চট্টগ্রাম বন্দরে বসছে ২০৮ সিসিটিভি ক্যামেরা
নিরাপত্তা বাড়ানোর অংশ হিসেবে চট্টগ্রাম বন্দরে বসানো হচ্ছে ২০৮টি ক্লোজড সার্কিট টেলিভিশন (সিসিটিভি) ক্যামেরা।
চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে শুরু হয়েছে ক্যামেরা বসানোর কাজ। এপ্রিলে বন্দরের বিভিন্ন ইয়ার্ডে বসবে এসব ক্যামেরা।
চট্টগ্রাম বন্দরের উপপরিচালক (নিরাপত্তা) এস এম মাসুদুল ইসলাম জানান, বন্দরে বর্তমানে ৩১৩টি সিসিটিভি ক্যামেরা রয়েছে। নতুন করে আরও ২০৮টি ক্যামেরা বসানো হচ্ছে।
এই ৫২১টি ক্যামেরা দিয়ে বন্দরের জেটি, ইয়ার্ড, হ্যান্ডওভার ইয়ার্ডসহ গুরুত্বপূর্ণ অংশকে আওতায় আনা হবে।
২০১৪ সালে বুয়েটের বিশেষজ্ঞদের দিয়ে বন্দরে সমীক্ষা চালানো হয়। সেই সমীক্ষার পর বন্দরে ৮০০টি ক্যামেরা বসানোর সুপারিশ করা হয়, যাতে করে পুরো স্থাপনাটিকে ক্যামেরার আওতায় আনা যায়।
সে অনুযায়ী চট্টগ্রাম বন্দরকে শতভাগ সিসি ক্যামেরার আওতায় আনতে আরও ২৭৯টি ক্যামেরা বসানোর প্রয়োজন।
ইন্টারন্যাশনাল শিপ অ্যান্ড পোর্ট ফ্যাসিলিটি সিকিউরিটি (আইএসপিস) কোড অনুযায়ী নিরাপত্তাবিষয়ক সার্বিক পরিস্থিতির উন্নয়নে চট্টগ্রাম বন্দরকে বেশ কিছু শর্ত দেওয়া হয়।
২০১৭ সালের ১১ ও ১২ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম বন্দর পরিদর্শনে এসে মার্কিন প্রতিনিধি দল ১৬ দফা সুপারিশ করে।
এসব সুপারিশের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি ছিল বন্দর এলাকাকে সিসিটিভি ক্যমেরার আওতায় আনা, বন্দরের অভ্যন্তরে পণ্য খালাস না করে সেটি অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া, বন্দরের ভেতরে যাতায়াত নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা।
সর্বশেষ ২০১৯ সালের ২৫ আগস্ট চট্টগ্রাম বন্দরের সার্বিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি দেখতে আসেন ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম অর্গানাইজেশনের (আইএমও) প্রতিনিধি মার্কিন কোস্টগার্ডের লেফটেন্যান্ট স্টেইনলি টেরেন্ট, লেফটেন্যান্ট কমান্ডার ক্রিস্টিনা জোন্স ও লেফটেনেন্ট কমান্ডার অডে থমসন।
সেই পরিদর্শনে বন্দরের নিরাপত্তায় আইএমও প্রতিনিধি দল সন্তুষ্টি প্রকাশের পাশাপাশি বন্দরের নিরাপত্তায় সিসি ক্যামেরা বাড়ানোর সুপারিশ করে।
এদিকে, চট্টগ্রাম বন্দরের সংরক্ষিত এলাকা শতভাগ সিসি ক্যামেরার আওতায় না থাকায় প্রায়শই পণ্য চুরিসহ নানা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে। একটি চক্র বিদেশ থেকে আমদানিকৃত কন্টেইনার ভর্তি পণ্য চুরি করে নিয়ে যায়।
এ ছাড়া বন্দরের শেডে রাখা গাড়ির যন্ত্রাংশ খুলে নিয়ে যাওয়া, তৈরি পোশাক শিল্পের কাঁচামাল চুরির ঘটনাও ঘটেছে।
সিএন্ডএফ এজেন্ট ওয়ারিশা এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী সরওয়ার আলম খান জানান, গত বছরের অক্টোবরে চীন থেকে আমদানিকৃত জেনারেটর পার্টসের একটি চালানে ৪৫ লাখ যন্ত্রাংশ চুরি হয় চট্টগ্রাম বন্দর থেকে। ওই চালানটি খালাসের দায়িত্বে ছিল তার প্রতিষ্ঠান। এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে লিখিতভাবে অভিযোগ দায়ের করা হলেও কোনো সুরাহা হয়নি।
এমন বাস্তবতায় গত ১৯ জানুয়ারি চট্টগ্রাম বন্দর ভবনে অনুষ্ঠিত নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির এক মতবিনিময় সভায়ও সিসিটিভি ক্যামেরার বিষয়টি আলোচনায় আসে।
নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি রফিকুল ইসলাম ওই সভায় বলেন, বন্দরের শেডগুলোতে চুরি রোধে পুরো বন্দরে সিসিটিভি স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হবে। ইচ্ছা করলে আমদানিকারকরা নিরাপত্তা অফিসে বসে সিলভার স্ক্রিনে সিসিটিভির ফুটেজ দেখতে পারবেন।
চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব ওমর ফারুক বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরে স্থাপনা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্যামেরার সংখ্যাও বাড়বে। যেগুলো নষ্ট হয়ে যাবে, সেগুলো পরিবর্তন হবে।
তার দাবি, বিদেশি নাবিকদের সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য বন্দরের ভেতরে নেই।