দুর্গোৎসবে পূজা উদযাপনের ২৬ নির্দেশনা
মহামারি করোনা ভাইরাসের কারণে এবারের শারদীয় এই উৎসবের সব ক্ষেত্রেই থাকছে স্বাস্থ্যবিধির কড়া নির্দেশ। মহালয়া থেকে শুরু করে পুরো দুর্গোৎসবে চির পরিচিত আমেজ থাকছে না।
বুধবার (২৬ আগস্ট) বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি মিলন কান্তি দত্ত ও সাধারণ সম্পাদক নির্মল কুমার চ্যাটার্জি পূজা সংক্রান্ত বিষয়ে সারাদেশের পূজা উদযাপন পরিষদ, মন্দির ও পূজা কমিটির কাছে ২৬ দফার একটি নির্দেশনা পাঠিয়েছেন।
এ বছর মহালয়া হবে ১৭ সেপ্টেম্বর। কিন্তু পঞ্জিকার হিসাবে এবার আশ্বিন মাস 'মল মাস', মানে অশুভ মাস। সে কারণে এবার আশ্বিনে দেবীর পূজা হবে না। পূজা হবে কার্তিক মাসে। সেই হিসাবে এবার দেবী দুর্গা 'মর্ত্যে আসবেন' মহালয়ার ৩৫ দিন পরে।
পঞ্জিকা অনুযায়ী, ২২ অক্টোবর মহাষষ্ঠী তিথিতে হবে বোধন। পরদিন সপ্তমী পূজার মাধ্যমে শুরু হবে দুর্গোৎসবের মূল আচার অনুষ্ঠান। ২৬ অক্টোবর মহাদশমীতে বিসর্জনে শেষ হবে দুর্গোৎসবের আনুষ্ঠানিকতা।
এবারের পূজা উদযাপন পরিষদের ২৬ দফার যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে তাতে বলা হয়েছে
১। মহালয়ার আয়োজন স্বাস্থ্য বিধি মেনে সীমিত আকারে করতে হবে
২। প্রতিমা তৈরি থেকে পূজা সমাপ্তি পর্যন্ত প্রতিটি মন্দিরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা
৩। ভক্ত-পূজারি ও দর্শনার্থীদের জীবাণুমুক্ত করার ব্যবস্থা রাখা
৪। সকলে বাধ্যতামূলকভাবে মাস্ক পরা, দর্শনার্থীদের মধ্যে ন্যূনতম তিন ফুট শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা
৫। পূজামণ্ডপে নারী-পুরুষের যাতায়াতের আলাদা ব্যবস্থা করা
৬। বেশি সংখ্যক নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবক নারী/পুরুষ রাখা
৭। সন্দেহভাজন দর্শনার্থীদের দেহ তল্লাশির ব্যবস্থা রাখতে হবে
৮। আতসবাজি ও পটকা ফাটানো থেকে বিরত থাকতে হবে
৯। পূজামণ্ডপে সার্বক্ষণিক সিসি ক্যামেরা সংযোগ ব্যবস্থা রাখতে হবে
১০। ভক্তিমূলক সংগীত ছাড়া অন্য কোনো গান বাজানো না হয়
১১। মাইক বা পিএ সেট যেন ব্যবহার করা না হয়
১২। পূজামণ্ডপে 'প্রয়োজনের অতিরিক্ত দীর্ঘ সময়' কোনো দর্শনার্থী যেন না থাকে
১৩। সন্ধ্যার আরতির পর দর্শনার্থীদের প্রবেশে যেন নিরুৎসাহিত করা হয়
১৪। সব ধরনের আলোকসজ্জা, সাজসজ্জা, মেলা, আরতি প্রতিযোগিতা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিহার করা
১৫। সম্ভব হলে বাসা/বাড়িতে থেকে ডিজিটাল পদ্ধতিতে ভক্তদের অঞ্জলি দেওয়া
১৬। খোলা জায়গার অস্থায়ী প্যান্ডেলে স্বাস্থ্যবিধি পরিপূর্ণভাবে মেনে চলা
১৭। প্রশাসন, আইন শৃংখলা বাহিনী ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সমন্বয়ে মণ্ডপকেন্দ্রিক 'শৃঙ্খলা রক্ষা কমিটি' গঠন
১৮। গুজবে বিভ্রান্ত না হয়ে তাৎক্ষণিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অবহিত করা
১৯। প্রতিমা নিরঞ্জনে শোভাযাত্রা পরিহার করা
প্রশাসন, আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সমন্বয়ে মণ্ডপকেন্দ্রিক 'শৃঙ্খলা রক্ষা কমিটি' গঠন, গুজবে বিভ্রান্ত না হয়ে তাৎক্ষণিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অবহিত করা এবং প্রতিমা নিরঞ্জনে শোভাযাত্রা পরিহার করার নির্দেশনা রয়েছে ২৬ দফার মধ্যে।
এগুলো ছাড়াও সব পূজামণ্ডপে অগ্নি নিরাপত্তাসহ অন্যান্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা, যে কোনো প্রয়োজনে ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে সহায়তা চাওয়ার এবং গুজবে কান না দেয়ার নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে।
গত বছর সারা বাংলাদেশে ৩১ হাজার ১০০টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা হয়েছিল, যার মধ্যে ঢাকা মহানগরে ছিল ২৩৭টি মণ্ডপ। তবে এবার মহামারির মধ্যে সারাদেশেই পূজা মণ্ডপ কমে যাবে বলে পূজা কমিটির কর্তাব্যক্তিদের ধারণা।
হিন্দু রীতি অনুযায়ী, মহালয়া, বোধন আর সন্ধিপূজা- এই তিন পর্ব মিলে অনুষ্ঠিত হয় দুর্গোৎসব। সাধারণত আশ্বিন মাসের শুক্ল পক্ষের ষষ্ঠ থেকে দশম দিন হয় দুর্গাপূজার মূল আনুষ্ঠানিকতা। আশ্বিন মাসের এই শুক্ল পক্ষকে বলা হয় দেবীপক্ষ। দেবীপক্ষের শুরু হয় যে অমাবস্যায়, সেদিন বলা হয় মহালয়া। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, সেদিন 'কন্যারূপে' বাপের বাড়ি অর্থাৎ মর্ত্যে আসেন দেবী দুর্গা।