সর্বাধুনিক ফায়ার সিকিউরিটি সিস্টেম। খাবারের মান ভালো হবার কারণে আন্তজার্তিক পুরস্কার পেয়েছে হোটেলটি।
জাবের হোটেলের স্বত্ত্বাধিকারী যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহিন চাকলাদার বলেন, যশোরে বিমানবন্দর, বেনাপোল স্থলবন্দর, ট্রেন যোগাযোগ থাকা সত্ত্বেও কোনো ভালোমানের হোটেল ছিল না।
‘‘যশোরের বাসিন্দা হিসেবে মানুষের কর্মসংস্থানের কথা বিবেচনা করে পাঁচ তারকা মানের হোটেল নির্মাণ করেছি। ২৪ শতক জমির ওপর গড়ে তোলা এই হোটেল নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৩০ কোটি টাকা। এখন সরকারি-বেসরকারি সভা ও সেমিনার এই হোটেলে অনুষ্ঠিত হচ্ছে।’’ যোগ করেন তিনি।
শাহিন চাকলাদার আরও বলেন, খুলনা বিভাগে বিভিন্ন কাজে আসা বিদেশিরা থাকছেন এখানে। বিশেষ করে আমেরিকা, ভারত, নেদারল্যান্ডস ও জাপানিরা এখানে বেশি থাকেন। পদ্মাসেতু নির্মাণ শেষ হলে যশোরে হোটেলের চাহিদা আরও বাড়বে।
হোটেল ওরিয়নের স্বত্ত্বাধিকারী ও যশোর চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সহ সভাপতি সাজ্জাদুর রহমান সুজা জানান, সাড়ে ৪ বিঘা জমির উপর পাঁচ তারকামানের আবাসিক হোটেল গড়ে তুলেছি। এখানে ৪০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে। ১৫ তলা ভবনের হোটেলটিতে রয়েছে ১২১টি রুম। যার মধ্যে ৩০টি ডাবল রুম ও ৩০টি কাপল রুম। এখানে রয়েছে ৫টি সভাকক্ষ, ৩টি রেস্টুরেন্ট, সুইমিং পুল, হেল্থ ক্লাব, স্প্যা, একশ গাড়ি পাকিংয়ের জায়গা, ফায়ার স্টেশন ও লন্ড্রির ব্যবস্থা।
তিনি বলেন, ‘‘যশোর তৃতীয় বাণিজ্যিক রাজধানী হওয়ার উপযুক্ত। এখানে সব ধরনের সুযোগ সুবিধা বিদ্যমান। শুধু সরকারের স্বদিচ্ছা থাকলেই যশোর দেশের অর্থনীতিতে বড় ধরনের অবদান রাখতে পারবে। তখন হোটেলের চাহিদা আরও বাড়বে।’’
এ ব্যাপারে যশোর চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সভাপতি মিজানুর রহমান খান জানান, জেলাটিতে গত ২০ বছরেও তেমন কোনো বেসরকারি বিনিয়োগ গড়ে উঠেনি। দু’টি পাঁচতারকা মানের হোটেল নির্মিত হওয়ায় সেই মন্দা অনেকটা কেটেছে। কেননা এখানে বিমানবন্দর, স্থলবন্দর ও নৌ-বন্দর থাকায় শিল্প উদ্যোক্তা ও সরকারি উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা যাতায়াত করেন। তারা হোটেলগুলোতে থাকতে স্বাচ্ছন্দবোধ করবেন। একই সঙ্গে উদ্যোক্তারা বিনিয়োগ করতে উৎসাহী হবেন। এতে যশোরের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।