চট্টগ্রামে করোনার সঙ্গে নতুন বিপদ ডেঙ্গু ও ব্ল্যাক ফাঙ্গাস
জুলাই মাসের ৩১ দিনে চট্টগ্রামে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ২৭২ জন এবং নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন ২৪ হাজার ১৬২ জন। এর মাঝেই নগরবাসীর ভেতর করোনা রোগীদের মধ্যে নতুন আতঙ্ক হয়ে ধরা দিয়েছে ডেঙ্গু ও ব্ল্যাক ফাঙ্গাস। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে করোনা নিয়ে চিকিৎসাধীন এক নারীর শরীরে মিলেছে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের অস্তিত্ব। এই সময়ে ডেঙ্গুতে মারা গেছেন দুইজন। যাদের শরীরে করোনা সংক্রমণ ছিল।
চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন সেখ ফজলে রাব্বি জানান, গত মাসে চট্টগ্রামে ৫ জন ডেঙ্গুজনিত রোগে আক্রান্ত হয়েছেন এবং মারা গেছেন ২ জন। এর মধ্যে শুক্রবার মেরিন সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নাসিফা জাহান (২০) নামে এক কলেজ শিক্ষার্থী চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. জাকির হোসেন জানান, নাসিফা করোনার সঙ্গে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছিলেন। এর আগে ৭ জুন চট্টগ্রাম নগরের লালখান বাজার এলাকায় ডেঙ্গু ও করোনায় আক্রান্ত হয়ে এক তরুণীর মৃত্যু হয়।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ রসায়ন এবং অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. রবিউল হাসান ভূইয়া বলেন, "চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের অনুরোধে জুলাই মাসে চট্টগ্রাম নগরের ৫১টি স্থান থেকে মশার লার্ভা সংগ্রহ করা হয়। এর মধ্যে ১৫টি স্পটে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেছে।"
এদিকে গত ২৮ জুলাই চট্টগ্রামে করোনাভাইরাস থেকে সেরে ওঠা এক নারীর দেহে 'ব্ল্যাক ফাঙ্গাস' সংক্রমণ শনাক্ত হয়। ওই রোগীর সংক্রমণ এখন পর্যন্ত চোখেই সীমাবদ্ধ থাকলেও শরীরের অন্য জায়গায় ছড়ানো ঠেকাতে দ্রুত জটিল একটি অপারেশন করার কথা ভাবছেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের চিকিৎসকেরা। ওই নারী রোগী বর্তমানে চমেক হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. অনিরুদ্ধ ঘোষের তত্ত্বাবধানে রয়েছেন।
ডা. অনিরুদ্ধ ঘোষ বলেন, "ব্ল্যাক ফাঙ্গাস এখন পর্যন্ত তার চোখে রয়েছে। এটি যাতে তার নাক ও মুখে নতুন করে না ছড়ায়, তাই একটি জটিল অপারেশন করতে হবে। তাকে বর্তমানে প্রতিদিন ৫ ভায়াল করে অ্যামফোটেরিসিন-বি ইনজেকশন দেওয়া হচ্ছে।"
এদিকে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের এখন পর্যন্ত একমাত্র কার্যকরী চিকিৎসা অ্যামফোটেরিসিন-বি ইনজেকশনও দুষ্প্রাপ্য। ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্ত ওই নারীর সন্তানরা অনেক খোঁজাখুঁজির পর বিকন ফার্মাসিউটিক্যালসের তৈরি ২টি এবং ভারতীয় একটি কোম্পানির তৈরি ২০টি ভায়াল সংগ্রহ করেছে। ওই রোগীকে প্রতিদিন ৫ ভায়াল করে ১৫ দিন এই ইনজেকশনটি প্রয়োগের নির্দেশনা দিয়েছেন। ফলে এই ইনজেকশনের আরও ৭৫ ভায়াল জোগাড় করতে হবে ওই নারীর পরিবারকে। কিন্তু এখন পর্যন্ত দেশের কোথাও থেকে প্রাপ্তির নিশ্চয়তা পাননি।
ওই নারীর স্বজনেরা জানান, গত ২৫ জুন তার জ্বর আসে। ৩ জুলাই পরীক্ষায় করোনাভাইরাস ধরা পড়ে। পরে ১৫ জুলাই পরীক্ষায় তিনি কোভিড নেগেটিভ হন। তবে এরপর তার নানা ধরনের শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়। ২৪ জুলাই তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়।
গত এপ্রিল ও মে মাসে ভারতে করোনার ডেলটা ধরনের প্রকোপের মধ্যে বেশ কয়েকটি রাজ্যে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের সংক্রমণ দেখা দেয়। কোভিড থেকে সেরে ওঠা বা সেরে ওঠার পর্যায়ে রয়েছেন, এমন রোগীদের মধ্যে এই ছত্রাকের সংক্রমণ ঘটে। রোগী বাড়তে থাকায় একপর্যায়ে ভারতে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসকেও মহামারি ঘোষণা করা হয়।