বিদেশি গণমাধ্যম ও সংবাদকর্মীদের লেখনীতে ২৫ মার্চ ১৯৭১
বিলেতের দ্য ডেইলি টেলিগ্রাফ পত্রিকার প্রথম সংখ্যাটি বের হয় ২৯ জুন ১৮৫৫। ১৯৭১-এ বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় টেলিগ্রাফের সম্পাদক মরিস গ্রিন। তখন চলছিল শ্রমিক দলের শাসন। ডেইলি টেলিগ্রাফ প্রথম পর্যায়ে নির্বাচিত গণপ্রতিনিধির হাতে ক্ষমতা হস্তানান্তরের কথা বলেছে। দ্বিতীয় পর্যায়ে পাকিস্তানি সৈন্যদের পাশবিকতার নিন্দা করেছে, কার্যত পাকিস্তান যে ভেঙে গেছে তা স্পষ্ট করেই জানিয়ে দিয়েছে। ২৯ মার্চ ডেইলি টেলিগ্রাফ ভিন্ন শিরোনামে তিনটি সংবাদ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের হত্যাযজ্ঞ নিয়ে প্রকাশ করে--ভিন্ন ভিন্ন শিরোনামে। বাংলাদেশ টেলিগ্রাফের কাছে কতটা গুরুত্ব পেয়েছে এটাই তার প্রমাণ। টেলিগ্রাফের প্রতিবেদনের সাথে বিবিসির ২৬ ও ২৭ তারিখের তিনটি সংবাদের অংশ এবং দুজন ত্রাণকর্মীর একটি সম্মিলিত চিঠি অনূদিত হলো:
পূর্ব পাকিস্তান বাইরের পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন
গণযুদ্ধের ভয়াবহ চক্রে পূর্ব পাকিস্তানে ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ চালানো হচ্ছে। যেটুকু খবর পাওয়া গেছে তাতে এটাই মনে হওয়ার কথা। প্রদেশটি কার্যত বহিঃবিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয়েছে। যেসব কূটনৈতিক উৎস ঢাকায় তাদের মিশনের সঙ্গে ক্ষীণ রেডিও যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছে এবং শুক্রবার লড়াই শুরু হওয়ার পর যেসব পর্যালোচক পূর্ব পাকিস্তান ছেড়ে এসেছিল সবার মতে ৭০ হাজার পশ্চিম পাকিস্তানি সৈন্য বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনকে দাবিয়ে রাখতে তাদের নিষ্ঠুরতা এতটুকুও হ্রাস করছে না।
নিহত বাঙালির সংখ্যা দশ হাজার থেকে এক লাখের মধ্যে হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। প্রকৃত সংখ্যা যাই হোক এতে কোনো সন্দেহ নেই যে সেনাবাহিনী তাদের ইচ্ছেটাই কেবল সকলের ওপর চাপিয়ে দেবে, আর তা করবে ইচ্ছেমতো নির্মমতার সঙ্গে।
ঘৃণা উচ্চারিত
প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের সামরিক শাসনের দুবছরে যে সব উর্ধ্বতন পশ্চিম পাকিস্তানি কর্মকর্তা ঢাকায় কর্মরত তারা তাদের বাঙালি স্বদেশবাসীর ব্যাপারে প্রকাশ্যে ঘৃনাব্যঞ্জক কথাবার্তা বলে চলেছে। উত্তেজনাপূর্ণ গত দুটি বছরে এই তিক্ততা ও ঘৃণার ধুমায়িত অসন্তোষ বিশাল আকার ধারণ করেছে। প্রদেশের উত্তরাঞ্চলে বিচ্ছিন্ন চা বাগানে স্থাপিত বলে অনুমিত গোপন বেতারযন্ত্র 'রেডিও বাংলাদেশ' থেকে গতরাতে ঘোষিত বার্তায় বলা হয়েছে যে একটি অস্থায়ী সরকার গঠন করা হয়েছে।
গ্রেফতারের ইঙ্গিত
বেতার ঘোষণার ব্যবহৃত শব্দাবলী এই ইঙ্গিত দেয় যে সরকারি বাহিনী শেখ মুজিবকে কারাগারে নিয়ে থাকতে পারে। লড়াই শুরু হওয়ার আগে বৃহস্পতিবার রাতে পাকিস্তানি সৈন্যরা তার বাড়ি ঘিরে অবস্থান নিয়েছিল।
গত মাসেই প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান যে শেখকে 'পাকিস্তানের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বর্ণনা করেছেন গত শুক্রবারই তাকেই বলেছেন বিশ্বাসঘাতক। এতক্ষণে তাকে হয়ত গুলি করে হত্যা করাও হয়ে থাকতে পারে। বৃহস্পতিবার রাতে ব্রিটেন, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, পশ্চিম জার্মানি, জাপান ও অন্যান্য দেশের ত্রিশ জন সংবাদপত্র ও টেলিভিশন সংবাদদাতা ও ক্যামেরাম্যানকে সেনাবাহিনী দিয়ে ধরিয়ে বন্দুকের মুখে গতকাল উড়োজাহাজে পূর্ব পাকিস্তান থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। তারা পশ্চিম পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও বিমানবাহিনীর কর্মকর্তাদের কথা জানিয়েছেন।
অস্ট্রেলিয়ান ব্রডকাস্টিং কোম্পানির ডোনাল্ড হক জনিয়েছেন তিনবার তাকে দিগম্বর করে তল্লাশি চালানো হয়েছে। তার টাইপ রাইটার, টেপ রেকর্ডার ও ক্যামেরা খুলে দেখা হয়, তার সব লেখালেখি, দলিল দস্তাবেজ ও ব্যক্তিগত কাগজপত্রসহ সবই বাজেয়াপ্ত করা হয়।
যখন বিদেশি সংবাদদাতাদের একজন তাদের এই আচরণের প্রতিবাদ করলেন, বিমানবাহিনীর একজন স্কোয়াড্রন লিডার পিস্তল বের করে তাদের হুমকি দিলেন এবং বললেন, 'আমি এর মধ্যে আমার দেশবাসীকে হত্যা করেছি, এখন তোমাদের হত্যা করব।'
প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া ও শেখ মুজিবের সাংবিধানিক আলোচনা ভেঙে যাওয়ার পর বৃহস্পতিবার রাতে এই সংবাদদাতাদের অন্তরীণ করা হয় এবং তাদের ঢাকা এয়ারপোর্টের একটি কক্ষে সশস্ত্র প্রহরায় রাখা হয়।
বিজয়ের দাবি
ঢাকার সঙ্গে বহিঃবিশ্বের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় ঢাকা কিংবা পূর্ব পাকিস্তানের অন্য কোনো জায়গা থেকে পাওয়া বিক্ষিপ্ত সংবাদ যাচাই করা সম্ভব হচ্ছে না।
শেখ মুজিবের গোপন বেতারকেন্দ্র থেকে রংপুর শহর দখলের দাবি করা হয়েছে। বলা হয়েছে শত শত যুবক শহরে সেনাসদরের দিকে ছুটে এসেছে এবং পশ্চিম পাকিস্তানি সৈন্যদের সঙ্গে তীব্র লড়াইয়ের পর তা দখল করে নিয়েছে। বেতার থেকে দাবি করা হয়েছে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও সীমান্তরক্ষী সৈন্যরা ক্রমশ পিছু হটছে। শেখ মুজিবের আওয়ামী লীগের হাজার হাজার স্বেচ্ছাসেবী যুবক ঢাকা শহরের দিকে এগিয়ে আসছে।
বাংলাদেশ বাহিনী কুমিল্লা, যশোর ও খুলনা ক্যান্টনমেন্ট দখল করে নিয়েছে বলে বেতারসূত্রে দাবি করা হয়েছে। আরও বলা হয়েছে, পাকিস্তানি বাহিনী কর্তৃক নিরস্ত্র বাঙালি জনতার ওপর গোলাবর্ষণ করা হয়েছে। ঢাকার একটিসহ দুটি হাসপাতাল বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অর্ধাংশের কুমিল্লা ও চট্টগ্রামে হেলিকপ্টার থেকে গোলা নিক্ষেপ করা হয়েছে। যে দ্বন্দ্ব থেকে এ যুদ্ধ তাতে চট্টগ্রাম উত্তেজনার সবচেয়ে বড় কেন্দ্রে পরিণত হয়।
ভনিতা পরিত্যাগ
'পরিস্থিতি স্বাভাবিক' এবং 'পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে' পাকিস্তানি সরকারি রেডিও গতরাতে এই ভনিতা থেকে বেরিয়ে এসেছে। রেডিও জানিয়েছে চট্টগ্রামে বিদ্রোহ দমনে উড়োজাহাজে বাড়তি সৈন্য চট্টগ্রামে নেওয়া হয়েছে। সরকারি রেডিও এবং বিদেশে পাকিস্তানের ক'জন রেডিও বাংলাদেশ দাবিকৃত পূর্ব পাকিস্তানের প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক লেফটেন্যান্ট জেনারেল টিক্কা খান মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে নিহত হওয়ার সংবাদ উড়িয়ে দিয়েছেন। নয়াদিল্লিতে পাকিস্তানের হাইকমিশনার সাজ্জাদ হায়দার জানিয়েছেন, টিক্কা খান বহাল তবিয়তেই আছেন।
কিন্তু গোপন বেতার মাধ্যম এই দাবির পুনরাবৃত্তি করেছে এবং বলেছে টিক্কা খানের সঙ্গে থাকা আরও চারজন একইসঙ্গে নিহত হয়েছেন। উত্তর-পূর্ব ভারতের ত্রিপুরা সীমান্ত থেকে পাওয়া খবরে জানা যায়, ঢাকা শহরের কেন্দ্রস্থলে পেট্রোল বোমার আক্রমণে জেনারেল টিক্কা নিহত হয়েছেন।
ভারতের উদ্বেগ
পূর্ব পাকিস্তানের গণযুদ্ধ ভারতের উদ্বেগকে অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে। ভারতীয় সেনাবাহিনীর কমান্ডার-ইন-চীফ-জেনারেল এসএইচএফজে মানেকশ মন্ত্রিপরিষদের সঙ্গে আলোচনার জন্য দিল্লি ছুটেছেন। ভারতের সঙ্কটগ্রস্ত রাজ্য পশ্চিমবঙ্গ এমনিতে দুরারোগ্য অস্থিরতায় ভুগছে। দিল্লি থেকে সরাসরি রাষ্ট্রটি শাসনাধীন; তারই সীমান্তে পূর্ব পাকিস্তান। আশঙ্কা করা হচ্ছে বাঙালি জাতীয়তাবাদের ঢেউ একদা অখন্ড বাংলার পূর্বাংশ হতে উঠে এসে সারা বাংলায় ছড়িয়ে পড়তে পারে। আর তা ভারতের জন্য গুরুতর অভিঘাত সৃষ্টি করতে পারে।
বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গে ভারতীয় সৈন্যসংখ্যা প্রায় এক লাখ। লোকসভা ও রাজ্যসভার নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করতে এ মাসের প্রথমদিকে তাদের মোতায়েন করা হয়েছে। সেখানে তাদের উপস্থিতি ভারতের নিরাপত্তা প্রশ্নে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।
আশঙ্কা করা হচ্ছে দুইভাবে দ্বন্দ্ব পশ্চিমবঙ্গে ছড়িয়ে পড়তে পারে। উত্তেজনা সৃষ্টিকারী রাজনীতিবিদরা পূর্ব বাংলার বাঙালিদের সঙ্গে একাত্মতাকে পুঁজি করে ফায়দা লুটতে পারে।
গুরুত্বপূর্ণ আরও একটি বিষয় হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের মার্ক্সবাদীরা তাদের মতো করে শেখ মুজিবের ছয় দফা (যা এখন স্বাধীনতা আন্দোলনরত বাংলাদেশের জন্য অপ্রসাঙ্গিক) এগিয়ে নিতে চাইছে। দিল্লির কাছে এখন তাদের অধিকতর স্বায়ত্তশাসনের দাবি।
এটাও উদ্বেগের কারণ যে অরণ্যের আগুনের মতো লড়াই উন্মুক্ত সীমান্ত পেরিয়ে ছড়িয়ে যেতে পারে। যদি পশ্চিম পাকিস্তানিরা প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে পোড়ামাটি নীতি অবলম্বন করে তা আরও বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়াবে।
শনিবার ভারতীয় পার্লামেন্টে মিসেস গান্ধী বলেছেন, পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের দুর্দশা লাঘবে যেভাবে ভূমিকা রাখা সম্ভব ভারত তাই করবে।
গণযুদ্ধের নিরীহ নিরপরাধ ভুক্তভোগীদের দুর্দশায় আরও সক্রিয় সহযোগিতার চাপ সদস্যদের কাছ থেকে পেলেও তিনি সতর্ক ও নমনীয় স্বরে কথা বলেছেন। তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন প্রতিবেশী একটি দেশের বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনে ভারত প্রকাশ্যে সহযোগিতা করতে পারে না।
তিনি বলেন, এই সঙ্কটের জাতীয় আন্তর্জাতিক অভিঘাতগুলো ভারতকে বিবেচনা করতে হবে। তবে প্রধানমন্ত্রী এটা বলেছেন যে পূর্বাঞ্চলে জনগণের আন্দোলন বাহুবলে দমন করার পশ্চিম পাকিস্তানি প্রচেষ্টাকে তিনি নিন্দনীয় মনে করছেন।
তিনি বলেন, শরণার্থীদের জন্য ভারতের সঙ্গে পূর্ব পাকিস্তানের যে সীমান্ত তা খোলা থাকবে। রেডিও বাংলাদেশ গতরাতে ইন্দিরা গান্ধীর বক্তব্য স্বাগত জানিয়েছে। ভারতীয় লোকসভায় আবেগময় আলোচনার প্রেক্ষাপটে পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে ভারতের হস্তক্ষেপের নিন্দা জানিয়েছে। প্রচারিত সংবাদের ব্যাপারে ভারতে পাকিস্তানের হাইকমিশনার হায়দার অভিযোগ দায়ের করেছেন। পূর্ব পাকিস্তানে অবস্থানরত আনুমানিক ৬০০ ব্রিটিশ আছেন, সে সম্পর্কে কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি। অন্যান্য বিদেশি দূতাবাসের মতো ঢাকার ব্রিটিশ হাইকমিশনকেও নিজেদের ট্রান্সমিটার ব্যবহার করতে নিষেধ করছে। তবে নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে বিদেশিদের দুশ্চিন্তায় কোনো কারণ এখন আর নেই। (২৯ মার্চ ১৯৭১)
নির্মম পাকিস্তানি আগ্রাসন
পশ্চিম পাকিস্তানি সৈন্যরা গতকাল (২৮ মার্চ ১৯৭১) পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশে তাদের মুঠি শক্ত করে এনেছে। গত সপ্তাহান্তের খবর তারা শত শত নাগরিককে হত্যা করেছে বলে জানা গেছে। দিল্লি থেকে আমাদের প্রতিনিধি জানিয়েছেন বাইরের পৃথিবীর সঙ্গে পূর্ব পাকিস্তানের যোগাযোগ কার্যত বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয়েছে। তবে এর মধ্যে সৈন্যরা ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে। গতকাল ঢাকা থেকে সান্ধ্য আইন প্রত্যাহার করা হয়েছে। গোলযোগ দমনের জন্য গতকাল আরও বহুসংখ্যক সৈন্য উড়োজাহাজে চট্টগ্রামে পাঠানো হয়েছে। পাকিস্তানি সৈন্যরা এতটুকু ছাড় না দিয়ে বেসামরিক জনগণকে সন্ত্রস্ত করে আনুগত্য স্বীকারে বাধ্য করছে। শেখ মুজিবুর রহমানের আওয়ামী লীগ সমর্থকরা এর তীব্র প্রতিবাদ করে চলেছেন।
সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে আনীত হত্যাযজ্ঞের অভিযোগ পশ্চিম পাকিস্তানি কর্মকর্তারা অস্বীকার করেছেন। তারা বলেছেন, শান্তিকালীন অবস্থা পুনরুদ্ধার করা হয়েছে এবং জনজীবনে স্বাভাবিকতা ফিরে এসেছে। তারা বলেছেন, কলকাতার কাছে নোঙর করা একটি জাহাজে স্থাপিত একটি গোপন বেতারকেন্দ্র হতে আজগুবি সব রটনা করা হচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, গতরাতে সেনাবাহিনী শেখ মুজিবকে গ্রেফতার করেছে। বৃহস্পতিবার গভীর রাত থেকে তার বাড়ি সৈন্যরা ঘিরে রেখেছিল। আশঙ্কা রয়েছে এই দ্বন্দ্ব সীমান্ত পেরিয়ে পশ্চিমবঙ্গে পৌঁছে যেতে পারে, সেখানকার বাঙালিরা পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিদের সঙ্গে মিশে ভারতীয় রাজনৈতিক উস্কানিদাতাদের কারণে জটিল অবস্থার সৃষ্টি করতে পারে। ভারত এ অবস্থায় পাকিস্তানের ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করবে না বলে মনে হচ্ছে।
যদি অব্যাহত লড়াইয়ের কারণে পরিস্থিতির অবনতি ঘটে পূর্ব পাকিস্তানে অবস্থানরত ৮০০ ব্রিটিশ নাগরিককে উড়োজাহাজে ফিরিয়ে আনার মতো জরুরি পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। (২৯ মার্চ ১৯৭১)
নিহতের সংখ্যা অনেক হওয়ার কথা
পূর্ব পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অধিকারে চলে যাওয়ার পর বিপুলসংখ্যক বেসামরিক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। রাজধানী ঢাকায় কোনো ধরনের সশস্ত্র প্রতিরোধ না হলেও সেনাবাহিনী ঠান্ডা মাথায় নির্বিচারে গোলাবর্ষণ করছে। সেনাবাহিনী যখন শহরে ঢুকছিল, তখন ভারি কামান থেকে আমার হোটেলে গোলাবর্ষণ করতে থাকে, আমি দূরের ভবনগুলোতে আগুন জ্বলতে দেখেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের দিক থেকে মেশিনগানের গোলাগুলির শব্দ ভেসে আসছিল, সেখানেই ছাত্র এবং শেখ মুজিবুর রহমানের আওয়ামী লীগের চরমপন্থী সদস্যদের অবস্থান। ব্যাপক গ্রেফতারের ঘটনা ঘটেছে কিনা তা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে অনেক পর্যবেক্ষক মনে করেন সামরিক বাহিনীর হাতে প্রথম দিন বন্দিদের একজন হলেন শেখ মুজিব।
গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় আক্রমণ
বৃহস্পতিবার শেষ রাতে যে গোলাবর্ষণ শুরু হয়েছে তা ঢাকা ও অন্যান্য শহরকে সাময়িকভাবে হলেও শুক্রবারের মধ্যে সেনা নিয়ন্ত্রণ নিয়ে এসেছে। মধ্যরাতে শহরের নিয়ন্ত্রণ হাতে নেওয়ার পর সেনাবাহিনী বিনা উস্কানিতে তিন ঘণ্টা অবিরাম গোলাবর্ষণ করে চলেছে। তারা শহরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলো আক্রমণ চালিয়েছে এবং বহু সংখ্যক বাড়িঘরে আগুন জ্বলতে দেখা গেছে।
শুক্রবার (২৬ মার্চ) রাস্তাগুলো জনশূন্য ছিল। তবে ছোট অস্ত্রের গুলি ও কামানের গোলার শব্দ শোনা গেছে। দিনভর যুদ্ধসাজে সৈন্যরা ট্যাংক ও ট্রাকে চড়ে শহরে টহল দিয়েছে। ঢাকার সংঘর্ষে বহুসংখ্যক বেসামরিক জনগণের নিহত ও আহত হওয়ার কথা। সে তুলনায় সেনাবাহিনীর ক্ষতি সামান্য। ঢাকার সঙ্গে প্রদেশের অন্যান্য অংশ এবং দেশের বাইরের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ায় সেনাবাহিনী কিভাবে দখলদারিত্ব বিস্তার করছে তা বলা অসম্ভব। 'আমরা নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করছি। বৃহস্পতিবার রাতে কী ঘটেছে এর বাইরে কিছু বলতে সেনা কমান্ডারগণ অস্বীকৃতি জানান।
সাংবিধানিক সঙ্কট সমাধানে আলোচনা ব্যর্থ হওয়ার পরই সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করে।
বৃহস্পতিবার রাত ৮ টার পরই এটা স্পষ্ট হয়ে উঠছিল একটা কিছু ঘটতে যাচ্ছে। আমি যে হোটেলে ছিলাম, হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের বাইরে মোতায়েন করা সৈন্যসংখ্যা দ্বিগুণ করা হয়। রাত ১১ টা পর্যন্ত সবই শান্ত ছিল; হঠাৎ এক পাঞ্জাবি ক্যাপ্টেন এসে আদেশ করল কেউ হোটেল থেকে বের হতে পারবে না।
ক্যাপ্টেন বলল, আমি হুকুম নিয়ে এসেছি। কী ঘটতে যাচ্ছে আমার জানা নেই। আমি কেবল জানি, তোমরা কেউ বাইরে এলে আমি তোমাদের গুলি করব। যদিও তখন রাস্তায় গাড়ি চলছিল, মানুষ দ্রুত যার যার বাড়ি ফিরছিল, বিক্ষিপ্ত গোলাগুলির শব্দ শুনতে থাকলাম। হোটেলের বার ও রেস্তোরাঁ বন্ধ করে দেওয়া হলো যেন কর্মচারীরা দ্রুত বাড়ি ফিরতে পারে, কিন্তু কার্ফ্যুর কারণে তারা বের হতে পারল না।
দূতাবাসগুলোতে ফোন করে কোনো সংবাদই পাওয়া গেল না; সরকারবিরোধী একটি পত্রিকার সম্পাদক বললেন, স্বাধীন বাংলার স্বপ্ন ফিকে হয়ে আসছে। আমার পত্রিকাটিও বন্ধ করে দেবে বলে মনে হচ্ছে।
শুক্রবার ভোরের দিকে ঢাকায় গোলাগুলির মাত্রা যখন বেড়ে চলছিল, আওয়ামী লীগ সমর্থকরা রাস্তায় জমায়েত হয়ে ব্যারিকেড সৃষ্টির চেষ্টা করছিল। সকালের দিককার অধিকাংশ গোলাগুলি এয়ারপোর্টের দিক থেকে হয়েছে। পশ্চিম পাকিস্তানের রাজনৈতিক নেতা হতবুদ্ধি ও স্নায়ুপীড়িত জুলফিকার আলী ভুট্টো সদলবলে ঢাকা ত্যাগের প্রাক্কালে হোটেল অবস্থানের সময় নিবিড় পাহারায় ছিলেন। পূর্ব পাকিস্তানের সামরিক আইন প্রশাসক জেনারেল টিক্কা খান শুক্রবার রেডিওতে বলেন, প্রশাসন অগ্রাহ্য করার ঘটনা আতঙ্কিত পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছিল, যা বেসামরিক পুলিশ ও সৈন্যদের স্বাভাবিক নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।
(২৯ মার্চ ১৯৭১, পূর্ব পাকিস্তানে গণযুদ্ধ শুরু হওয়ার ৪৮ ঘণ্টা পর ঢাকা ছেড়ে আসা সায়মন ড্রিংয়ের প্রতিবেদন।)
পূর্ববাংলায় নৃশংসতার বিবরণ দিয়ে বিলেতি পত্রিকায় চিঠি লিখেছেন জন হ্যাস্টিংস ও জন ক্ল্যাপহ্যাম
মহোদয়,
সবচেয়ে ভালো খবরের পেছনে ছুটতে থাকা সময়-স্বল্প প্রতিবেদক আমরা নই। আমরা দুজন ২০ বছর ধরে কলকাতায় আছি। ত্রাণ তৎপরতা চালাতে গিয়ে আমরা কোনো বিশেষভাবে বাছাই না করে শত শত সাধারণ শরণার্থীর সঙ্গে কথা বলেছি। পূর্ব পাকিস্তানে কী ঘটছে, তা আমাদের কাছে স্পষ্ট, সন্দেহের সামান্য ছায়াও নেই।
ফায়ারিং স্কোয়াডে লাইনে দাঁড়ানো কিন্তু দৈবক্রমে বেঁচে যাওয়া অনেকেই আছেন। রাজনৈতিক নেতা, অধ্যাপক, চিকিৎসক, শিক্ষক ও ছাত্রদের মেশিনগানের গুলিতে হত্যা করতে দেখেছেন; এমন অনেক সাক্ষী রয়েছেন।
দিনে বা রাতে যেকোনো সময় গ্রাম ঘেরাও করা হয়েছে; সন্ত্রস্ত গ্রামবাসী যেখানে সম্ভব পালিয়েছে অথবা যেখানে তাদের পাওয়া গেছে, সেখানেই হত্যা করা হয়েছে। অথবা তাদের প্রলুব্ধ করে মাঠে এনে রীতিমতো কচুকাটা করা হয়েছে। নারীদের ধর্ষণ করা হয়েছে, বালিকাদের উঠিয়ে নিয়ে গেছে ব্যারাকে, নিরস্ত্র কৃষককে হাজারজন লাঠিপেটা করেছে, বেয়নেটে খুঁচিয়ে মেরেছে।
সাত সপ্তাহ পার হয়ে গেলেও প্রক্রিয়া এমনই রয়ে গেছে। এমনকি সবচেয়ে অবিশ্বাস্য গল্প; শিশুকে উপরে ছুড়ে বেয়নেট দিয়ে ধরে ফেলা কিংবা নারীকে নগ্ন করে বেয়নেট দিয়ে লম্বালম্বি চিঁড়ে ফেলা কিংবা শিশুদের মাংসের মতো কেটে টুকরো করা; আসলেই সত্য; অনেকেই এসব ঘটনা বলেছেন সে কারণে নয়, কারণ যারা বলেছেন, রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে গল্প বানানোর মতো পর্যাপ্ত পরিশীলতা তাদের নেই।
আমরা হাতকাটা মা এবং পা-কাটা শিশু দেখেছি। এসব ঘটনা ঘটেছে সীমান্ত থেকে অনেক দূরে। বুলেটের ক্ষতে গ্যাংগ্রিন হয়ে গেছে, অনেকেই চোখের সামনে নিজের মেয়েকে ধর্ষিত হতে দেখেছেন এবং তাদের শিশুদের মাথা গুঁড়িয়ে যেতেও দেখেছেন। কেউ দেখেছেন স্বামী, সন্তান ও নাতিকে কবজিতে বেঁধে এক সারিতে গুলি করতে বেছে বেছে পুরুষমানুষ শেষ করে দেওয়ার প্রক্রিয়া।
কোনো ঘুমের ওষুধই বনগাঁ হাসপাতালের মেয়েটিকে শান্ত করতে পারবে না; এক স্থায়ী প্রলাপের ঘোরে সে চিৎকার করে কাঁদছে, 'ওরা আমাদের সবাইকে হত্যা করবে, আমাদের সবাইকে হত্যা করবে।' তার পাশেই কাঁপছে আরেকটি মেয়ে; দিনভর ধর্ষণের শিকার হয়েছে, তারপর তারা তার গোপনাঙ্গ বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়েছে।
ভারতে আসার পথে প্রায় ৪০০ জন নিহত হয়েছে চুয়াডাঙ্গায়; তাদের ঘেরাও করে হত্যা করা হয়েছে। কেন? পাছে তারা নির্যাতনের কাহিনী ভারতে নিয়ে যায়? নাকি শেখ মুজিবের নেতৃত্বে একটি গণতান্ত্রিক পদ্ধতি মেনে নেওয়ার মানে, সে দেশে বসবাস করার অধিকার বাজেয়াপ্ত হওয়া?
সবচেয়ে ভয়ংকর উদ্যোগটি সম্ভবত ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টকে নিশ্চিহ্ন করে ফেলা। ফার্স্ট ব্যাটালিয়নের ক'জন গুলিবৃষ্টির মধ্য দিয়ে বের হয়ে আসতে পেরেছে; গুলি করেছে তারাই, যারা আগের দিন তাদের সাথে এক মেসের বাসিন্দা ছিল। সমগ্র পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতার একেকটি প্রতীক।
বিবিসি লন্ডন ২৬ ও ২৭ মার্চের তিনটি সংবাদ
পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান পূর্ব পাকিস্তানে তার সরকারের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করায় সেখানে ব্যাপক লড়াই শুরু হয়েছে বলে পূর্ব পাকিস্তান থেকে খবর পাওয়া গেছে। অন্যদিকে ভারত থেকে পাওয়া খবরে জানা গেছে, শেখ মুজিবুর রহমান প্রদেশটির স্বাধীনতা ঘোষণা করেছেন। পূর্বাঞ্চলের রাজধানী ঢাকায় অবস্থানরত মার্কিন কনসাল জেনারেল জানিয়েছেন, বিরোধীদের দমন করতে সেখানে কামানও ব্যবহার করা হচ্ছে। ভারত থেকে পাওয়া আগের আরেকটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে-সর্বত্র তীব্র লড়াই চলার খবর পূর্ব পাকিস্তানের একটি গোপন বেতার কেন্দ্র থেকে সম্প্রচার করা হয়েছে। পূর্ববাংলার সেনা ইউনিটগুলো, এর মধ্যেই পুলিশ সশস্ত্র বেসামরিক নাগরিকদের সঙ্গে যোগ দিয়ে পশ্চিম পাকিস্তানি সেনা ইউনিটগুলোর বিরুদ্ধে লড়াই করে যাচ্ছে। পূর্ব পাকিস্তান থেকে সরাসরি কোনো সংবাদ পাওয়া যাচ্ছে না। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান কঠোর ভাষায় শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে অভিযুক্ত করেছেন এবং সংখ্যাগরিষ্ঠের দল আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন। তিনি তার নিজস্ব কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন। কার্যত আওয়ামী লীগই পূর্ব পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রণ হাতে নিয়েছিল। প্রেসিডেন্ট সব রাজনৈতিক কর্মকান্ড নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন এবং প্রেসের ওপর পুরো সেন্সরশিপ আরোপ করেছেন।
২৭ মার্চ ১৯৭১ (প্রথম সংবাদ)
সর্বশেষ পাওয়া খবরে জানা গেছে, সেনাবাহিনী ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলো নিয়ন্ত্রণে রেখেছে, গোলযোগ দমনের জন্য ট্যাংক ব্যবহার করা হয়েছে। সরকারি বেতার মাধ্যম রেডিও পাকিস্তান জানিয়েছে, শহরে বলবৎ সান্ধ্য আইন আজ (শনিবার) নয় ঘণ্টার জন্য প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছিল। রোববারও একইভাবে একই সময়ের জন্য প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে। রেডিও থেকে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে, যারা রাস্তাঘাট অবরোধ করবে এবং ব্যারিকেড বসাবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সেনাবাহিনী শহরের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলেও জানানো হয়েছে। পূর্ব পাকিস্তানের একটি গোপন বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচারিত সংবাদের কয়েকটির দাবি যে, আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের অনুসারীরা চট্টগ্রাম, কুমিল্লা ও যশোর নিয়ন্ত্রণ করছে এবং সামরিক আইন প্রশাসক (জেনারেল টিক্কা খান) জখম হয়েছেন। রেডিও পাকিস্তান তা নাকচ করে দিয়েছে। পূর্ব পাকিস্তানে কঠোর সেন্সরশিপ আরোপ করার কারণে সেখানে কী ঘটছে তার কোনো নিরপেক্ষ চিত্র পাওয়া যাচ্ছে না।
২৭ মার্চ ১৯৭১ (দ্বিতীয় সংবাদ)
তিন দিন আগে সেনা মোতায়েনের একজন চাক্ষুষ সাক্ষী বিবিসি প্রতিনিধি নিজেই: তাকে ঢাকা থেকে বহিষ্কারের আদেশ দেওয়া হয়েছিল। তিনি বলেছেন, ঢাকা শহরের লোকদের সন্ত্রস্ত করার জন্য সেনাবাহিনী পূর্বপরিকল্পিত নিষ্ঠুর একটি অপারেশন চালিয়েছে। আমাদের সংবাদদাতা আরও বলেছেন, ট্যাংক ও আর্মার্ড ট্রাকভর্তি সৈন্য খুব কমই প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়েছে, যদিও ছাত্রদের হাতে কিছু অস্ত্র ছিল। চারদিকে গুলির শব্দ এবং ভবনগুলোতে লেলিহান অগ্নিশিখা। আমাদের প্রতিনিধি ও তার সঙ্গী ফিল্ম ক্রুকে তিনবার ব্যাপকভাবে তল্লাশি করা হয়েছে। দেশের বাইরে প্রেরণের আগেই তাদের সংবাদ ও কাগজপত্র জব্দ করে রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, সামরিক সরকার মরিয়া হয়ে উঠেছে যাতে সেন্সরবিহীন সংবাদ দেশের বাইরে যেতে না পারে। প্রতিনিধি আরও জানিয়েছেন, সামরিক বাহিনীর বিবৃতিতে নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের গ্রেফতার হওয়ার সংবাদটি সম্ভবত সত্য।
এ সংবাদ যখন প্রচারিত হয়, তখন বাংলাদেশ (তখনকার পূর্ব পাকিস্তান) কার্যত পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।