মহামারির মধ্যেই চট্টগ্রাম বন্দরের ইতিহাসে কন্টেইনার হ্যান্ডেলিংয়ে রেকর্ড
করোনাভাইরাস সংক্রমণকালীন সময়ে চট্টগ্রাম বন্দরের ইতিহাসে রেকর্ড সংখ্যক কন্টেইনার হ্যান্ডেলিং হয়েছে।
২০২০-২১ অর্থবছরে দেশের প্রধান এই সমুদ্র বন্দর ৩০ লাখ ৪৬ টিইইউ'স (২০ ফুটের একক) কন্টেইনার বেশি হ্যান্ডেলিং করেছে। এর মধ্যে আমদানি পণ্যের কন্টেইনার ১৬,৫৮৩৩০ এবং রপ্তানি কন্টেইনার ১৪,৩৮৯০৬ টিইইউ'স।
বন্দর সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের চলমান উন্নয়ন প্রকল্প এবং দেশে ক্রমবর্ধমান আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য বৃদ্ধির ফলে কন্টেইনার হ্যান্ডেলিংয়ের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে কন্টেইনার হ্যান্ডেলিং এর সংখ্যা ছিল ২৭ লাখ ৯৭ হাজার ১৯০ টিইইউ'স। এক অর্থবছরের ব্যবধানে চট্টগ্রাম বন্দর ৩ লাখ ৪৬ টিইইউ'স কন্টেইনার বেশি হ্যান্ডেলিং করেছে।
শুধু তাই নয়, ২০২০-২১ অর্থবছরে তার আগের অর্থবছরের তুলনায় চট্টগ্রাম বন্দরে ২৯৮টি জাহাজ বেশি এসেছে। ২০২০-২১ অর্থবছরে চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ এসেছে ৪০৬২টি। ২০১৯-২০ অর্থবছরে এসেছিল ৩৭৬৪টি। চট্টগ্রাম বন্দরের ইতিহাসে এটিকে সর্বোচ্চ কন্টেইনার হ্যান্ডেলিং এবং বেশি জাহাজের আগমন বলে মনে করছেন বন্দর সংশ্লিষ্টরা।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এম শাহজাহান বলেন, 'সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী করোনাকালীন সময়ে এক মুহূর্তের জন্যও বন্ধ হয়নি বন্দরের কার্যক্রম। বন্দর এবং বন্দর সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহের সাথে সমন্বয়, ১৪টি গ্যান্ট্রি ক্রেনের সর্বোচ্চ ব্যবহার, সবার আন্তরিকতায় এ সাফল্য অর্জিত হয়েছে'।
বন্দর চেয়ারম্যান আরো বলেন, 'ইতোপূর্বে বেশ কয়েকবার লকডাউন হলেও পুরোপুরি স্বাভাবিক ছিল বন্দরের কার্যক্রম। শিপিং এজেন্ট, অফডক, শুল্ক বিভাগ, ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার এসোসিয়েশন, আমদানিকারক, রপ্তানিকারক সহ সকল প্রতিষ্ঠান বন্দর এবং সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী তাদের সর্বোচ্চটুকু দিয়ে দায়িত্ব পালন করেছে। বন্দরের এ সাফল্যের জন্য আমি এসব প্রতিষ্ঠানগুলোকেও ধন্যবাদ জানাই। লন্ডনভিত্তিক সাময়িকী লয়েডস লিস্ট অনুযায়ী, চট্টগ্রাম বন্দরের বর্তমান অবস্থান ৫৮। আগামীতে এই অবস্থান ৫০তম হবে বলে আমার বিশ্বাস'।
সমুদ্রপথে দেশের মোট আমদানি রপ্তানি বাণিজ্যের ৯২ ভাগ সম্পন্ন হয় চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। মোট কন্টেইনার পরিবহনের ৯৮ ভাগ হয় এই বন্দর দিয়ে।
এদিকে চট্টগ্রাম বন্দরের পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনালের কাজ শেষ হবে ২০২২ সালে। এটি সম্পন্ন হলে বছরে চট্টগ্রাম বন্দর ৪ লাখ টিইইউ'স কন্টেইনার হ্যান্ডেলিং করতে পারবে। এতে বন্দরের কন্টেইনার হ্যান্ডেলিং সক্ষমতা আরো বেড়ে যাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
চট্টগ্রাম বন্দরের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে চট্টগ্রাম বন্দরে হ্যান্ডেলিং হয়েছিল ২৮ লাখ ৮ হাজার কন্টেইনার। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হলে ২০১৯-২০ অর্থবছরে এই সংখ্যা দাঁড়ায় ২৭ লাখ ৯৭ হাজারে। এক অর্থবছরের ব্যবধানে কন্টেইনার হ্যান্ডেলিংয়ের পরিমাণ কমে যায় ১১ হাজার। তবে তার পরবর্তী ২০২০-২১ অর্থবছরে করোনা ভাইরাসের প্রকোপ বাড়লেও কন্টেইনার হ্যান্ডেলিং এবং জাহাজ আগমনের সংখ্যা বেড়ে যায়।
চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সহ-সভাপতি এবং প্যাসিফিক জিন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মোহাম্মদ তানভীর বলেন, 'এটি নিঃসন্দেহে চট্টগ্রাম বন্দরের বিশাল অর্জন। দেশের ব্যবসায়িক প্রবৃদ্ধির সাথে সাথে চট্টগ্রাম বন্দরও আপগ্রেড হচ্ছে। কন্টেইনার হ্যান্ডেলিংয়ে রেকর্ড অর্জন তারই প্রতিফলন। চট্টগ্রাম বন্দর যে ভবিষ্যত পরিকল্পনা নিয়ে এগুচ্ছে তাতে বন্দরের অর্জন আরো সমৃদ্ধ হবে'।
বাংলাদেশ শিপিং এজেন্টস এসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ বলেন, 'চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ করোনাকালেও চেইন ওয়ার্ক দক্ষতার সাথে পরিচালনা করেছে। ফলে বন্দরের পাশাপাশি বন্দর সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো তার সর্বোচ্চটুকু দিয়ে সাপ্লাই চেইন ধরে রাখতে পেরেছে। এই সাফল্য যাতে অব্যাহত থাকে, সেজন্য বন্দরের সংশ্লিষ্ট সকল প্রতিষ্ঠানকে আন্তরিকভাবে কাজ করতে হবে'।
চট্টগ্রাম বন্দর সিবিএ'র সাধারণ সম্পাদক নায়েবুল ইসলাম ফটিক বলেন, 'করোনায় চট্টগ্রাম বন্দরের বিভিন্ন পর্যায়ের প্রায় ১ হাজার ৫শ জন কর্মকর্তা কর্মচারী আক্রান্ত হয়েছে। কর্মরত অবস্থায় মারা গেছে ১৮ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী। অবসরপ্রাপ্ত এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্বজনসহ করোনায় মৃতের সংখ্যা ২৭ জন। দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে জীবনের ঝুঁকি নিয়েও ২৪ ঘন্টা সচল রয়েছে বন্দরের কার্যক্রম। ভবিষ্যতেও এ ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে'।