মিথ্যে ঘোষণায় আনা কেএসআরএমের জাহাজ জব্দ করলো নৌ পুলিশ
সিঙ্গাপুরের মালিকানাধীন জাহাজ এমটি মেডান। জাহাজটি পরিচালনার জন্য ৮২ লাখ ইউএস ডলারে চুক্তি হয় মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরের অরিন এনার্জি ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের সঙ্গে। চুক্তি অনুযায়ী ২০২০ সালের ১৩ নভেম্বর অরিন এনার্জি সিঙ্গাপুরের একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ২০ লাখ ডলার পাঠায়।
কিন্তু জাহাজটি মালয়েশিয়া না পাঠিয়ে ইন্দোনেশিয়ার পার্শ্ববর্তী প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপ দেশ পালাউ এর একটি বন্দরে নিয়ে যাওয়া হয়; পরিবর্তন করা হয় জাহাজের নাম। ওই অবস্থায় এমটি মেডান জাহাজটি কিনে বাংলাদেশে নিয়ে আসে দেশের শিল্প গ্রুপ কেএসআরএম।
অথচ এরই মধ্যে চুক্তি অনুয়ায়ী জাহাজটি মালয়েশিয়ায় না এনে নেভিগেশন সিস্টেম বন্ধ রাখায় অরিন এনার্জি মালয়েশিয়া পুলিশের কাছে প্রতারণার মামলা করে। পরে সিঙ্গাপুর ইন্টারন্যাশনাল আরবিট্রেশন সেন্টারেও মামলা হয় এ ঘটনায়। অবৈধভাবে জাহাজটির নাম পরিবর্তন করায় পানামার কোম্পানি দায়ান হোল্ডিংস লিমিডেটকেও বিবাদী করা হয় মামলায়।
এদিকে জাহাজটি ভাঙার জন্য শিল্প মন্ত্রণালয়, পরিবেশ অধিদপ্তর, নৌ-বাণিজ্য দপ্তর থেকে অনাপত্তিপত্র নেয় কেএসআরএম। কিন্তু তারা মামলা ও জালিয়াতির বিষয়টি গোপন করে। গত ১৯ মে ১০টি শর্তে শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে জাহাজটি ভাঙার অনাপত্তি দেওয়া হয়। পরে বিষয়টি জানাজানি হলে নৌ-বাণিজ্য দপ্তরের অনাপত্তিপত্র বাতিল করা হয়।
গত ৩ জুন জাহাজটি বাংলাদেশে জলসীমায় পৌঁছলে নৌ-বাণিজ্য দপ্তরের প্রিন্সিপাল অফিসার ক্যাপ্টেন গিয়াস উদ্দিন মালয়েশিয়া পুলিশের কাছে দায়ের মামলার উল্লেখ করে শিপিং মাস্টারকে চিঠি দেন। সেখানে তিনি অনাপত্তি সনদ জারি না করার অনুরোধ করেন। ২০ জুন জাহাজটি জব্দের আদেশ জারি করেন আদালত। আদালতের নির্দেশে পেয়ে জাহাজটি জব্দ করেছে বাংলাদেশ নৌ-পুলিশ।
বিষয়টি নিশ্চিত করে চট্টগ্রাম নৌ-অঞ্চলের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোমিনুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, আদালতের অ্যারেস্ট ওয়ারেন্ট পেয়ে কেএসআরএম'র মালিকানাধীন জাহাজ ভাঙ্গার কারখানা খাজা শিপ ব্রেকিং লিমিটেড ইয়ার্ড থেকে জাহাজটি জব্দ করে স্থানীয় প্রশাসনের জিম্মায় রাখা হয়েছে।
জাহাজ ভাঙ্গা শিল্পের সঙ্গে জড়িতরা বলছেন, এটি একটি খারাপ উদাহরণ। আন্তর্জাতিক মেরিটাইম আইনে এ ধরনের প্রতারণার সুযোগ নেই। এমন প্রতারণার কারণে দেশের এ শিল্পকে কালো তালিকাভুক্ত করার আশঙ্কাও থাকে। সর্বোপরি আন্তর্জাতিকভাবে দেশের ভাবমূর্তি প্রশ্নবিদ্ধ হয়। যেহেতু জাহাজের প্রয়োজনীয় সব কিছু আপডেট আছে। এর পরও জাহাজটি ভাঙার পেছনে অসৎ উদ্দেশ্য রয়েছে। সরকারি সব দপ্তর ও সংস্থা থেকে জাহাজটি ভাঙার অনুমতি নিয়ে ইয়ার্ডে রেখে নাম পরিবর্তন করে চালানোর আশঙ্কাও রয়েছে।