ডায়েট ফুডের চাহিদা শীর্ষে
আদিবা আশরাফি, ঢাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। কর্মব্যস্ত জীবনে অনিয়মিত খাবার গ্রহণে তার ওজন বাড়তে থাকে। তিন মাসের ব্যবধানে ওজন বাড়ে ১০ কেজি। ওজন কমাতে চিকিৎসকের শরনাপন্ন হন তিনি। পরামর্শ নিয়ে শুরু করেন ডায়েট ফুড গ্রহণ।
তার ডায়েট ফুডের তালিকায় স্থান পায় ওটস, অ্যাপল সিডার ভিনেগার, বাদাম জাতীয় খাদ্য। এসব খাবার গ্রহণ করে তার ওজন কমেছে ছয় কেজি। তবে এখনো চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ি ডায়েট খাবারই গ্রহণ করছেন। আরও অন্তত ৫-৭ কেজি ওজন কমার পরে ডায়েট খাবার ছাড়বেন তিনি।
উৎসব কিংবা পূজা-পার্বণে ভারি খাবারের আয়োজনে বাঙ্গালির জুড়ি নেই। রোজকার খাদ্য তালিকায়ও থাকে ভাজাপোড়া আর হালের ফাস্ট ফুডের আধিপত্য। এতে মানুষের মধ্যে বাড়ছে স্থূলতাও।
এ অবস্থায় সচেতন মানুষ নিজ উদ্যোগে বা ডাক্তারের পরামর্শে ঝুঁকছেন ডায়েট ফুডের দিকে। ফলে অনেকের খাদ্যাভাসে যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন পদ। চাহিদা বাড়ছে ডায়েট ফুডের।
বাজারে ডায়েট ফুড হিসেবে যেসব খাবারের চাহিদা তৈরি হয়েছে তার মধ্যে অন্যতম ওটস, অ্যাপল সিডার ভিনেগার, এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল, পিনাট বাটার, মেয়নিজ, কুকিং কোকোনাট অয়েল, কোকোয়া পাউডার, কাজুবাদাম, ডায়েট সোডাসহ আরও কিছু খাদ্যপণ্য। এসব পণ্যের অধিকাংশই আমদানি নির্ভর।
ডায়েট পণ্য আমদানি ও বাজারজাতকরণের কাজ করে থাকে ডিসকভারি প্রোডাক্টস (বিডি) লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটির অ্যাকাউন্টস ম্যানেজার রনি সাজিদ দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'আমরা তিন বছর ধরে এই জাতীয় পণ্য আমদানি করছি। শুরুর দিকে তিন মাসে এক কন্টেইনার অ্যাপেল সিডার ভিনেগার আমদানি করতাম। চাহিদা বাড়ার ফলে এখন প্রতি মাসে এক কন্টেইনার আমদানি করতে হচ্ছে।'
প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, দেশের বাজারে ডায়েট ফুডের বাজার বাড়তে থাকায় কোকোনাট অয়েল, কোকোয়া পাউডার, কাজুবাদাম, ওটস, অলিভ অয়েল, ডায়েট সোডাসহ আরও কিছু পণ্য নিয়মিত আমদানি করছে তারা।
এসব পণ্যের আমদানি সাম্প্রতিককালে তিন গুণ বেড়েছে বলে জানিয়েছেন ডিসকভারির ওই কর্মকর্তা।
চেইন সুপারশপ স্বপ্নের সেলস ডিপার্টমেন্টও জানিয়েছে, ডায়েট ফুডের বিক্রি আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। এর মধ্যে দুটি পণ্যের বিক্রি সবচেয়ে বেশি বেড়েছে। পণ্য দুটি হচ্ছে অ্যাপল সিডার ভিনেগার ও ওটস।
স্বপ্নের বিপনন কর্মকর্তারা জানিয়ছেন, তাদের আউটলেটগুলোতে ২০১৯ সালে অ্যাপেল সিডার ভিনেগার বিক্রি হয়েছে ১ কোটি ৩০ লাখ টাকার। ২০২০ সালে এসে সেটা দ্বিগুণেরও বেশি হয়ে দাঁড়িয়েছে ২ কোটি ৭০ লাখ টাকায়।
একইভাবে গত বছর ওটস বিক্রি হয়েছিল ২ কোটি ৮৩ লাখ টাকার। এ বছর বিক্রি হয়েছে ৩ কোটি ৩০ লাখ টাকার।
ধানমন্ডির ইউনিমার্টের ব্রাঞ্চ ম্যানেজার রাশেদ কবির টিবিএসকে জানান, অ্যাপেল সিডার ভিনেগারের বোতল আগে মাসে এক ডজনও বিক্রি হতো না। এখন সেটা দিনে ৫০টির বেশি বিক্রি হয়। কুকিং কোকোনাট অয়েলের জার আগে মাসে ১টির বেশি বিক্রি হতো না। এখন দিনে বিক্রি ২০টি জার। তাদের শপে কাজু বাদামের মাসিক বিক্রি ১০০ কেজি থেকে বিক্রি বেড়ে ৫০০ কেজি হয়েছে।
এসব খাদ্যপণ্যের বিক্রি একসময় শুধু বড় বড় সুপার শপগুলোতে বিক্রি হতো। এখন বিক্রি হচ্ছে পাড়া-মহল্লার ছোট ছোট দোকানেও।
ডায়েট পণ্যের বিক্রি-বাট্টা নিয়ে কথা হয় মিরপুরের মামুন জেনারেল স্টোরের মালিক নূর আলম শিকদারের সঙ্গে। টিবিএসকে তিনি বলেন, 'মাসে চার-পাঁচ হাজার টাকার ওটস, সাত-আট হাজার টাকার অ্যাপেল সিডার ভিনেগার বিক্রি করি। ইদানিং হাজার দুয়েক টাকার শেপ আপ মিল্ক ও হাজার পাঁচেক টাকার লো ফ্যাট রুটি বিক্রি করছি। এছাড়া মাস ছয়েক হলো কাজু বাদামও বিক্রি শুরু করেছি।'
চাহিদার তেজিভাবে ডায়েট ফুডের আমদানিকারকের সংখ্যাও বাড়ছে। এমনই একটি প্রতিষ্ঠান ইউনিয়ন করপোরেশন। প্রতিষ্ঠানের সেলস অ্যান্ড মার্কেটিং বিভাগে কর্মরত মাজেদুল ইসলাম টিবিএসকে বলেন, 'বড় বড় সুপার শপ, ডিপার্মেন্টাল স্টোর ও খুচরা বিক্রেতারা আমাদের কাছ থেকে ডায়েট ফুড নিয়ে থাকে। বছর দুই আগেও এসব পণ্যের তেমন চাহিদা ছিল না।'
খাদ্যাভাসের এই পরিবর্তন সম্পর্কে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. নাজমা শাহীন বলেন, মানুষভেদে ডায়েটের ধরন আলাদা আলাদা। এজন্য চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। আর শুধু ডায়েট করলেই ওজন কমে না। সাথে নিয়মিত ব্যায়ামও করতে হবে।
ব্যায়াম না করলে ডায়েট ছেড়ে দেওয়ার পর ওজন আবার যেতে পারে জানিয়ে তিনি বলেন, 'ডায়েট খাবারের বদলে আমরা বছরজুড়ে বৈচিত্র্যপূর্ণ খাবার গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করে থাকি। এতে শরীরে প্রয়োজনীয় সকল ধরনের নিউট্রিয়েন্টসের ভারসাম্য থাকে।'
আমদানি করা এসব খাবারের মান নিয়ন্ত্রণ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউটের (বিএসটিআই) সার্টিফিকেশন মার্কস উইংয়ের সহকারি পরিচালক মন্তোষ কুমার দাস টিবিএসকে বলেন, 'সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যাপক প্রসার এবং সেগুলোতে ব্যাপক প্রচারণার কারণে এসব পণ্যের বাজার বাড়ছে। আমদানিকৃত এসব পণ্য টেস্ট করে আমরা বাজারজাত করার ছাড়পত্র দিচ্ছি। তবে জনবল ও কারিগরি সক্ষমতা কম থাকায় বাজার মনিটরিংয়ে ঘাটতি থেকে যাচ্ছে।'