পূর্বাঞ্চল রেলে যাত্রী ও পণ্য পরিবহনে কাটছে ইঞ্জিন সংকট, বাড়ছে গতি
বাংলাদেশ রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলে নতুন করে যুক্ত হয়েছে ২০ টি লোকোমোটিভ (ইঞ্জিন)। চলতি বছরের ১০ আগস্ট ১০ টি এবং সর্বশেষ ৪ অক্টোবর ১০টি ইঞ্জিন যুক্ত হয়েছে। আগামী নভেম্বরে যুক্ত হতে যাচ্ছে নতুন আরো ১০টি ইঞ্জিন।
৩০টি ইঞ্জিন যুক্ত হলে পূর্বাঞ্চল রেলে যাত্রী এবং পণ্য পরিবহনে গতি আসবে বলে মনে করছেন রেল সংশ্লিষ্টরা। সংকট কাটাতে পূর্বাঞ্চলে আরো নতুন ইঞ্জিন যুক্ত করার প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানিয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ।
সারা দেশের রেলবিভাগ ২টি অঞ্চলে বিভক্ত। এর মধ্যে একটি পূর্বাঞ্চল এবং অন্যটি পশ্চিমাঞ্চল। পূর্বাঞ্চলে দুটি বিভাগ রয়েছে। এর মধ্যে একটি চট্টগ্রাম বিভাগ, অন্যটি ঢাকা বিভাগ। পূর্বাঞ্চল রেলের সদর দপ্তর চট্টগ্রামের সিআরবিতে (সেন্ট্রাল রেলওয়ে বিল্ডিং)।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের চিফ মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার (সিএমই) মো: বোরহান উদ্দিন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, ২০২০ সালে আমদানিকৃত ১০ টি মিটারগেজ ইঞ্জিন ট্রায়াল রান শেষে চলতি ৪ অক্টোবর চলাচলের জন্য বুঝে পেয়েছি। এর মধ্যে ২টি ইঞ্জিন চালানো হয়েছে। পর্যায়ক্রমে আরো ৮টি ইঞ্জিন বিভিন্ন ট্রেনে চালানো হবে।
চলতি বছরের ৯ জুন দক্ষিণ কোরিয়া থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে এসে পৌঁছে ১০টি মিটারগেজ ইঞ্জিন। এগুলোর ট্রায়াল রান শেষ হলে গত আগস্ট মাসে এই ১০টি মিটার গেজ ইঞ্জিন পূর্বাঞ্চলের মেকানিক্যাল বিভাগের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
নতুন আমদানিকৃত ইঞ্জিনের গতিসীমা ১০০ কিলোমিটার হওয়ায় রেলের গতি বাড়ার পাশাপাশি যাত্রী সেবার মান আরো বাড়বে বলে মনে করছেন পূর্বাঞ্চল রেলের কর্মকর্তারা।
পূর্বাঞ্চল রেলের দুটি প্রকল্পে ২০টি ইঞ্জিন ক্রয় প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ হাসান মনসুর টিবিএসকে বলেন, একটি প্রকল্পে ২৯৭ কোটি টাকা এবং অন্য প্রকল্পে ৩৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে কোরিয়ার হুন্দাই রেটেম থেকে ২০টি ইঞ্জিন কেনা হয়। একই কোম্পানি থেকে কেনা নতুন আরো ১০টি ইঞ্জিন চলতি অক্টোবরে কোরিয়া থেকে সমুদ্রপথে যাত্রা শুরু করবে। ট্রায়াল রান শেষে নভেম্বরে পূর্বাঞ্চল রেলে যুক্ত করা যাবে বলে আশা করছি।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল সূত্র জানায়, বর্তমানে পূর্বাঞ্চল রেলে ১৩৩টি ইঞ্জিন রয়েছে। নতুন ২০টি ইঞ্জিন সহ বর্তমানে পূর্বাঞ্চল রেলে মোট ইঞ্জিনের সংখ্যা ১৫৩ টি।
একটি ইঞ্জিনের মেয়াদ ধরা হয় ২০ বছর। পূর্বাঞ্চলের আগের ১৩৩ ইঞ্জিনের মধ্যে মেয়াদ আছে ৩৯ টির। বাকি ৯৪টি ইঞ্জিনের মেয়াদ নেই। মেয়াদোত্তীর্ণ ইঞ্জিনের মধ্যে ৬৮ বছরের পুরোনো ইঞ্জিনও রয়েছে। এছাড়া ১৯৬১, ১৯৭৮, ১৯৭৯, ১৯৮২ সালের ইঞ্জিনও আছে পূর্বাঞ্চল রেলে।
তবে যাত্রীবাহী ট্রেনের তুলনায় পণ্যবাহী ট্রেন পরিচালনায় বেশি ব্যবহার হয় পুরোনো ইঞ্জিন। সেজন্য ঘন্টায় ৩৫ কিলোমিটারের চেয়ে বেশি গতিতে চলতে পারেনা ট্রেন। মেয়াদোত্তীর্ণ ইঞ্জিন দিয়ে পণ্যবাহী ট্রেন পরিচালনার কারণে পথে ইঞ্জিন বিকল, ইঞ্জিনে আগুন ধরে যাওয়া বিভিন্ন ধরনের দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে ট্রেন।
চট্টগ্রাম গুডস পোর্ট ইয়ার্ড (সিজিপিওয়াই) থেকে একটি কন্টেইনারবাহী ট্রেন ঢাকা কমলাপুর আইসিডিতে পৌছতে সময় লাগে ১২ ঘন্টা। নতুন ইঞ্জিনে পণ্যবাহী ট্রেন চলাচল করতে পারে ৬০ কিলোমিটার গতিতে।
রেলওয়ে চট্টগ্রাম গুডস পোর্ট ইয়ার্ডের প্রধান মাস্টার আবদুল মালেক বলেন, সিজিপিওয়াই থেকে ঢাকা কমলাপুর আইসিডিগামী কন্টেইনার ট্রেন সহ দেশের বিভিন্ন রুটে তেল, পাথর ও অন্যান্য পণ্যবাহী গড়ে ৯টি ট্রেনের চাহিদা রয়েছে। ইঞ্জিন সংকটের কারণে ৫টি ট্রেন পরিচালনা করা সম্ভব। নতুন যুক্ত হওয়া ইঞ্জিনের মধ্যে দুই থেকে তিনটি ইঞ্জিন বরাদ্দ দেওয়া হয়। চাহিদা অনুযায়ী পণ্যবাহী ট্রেন পরিচালনা করতে আরো অন্তত ৪টি নতুন ইঞ্জিন বরাদ্দ দেওয়া প্রয়োজন।
পূর্বাঞ্চল রেলওয়ে সূত্র জানায়, প্রতিবছরই কোন না কোন ইঞ্জিনের আয়ুষ্কাল শেষ হচ্ছে। ৫০ বছরের অধিক পুরোনো ইঞ্জিনগুলো প্রায়শই সংস্কার করতে হয়। তাই বহরে থাকলেও এসব ইঞ্জিনগুলো সবসময় অপারেশনে থাকেনা। বহরে যুক্ত হওয়ার অপেক্ষায় থাকা ১০ ইঞ্জিন যুক্ত হলেও সংকট পুরোপুরি কাটবেনা। তাই যাত্রী ও পণ্যবাহী ট্রেনে পুরোপুরি গতি ফেরাতে শীঘ্রই আরো ইঞ্জিন সংযোজন করা প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন তারা।
রেলওয়ে পূর্বালের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) জাহাঙ্গীর হোসেন টিবিএসকে বলেন, নতুন ৩০ টি ইঞ্জিন যুক্ত হলে রেলের পূর্বাঞ্চলে ইঞ্জিন সংকট কমে আসবে। তবে এই সংকটের সমাধানে রেল কর্তৃপক্ষ আরো ইঞ্জিন আমদানির প্রক্রিয়ায় রয়েছে। আশা করছি পর্যায়ক্রমে ইঞ্জিন সংকট কেটে যাবে।