বিয়ের বাজার মন্দা, দুরবস্থায় বিয়ে সামগ্রী ব্যবসায়ীরা
- এলিফ্যান্ট রোডে বিয়ে সামগ্রী বিক্রির দোকান ৬৩টি
- স্বাভাবিক সময়ে প্রতি বছরে বিক্রির পরিমাণ প্রায় অর্ধশত কোটি টাকা
- বিক্রি কমেছে ৮০ শতাংশ
- বিক্রি না থাকায় দোকানের কর্মচারী কমেছে ৫০ শতাংশ
- শেরওয়ানির দাম ৫ থেকে ৬০ হাজার টাকা
- পাগড়ি ৬০০-৫৫০০ টাকা, নাগরা ৪০০-২৫০০ টাকা, কোটি ২০০০-৫৫০০ টাকা, পাঞ্জাবী ১৫০০-৮০০০ টাকা,ডালা-কুলা প্রতি সেট ৫০০-৪০০০ টাকা
- প্রতিটি শেরওয়ানি ভাড়া দেওয়া হয় ১৫০০ থেকে ৯০০০ টাকায়
করোনাভাইরাসের প্রভাবে দেশের অন্য সব ব্যবসার মতো বিয়ে সামগ্রী ব্যবসায়ীরাও পড়েছেন দুরবস্থায়। এ পরিস্থিতিতে বিয়ের সংখ্যা কমার সাথে সাথে চলমান বিধিনিষেধের কারণে জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজনের পরিবর্তে ঘরোয়াভাবেই সম্পন্ন হচ্ছে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা। ফলে বেশিরভাগই কিনছেন না বিবাহ সামগ্রী।
দেশের সর্ববৃহৎ বিবাহ সামগ্রী বিক্রির স্থান রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডের দোকানগুলোতে দেখা যাচ্ছে না ক্রেতাদের সমাগম। দোকানিরা কোনোভাবে দোকান খুলে সীমিত পরিসরে বিয়ের উপকরণ সাজিয়ে ক্রেতাশূন্যতায় অলস সময় কাটান।
ব্যবসায়ীদের অভিযোগ নামেমাত্র লকডাউন দিয়ে কমিউনিটি সেন্টার বন্ধ করে ও অনুষ্ঠানে নিষেধাজ্ঞায় বিয়ের অনুষ্ঠান না হওয়ায় তাদের ব্যবসার এ দুরবস্থা।
বিয়েতে বর–কনের গায়ে হলুদ, বউভাতসহ অন্যসব আয়োজনে বিয়ে সামগ্রীর মধ্যে শেরওয়ানি, পাগড়ি, পাঞ্জাবি, পাজামা, নাগরা, টোপর, কনের শাড়ি, গহনা, হলুদের ডালা–কুলা প্রভৃতির প্রয়োজন। কিন্তু এ পরিস্থিতিতে অনেকেই কিনছেন না এগুলো।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, এলিফ্যান্ট রোডের কাঁটাবন মোড় থেকে বাটা সিগন্যাল মোড় পর্যন্ত রাস্তার দুই পাশে এবং এর আশপাশে ৬৩টি দোকানে এসব সামগ্রী বিক্রি করা হয়। এর মধ্যে ২০টির মতো দোকানে পাইকারি বিক্রি করা হয়। সকালে খোলা হলেও বিক্রেতারা দোকান ঝাড়ামোছা ব্যতীত অলস সময় কাটানোতেই ব্যস্ত থাকেন। হয়তো দুই-এক ঘন্টা পরপর ২/৩ জন ক্রেতা আসে যাদের অধিকাংশেরই চাহিদা স্বল্প খরচের মধ্যে।
এছাড়া রাজধানীর বিভিন্ন শপিংমল, নিউমার্কেট এলাকাসহ বেশ কয়েকটি স্থানে বিক্রি করা হয় বিয়ের শাড়ি ও কসমেটিকস।
বিয়ে সামগ্রী বিক্রির দোকান 'সানাই' এর স্বত্বাধিকারী এএইচএম মুজিবুল আলম রনি টিবিএসকে বলেন, 'আমার এ দোকানে করোনা শুরুর আগে প্রতিদিন ৮০ হাজার টাকা বিক্রি হতো সেখানে এখন ১২ হাজারের মতো বিক্রি হয়। কোনো কোনো দিন ৩/৪ হাজারও হয়না। যারা কেনাকাটা করতে আসেন তাদের চাহিদা কম দামের মধ্যে'।
বিক্রি প্রায় ৮০ শতাংশ কমে গিয়েছে উল্লেখ করে 'পালকি' এর দোকানি মো. দেলোয়ার হোসেন টিবিএসকে বলেন, 'দিনে ৮-১০ হাজার টাকার মতো বিক্রি হয়। ঈদের আগ থেকে চলমান এ লকডাউনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি আমরা। মানুষ বিয়ের অনুষ্ঠান করার সুযোগ পাচ্ছে না সেক্ষেত্রে বিয়ের সামগ্রী আর কেন কিনবে'?
দোকান ছেড়ে দিয়ে বিয়ের সামগ্রীর এ ব্যবসা থেকে সরে যাবেন এবং দোকান ছেড়ে দিবেন উল্লেখ করে বেশ কয়েকজন দোকানি টিবিএসকে বলেন, 'আমরা ১৪ মাস ধরে ব্যবসার এ ভঙ্গুর অবস্থার মধ্যে আছি। প্রতিদিন যা বিক্রি হয় তা দিয়ে দোকানের খরচও উঠে না। করোনার প্রথম ধাপে দেয়া লকডাউনের পরে আমাদের কিছু বিক্রি বেড়েছিল কিন্তু এখন নেই বললেই চলে'।
'বিয়ে বাড়ি'র দোকানি টিবিএসকে বলেন, 'আগে যখন বড় পরিসরে বিয়ে হতো তখন বরের সঙ্গে যারা থাকত তাদের জন্যও শেরওয়ানিসহ বিভিন্ন সামগ্রী বিক্রি হতো কিন্তু এখন আয়োজন একেবারেই ছোট হয়ে গেছে। আগে যেখানে একটা বিয়েতে ১৫/২০ পিস ডালা লাগত, এখন সেখানে একটা বা দুইটা দিয়েই সারছেন তারা'।
বিয়ের সামগ্রী কিনতে আসা নাজমা খাতুন টিবিএসকে বলেন, 'এখন বিয়েও হচ্ছে সীমিত পরিসরে আর আমরা খরচও বেশি করছি না। তাই ঘরোয়া আয়োজনে যতোটুকু দরকার তাই কিনছি'।
কাপড় ও ডিজাইনভেদে প্রতিটি শেরওয়ানির দাম ৫ থেকে ৬০ হাজার টাকা। পাগড়ি ৬০০-৫৫০০ টাকা, নাগরা ৪০০-২৫০০ টাকা, কোটি ২০০০-৫৫০০ টাকা, পাঞ্জাবী ১৫০০-৮০০০ টাকা, ডালা-কুলা প্রতি সেট ৫০০-৪০০০ টাকা।
ব্যবসায়ীরা জানান, পাইকারি বিক্রির ক্ষেত্রে এগুলোর দাম ২০ থেকে ৪০ শতাংশ কম হয়। শেরওয়ানির কাপড় অধিকাংশই আনা হয় ভারত থেকে। যেগুলো তাদের নিজস্ব কারখানায় বানানো হয়। এছাড়া কিছু বানানো শেরওয়ানি, পাগড়িও ভারত থেকে আনা হয়।
বিয়ের সামগ্রী বিক্রির দেকানগুলোতে শেরওয়ানি, পাগড়ি ভাড়ায়ও দেওয়া হয়। কাপড়ের মান ও ডিজাইনভেদে এ শেরওয়ানিগুলোর ভাড়া দেড় হাজার থেকে ৯ হাজার টাকা পর্যন্ত বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
'ছবিঘর' দোকানের ম্যানেজার জুবাইদাল হাসান সানি টিবিএসকে বলেন, শেরওয়ানি, পাগড়ি ও অন্য সবকিছু মিলিয়ে ১৫০০ টাকা থেকে ভাড়া শুরু হয়। ঢাকার বাইরে হলে একটু বেশি থাকে ভাড়া। ভাড়ায় নেওয়া পোশাক ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে ফেরত দিতে হয়।
ভাড়া ব্যতীত শেরওয়ানি ও পাগড়ি ভাড়া নেওয়ার সময় জামানত হিসেবে অতিরিক্ত টাকা জমা রাখতে হয়।
শেরওয়ানি ভাড়ায় নিতে আসা এক গ্রাহক শামসুল হক টিবিএসকে বলেন, 'একদিনে পড়ার জন্য ২০/২৫ হাজার টাকায় একটা শেরওয়ানি না কিনে ২৫০০ টাকায় একটা ভাড়ায় নিলাম'।
বিবাহ সামগ্রী বিক্রেতা দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মোফাজ্জেল হোসেন ছকা টিবিএসকে বলেন, 'গত দুই মাস ধরে চলমান লকডাউনে আমরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছি। কমিউনিটি সেন্টারগুলো বন্ধ থাকায় আমাদের বিক্রি একেবারে নেই বললেই চলে। শীতের সময়ে আমাদের বিক্রি বেশি হলেও সারাবছরই মোটামুটি বিক্রি হয় কিন্তু করোনার মধ্যে সেই বিক্রির ২০ শতাংশও হচ্ছে না এখন'।
দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে নিয়মিত পাইকারি ক্রেতারা আসতেন এলিফ্যান্ট রোডের পাইকারি দোকানগুলোতে কিন্তু করোনার মধ্যে সে বিক্রি প্রায় শূন্যের কোঠায় নেমে গিয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।