শনাক্তের নতুন রেকর্ড, বেড সংকটে রোগী ভর্তি নিচ্ছেনা হাসপাতালগুলো
ঈদের ছুটি শেষ হতেই প্রতিদিন রেকর্ড ছাড়াচ্ছে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। বেডের অতিরিক্ত রোগী ভর্তি করেও চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতালগুলো। এতদিন আইসিইউ বেডের সংকট তীব্র হলেও এখন জেনারেল বেড সংকটের কারণেও রোগী ভর্তি বন্ধ করে দিচ্ছে মুগদা জেনারেল হাসপাতাল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মত বড় বড় হাসপাতালগুলো। রোগী নিয়ে একের পর এক হাসপাতাল ঘুরেও একটা বেড পাচ্ছে না স্বজনেরা, বাড়ছে মৃত্যু।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় বাংলাদেশে আরও ২৩৭ জনের মৃত্যু হয়েছে।
গত এক বছরেরও বেশি সময়জুড়ে প্রাণঘাতি এই ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়ে ইতোমধ্যে মৃত্যুর সংখ্যা ২০ হাজার ছাড়িয়েছে। এ পর্যন্ত দেশে ২০ হাজার ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে কোভিডজনিত কারণে।
একদিনে ভাইরাসটিতে শনাক্ত হয়েছেন ১৬ হাজার ২৩০ জন; মহামারি শুরুর পর যা এ যাবতকালের সর্বোচ্চ।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কোভিড রোগীদের জন্য ডেডিকেটেড বেড রয়েছে ৭০৫টি, বুধবার সেখানে ভর্তি ছিলেন ৭৬২ জন। অতিরিক্ত রোগী ভর্তি ছিলেন ৫৭ জন।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "রোগী যে হারে আসছে, তাতে সব রোগী আমরা ভর্তি নিতে পারছিনা। কারণ কোভিড রোগীদের জন্য অক্সিজেন প্রয়োজন। আমাদের অক্সিজেন সংযোগসহ বেড রয়েছে ৭৫০টি। যে অতিরিক্ত রোগীরা ভর্তি আছে তাদের অক্সিজেন সাপ্লাই দেয়া আমাদের জন্য কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে। সে কারণে আমরা রোগী রিলিজ না হলে আর নতুন রোগী ভর্তি নিচ্ছিনা"।
তিনি বলেন, "জেনারেল বেডের পাশাপাশি আইসিইউয়ের জন্য অপেক্ষমান রোগীর তালিকা আগের চেয়ে কয়েকগুণ বেড়েছে। এখন দ্রুত বিএসএমএমইউ এর বেডের ১০০০ ফিল্ড হাসপাতাল চালু করলে হয়তো মানুষ কিছুটা উপকৃত হবে। তবে যে হারে রোগী বাড়ছে তাতে হাজার হাজার বেড প্রয়োজন। সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে না পারলে হাসপাতালে বেড বাড়িয়ে পরিস্থিতি সামলানো যাবেনা"।
দেশে করোনা সংক্রমণের শুরু থেকেই মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রোগীদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। বেড সংকটের কারণে রোগী ভর্তি নিচ্ছে না হাসপাতালটি। বুধবার অধিকাংশ রোগীকে ভর্তির জন্য হাসপাতালে এসে ফিরে যেতে হয়েছে।
মুগদা হাসপাতালের পরিচালক ডা. অসীম কুমার নাথ টিবিএসকে বলেন, "গত কয়েকদিন থেকে রোগীর চাপ বেড়েছে, মঙ্গলবার থেকে নতুন রোগী ভর্তি করা কঠিন হয়ে গেছে। প্রতিদিন আমরা রিলিজ দিতে পারি ৩০-৪০ জন রোগী কিন্তু ভর্তির জন্য শতাধিক রোগী আসতেছে। বেড খালি না থাকায় রোগীদের ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে"।
ডা. অসীম কুমার নাথ বলেন, "আমাদের হাসপাতালে ৩২০ জন করোনা রোগী ভর্তি আছেন। আমরা যদি এ মুহূর্তে আরও অতিরিক্ত রোগী ভর্তি করি, তাহলে আমাদের হাসপাতালে যেসব রোগী ভর্তি আছেন, তাদের অনেকে ঠিকমতো অক্সিজেন পাবেন না। ফলে বাধ্য হয়ে এ মুহূর্তে নতুন করে রোগী ভর্তি করানো যাচ্ছে না। পুরোনো রোগী হাসপাতাল থেকে রিলিজ হলে নতুন রোগী ভর্তি করানো সম্ভব হবে"।
জুলাই মাসের শুরু থেকেই বেডের তুলনায় অতিরিক্ত ২০-৩০ জন রোগী ভর্তি রাখছে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল। এখন অতিরিক্ত রোগী ভর্তির সংখ্যা অনেক বেড়েছে। মঙ্গলবার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে কোভিড ডেডিকেটেড ২৭৫ বেডের বিপরীতে রোগী ভর্তি ছিল ৩৬১ জন। কুয়েত-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালেও বেডের তুলনায় অতিরিক্ত রোগী ভর্তি আছে।
ঢাকার কোভিড ডেডিকেটেড ১৬টি সরকারি হাসপাতালের মধ্যে ১৩টিতে আইসিইউ সুবিধা রয়েছে। এর মধ্যে ১১টি হাসপাতালে বুধবার কোন আইসিইউ বেড খালি ছিল না। ঢাকার কোভিড ডেডিকেটেড সরকারি দুটি হাসপাতালে মাত্র চারটি আইসিইউ বেড খালি ছিল বুধবার।
নরসিংদীর ১০০ শয্যা বিশিষ্ট জেলা হাসপাতালের কোভিড ইউনিট ফোকাল পারসন ডা. এএনএম মিজানুর রহমান বলেন, "আমাদের ৮০ বেডের কোভিড ওয়ার্ডে রোগী ভর্তি আছে ১০৮ জন। বেড না থাকায় আমরা নতুন রোগী ভর্তি বন্ধ করে দিয়েছি। কারণ ৮০ বেডের জন্য বরাদ্দ অক্সিজেন অতিরিক্ত ২৮ জন রোগীকে দিতে হচ্ছে। এতে সব রোগী ঠিকমত অক্সিজেন পাচ্ছেনা। প্রতিদিন অন্তত ৪০-৫০ জন নতুন রোগী আসছে ভর্তির জন্য, তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ঢাকায় রেফার করা হচ্ছে"।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম বলেন, "আমরা শয্যা সংখ্যা বাড়িয়েছি, ফিল্ড হাসপাতাল তৈরির প্রক্রিয়া চলমান আছে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের হাসপাতালেও শয্যা সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে শয্যা সংখ্যা বাড়ানোই অতিমারী মোকাবেলার একমাত্র পথ নয়। সংক্রমণের যে শৃঙ্খল আছে সে শৃঙ্খলটি ভেঙ্গে দিতে হবে। মানুষের কাছ থেকে মানুষের মধ্যে যদি সংক্রমণ না ছড়ায় তাহলে হাসপাতালের ওপর চাপ কমবে"।