ঢাকার বাইরেও মানুষের মধ্যে করোনা আতঙ্ক
শুধু রাজধানীর বাসিন্দারাই নয়, আতঙ্কে ভুগছেন বিভাগীয় ও শহরাঞ্চলের নাগরিকরাও। শহরের ব্যস্ততম মোড় ও সড়ক এখন ফাঁকা। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। দূরপাল্লার বাস চললেও প্রায় যাত্রীশূন্য। খালি যাচ্ছে বিমানের সিটও।
টাঙ্গাইলে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। হাসপাতাল, রাস্তাঘাটে মানুষের চলাচল কমে গেছে। স্থবির হয়ে পড়েছে যশোরের ব্যবসা-বাণিজ্য। রংপুরের বিনোদন স্পটগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। সাতক্ষীরায় মাইকিং করে সতর্ক করা হচ্ছে। এছাড়া করোনা ভাইরাসে প্রভাব পড়েছে রাজশাহী, নেত্রকোনা, নারায়ণগঞ্জ, চুয়াডাঙ্গা, মৌলভীবাজার, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মতো শহরগুলোতেও। ব্যুরো ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
চট্টগ্রাম: করোনা আতঙ্কে ফাঁকা হয়ে পড়েছে বন্দরনগরী। রেস্টুরেন্ট পাড়া খ্যাত নগরের কাজির মোড়ে স্বাভাবিক সময়ে সারাক্ষণ মানুষের জটলা লেগেই থাকে। সন্ধ্যা হলে তো এখানে হাঁটা দায়। তবে করোনার প্রকোপ শুরুর পর চিরচেনা কাজির দেউড়ির রূপ পাল্টে গেছে। রেস্টুরেন্টগুলো কাস্টমার খরাতে ভুগছে। এ ছাড়া ভ্রাম্যমাণ অনেক দোকানপাট ইতোমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে।
কক্সবাজার: বছরের ৩৬৫ দিনেই কক্সবাজার সৈকতের চিরচেনা দৃশ্য ঢেউয়ের সঙ্গে চলে পর্যটকদের মিতালি। কিন্তু বুধবার বিকেল থেকে চিরচেনা সেই দৃশ্যের পরিবর্তে সৈকতজুড়ে চলছে পিনপতন নিরবতায় ঢেউয়ের গর্জন।
করোনার সম্ভাব্য সংক্রমণ ঠেকাতে সৈকতে জনসমাগম এবং আশপাশে সভা-সমাবেশ ও অনুষ্ঠানে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। শুক্রবার থেকে বন্ধ হয়ে গেছে সেন্টমার্টিনগামী সকল পর্যটকবাহী জাহাজ। আবাসিক হোটেল, রেস্টুরেন্ট, ক্যাফেসহ খাবার প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধে কোনো ঘোষণা না এলেও কলাতলীর তারকা হোটেল ও আবাসন প্রতিষ্ঠানগুলো ৫০-৬০ শতাংশ কর্মজীবীকে ছুটিতে পাঠিয়ে দিচ্ছে।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন জানান, করোনার ঝুঁকি এড়াতে কক্সবাজারের সকল পর্যটন কেন্দ্র পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
বগুড়া: করোনা ভাইরাসের আতঙ্ক থাকলেও বগুড়ায় মানুষের মধ্যে সচেতনা বেড়েছে। শহরের ব্যস্ততম সাতমাথাসহ অন্যান্য ব্যস্ত এলাকাগুলোতে মানুষের উপস্থিতি কম লক্ষ্য করা গেছে। চিকিৎসকরা এ তথ্য দিয়ে বলেছেন, কয়েকদিন আগেও যারা মাস্ক ব্যবহার করতেন না, হাতও ভালোভাবে পরিষ্কার করতেন না তাদের অনেকেই এখন এ ভাইরাস সম্পর্কে সচেতন।
শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. মো. আব্দুল ওয়াদুদ জানান, কয়েকদিন আগে বহি:বিভাগের যত রোগী আসতেন তার চেয়ে এখন কম আসছেন।
ময়মনসিংহ: গ্রামের চেয়ে করোনা আতঙ্ক বেশি শহরাঞ্চলে। জেলা ও উপজেলা সদরের বেশিরভাগ মানুষ প্রয়োজন ছাড়া তেমন একটা ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। তবে নিম্ন আয়ের মানুষ কাজের ঘর ছেড়েছেন। শহরের রেস্টুরেন্ট মালিক আরিফ আহমেদ জানান, গত কয়েকদিন ধরে তার রেস্টুরেন্টে খদ্দের অনেক কম আসছেন তাই রেস্টুরেন্ট আপাতত বন্ধ রাখার চিন্তা করছেন তিনি।
খুলনা: করোনা ভাইরাস আতঙ্কে রাস্তাঘাট ফাঁকা হয়ে পড়েছে। সাধারণ মানুষ জরুরি কাজ ছাড়া ঘর থেকে বাইরে বের হচ্ছে না। খুলনায় এ পর্যন্ত করোনা ভাইরাসে কেউ আক্রান্ত না হলেও মানুষের মধ্যে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে।
সিলেট: বাজারে ভিড়, মাজারেও ভিড়, তবে রাস্তাঘাট ফাঁকা- এই হলো শনিবারের সিলেট নগরীর অবস্থা। গত কয়েকদিনের মতো শনিবারও সিলেটের নিত্যপণ্যের সবচেয়ে বড়বাজার কালিঘাটে ছিলো ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়। আতঙ্কে চাল-ডাল কিনে মজুদ করছেন ক্রেতারা।
জেলা প্রশাসক কাজী এমদাদুল ইসলাম বলেন, একান্ত প্রয়োজন ছাড়া সবাইকে ঘরে থাকতে বলা হয়েছে। জনসমাগম বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে, এমনকি মাজারেও ভিড় না করতে অনুরোধ করা হচ্ছে।