ফের শুরু দেশব্যাপী ১৪ দিনের কঠোর লকডাউন
কোভিড-১৯ সংক্রমণ রোধে ঈদ উল আজহার আগেই সরকার কর্তৃক ঘোষণা দেয়া ১৪ দিনের কঠোর লকডাউন শুরু হলো আজ। সকাল ৬টায় শুরু হওয়া এ লকডাউন বিধিনিষেধ চলবে ৫ আগস্ট রাত ১২টা পর্যন্ত।
লকডাউনের প্রথম দিনে দেশের দক্ষিণাঞ্চল থেকে ঢাকায় আসা শত শত যাত্রী লঞ্চ টার্মিনালে পৌঁছে কোনও ধরণের যানবাহন না পাওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েন।
টার্মিনালে যাত্রীদের রিকশা, গাড়ি এবং সিএনজির জন্য ঘন্টাব্যাপী অপেক্ষা করতে দেখা যায়।
অনেকেই কোন উপায় না পেয়ে, শেষ পর্যন্ত পায়ে হেঁটে গন্তব্যস্থলে রওয়ানা দেন।
ছোট শিশু সাথে আছে এমন অনেক মা এবং প্রবীণদের জন্য ছিল না সে উপায়টুকুও, তাদের রাস্তায় বসে থাকতে দেখা যায়।
এমনই একজন বরিশাল থেকে ঢাকা এসে পৌঁছানো ইভা আক্তার বাচ্চাকে সাথে নিয়ে বসে ছিলেন। তিনি যাবেন টঙ্গীর বউবাজারে।
তিনি জানান, ছোট বাচ্চা নিয়ে কোনভাবেই তার পক্ষে হাঁটা সম্ভব নয়, তার ওপর সাথে রয়েছে মালপত্র এবং ব্যাগ।
"এ ধরনের লকডাউন আমাদের জন্য দুর্ভোগ ছাড়া আর কিছু নয়। ভোরে এলেও যে এত বড় ভোগান্তিতে পড়তে হবে তা বুঝিনি। বুঝতে পারছি না কীভাবে বাড়ি পৌঁছাবো," বলেন ইভা।
মো. আকাশ নামে আরেকজন যাত্রী যাবেন আবদুল্লাহপুর; তিনিও কোন যানবাহন না পেয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে ছিলেন।
আকাশ বলেন, "এতদূর তো হেঁটে যাওয়া সম্ভব না। কোন গাড়িও পাচ্ছিনা। জানিনা কী করব!" পরে অবশ্য তিনি পায়ে হেঁটে গুলিস্তানের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন।
'ভিক্টর ক্লাসিক' এর বাসচালক সেলিম বলেন, "অনেক যাত্রীই বিপদে পড়ে গেল অথচ আমাদের কিছুই করার নেই"।
এদিকে দায়িত্বে থাকা ডিএমপি সার্জেন্ট সেলিম বলেন, "আমরা লকডাউনবিধি কঠোরভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। যাত্রীদের বিষয়ে আমাদের কোনও সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়নি। নতুন সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে আমরা সে অনুযায়ী কাজ করব।"
আইন-শৃঙ্খলা এবং জরুরি পরিষেবা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যতীত এবারের সর্বাত্মক লকডাউনেও বন্ধ থাকবে দেশের সকল সরকারি-বেসরকারি অফিস।
এ সময় সড়ক, রেল ও নৌপথে গণপরিবহন, অভ্যন্তরীণ উড়োজাহাজসহ সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে। বন্ধ থাকবে সব শপিংমল এবং মার্কেটও।
ইতোমধ্যেই ঘোষণা দেওয়া হয়েছে এবারের বিধিনিষেধ আগের বারের চেয়ে কঠিন হবে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে মাঠে থাকবে সেনাবাহিনীও।
জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, "এবারের লকডাউন আগের বারের চেয়েও কঠোর হবে"।
তবে আইনশৃঙ্খলা এবং জরুরি পরিষেবা, যেমন-কৃষি পণ্য ও উপকরণ (সার, বীজ, কীটনাশক, কৃষি যন্ত্রপাতি ইত্যাদি), খাদ্যশস্য ও খাদ্যদ্রব্য পরিবহন/বিক্রয়, ত্রাণ বিতরণ, স্বাস্থ্য সেবা, কোভিড-১৯ টিকা প্রদান, জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) প্রদান কার্যক্রম, রাজস্ব আদায় সম্পর্কিত কার্যাবলী, বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস/জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস, টেলিফোন ও ইন্টারনেট (সরকারি-বেসরকারি), গণমাধ্যম (প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া), বেসরকারি নিরাপত্তা ব্যবস্থা, ডাক সেবা, ব্যাংক, ভিসা সংক্রান্ত কার্যক্রম, সিটি করপোরেশন/পৌরসভা (পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা, সড়কের বাতি ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি কার্যক্রম), সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি, ফার্মেসি ও ফার্সাসিউটিক্যালসসহ অন্যান্য জরুরি/অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ও সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অফিসসমূহের কর্মচারী ও যানবাহন প্রাতিষ্ঠানিক পরিচয়পত্র প্রদর্শন সাপেক্ষে যাতায়াত করতে পারবে।
এর আগে, ১৫ জুলাই থেকে ২২ জুলাই পর্যন্ত লকডাউন শিথিল করার ঘোষণা দিয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।