সরবরাহ সংকটে কোভিড-১৯ চিকিৎসায় ব্যবহৃত ইনজেকশন অ্যাক্টটেমরা
অধিক চাহিদার কারণে বাজারে সংকট দেখা দিয়েছে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ক্রিটিক্যাল রোগীদের চিকিৎসায় ব্যবহৃত ইনজেকশন অ্যাক্টটেমরার (Actemra)। এর ফলে বিপাকে পড়েছে মূমুর্ষূ কোভিড রোগীরা। অনেক খুঁজেও ইনজেকশনটি না পেয়ে রোগীর মারা যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। তবে ইনজেকশনটির আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান রেডিয়েন্ট ফার্মাসিউটিক্যালস জানিয়েছে আগামী দুই-তিনদিনের মধ্যেই ইনজেকশনটির পরবর্তী চালান দেশে আসলে সংকট কিছুটা কমবে।
রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিসের ওষুধ অ্যাক্টটেমরা কোভিড-১৯ চিকিৎসায় ব্যবহার করা হচ্ছে। চিকিৎসকেরা বলছেন আইসিইউতে চিকিৎসাধীন ক্রিটিক্যাল রোগীদের এ ইনজেকশনটি দিয়ে ভালো ফল পাওয়া যাচ্ছে। তবে এখন বাজারে ওষুধটির সংকট প্রকট।
অ্যাক্টটেমরা একটি আমদানিকৃত ড্রাগস। বাংলাদেশে রেডিয়েন্ট ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড ইনজেকশনটি আমদানি করে।
ঢাকার মুগদা জেনারেল হাসপাতালের আইসিইউয়ের অ্যানাস্থেসিওলজিস্ট ডা. অনিরুদ্ধ দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেছেন, 'এখনো নির্দিষ্ট কোন পাবলিকেশন না থাকলেও আমরা দেখেছি এ ইনজেকশনটি ক্রিটিক্যাল করোনা রোগীদের চিকিৎসায় ১০-২০% ক্ষেত্রে ভালো রেসপন্স করে। যেসব রোগীর অক্সিজেনের চাহিদা অনেক বেশি তাদের এ ইনজেকশনটি দিলে ভালো ফল পাওয়া যায়। তবে এখন চাহিদার অনুপাতে ইনজেকশনটির সরবরাহ অনেক কম'।
ডা. অনিরুদ্ধ বলেন, 'এটি হাসপাতালগুলোর সরবরাহকৃত ওষুধ নয়। সরকার বা প্রাইভেট যেকোন আইসিইউতে এ ওষুধটি রোগীর স্বজনদের আনতে দেয়া হয়'।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দেশে করোনা সংক্রমণের প্রথম ওয়েভে এ ইনজেকশনটি সীমিত পরিসরে ব্যবহার শুরু হয়েছিল। তখন রোগীর স্বজনেরা রেডিয়েন্টের বুথে যোগাযোগ করলেই ইনজেকশনটি পেত।
কিন্তু এখন রেডিয়েন্টকে প্রেসক্রিপশন বা রোগীর নাম, কোন হাসপাতালে ভর্তি আছে সব জমা দিতে হয় বলে জানান ডা. অনিরুদ্ধ।
শনিবার কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন সাংবাদিক হাসান শাহরিয়ার।
তিনি রাজধানীর একটি প্রাইভেট হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তার চিকিৎসার জন্য অ্যাক্টটেমরা ইনজেকশনটি খুঁজছিলেন তার স্বজনেরা; খোঁজ করছিলেন বাংলাদেশ ডক্টর'স ফাউন্ডেশনের প্রধান প্রশাসক ডা. নিরুপম দাসও।
ডা. নিরুপম দাস টিবিএসকে বলেন, 'শুক্রবার বিকেল থেকে রেডিয়েন্টের সব বুথে খোঁজ করেছি কিন্তু কোথাও ইনজেকশনটি পাওয়া যায়নি। এই ইনজেকশনটি ব্যবহারে আইসিইউতে থাকা রোগীদের চিকিৎসায় ভালো ফল পাওয়া যায়। কোভিড আইসিইউতে এখন এ ইনজেকশনটির অনেক চাহিদা। কিন্তু রেডিয়েন্ট কেন ইনজেকশনটি এতো কম আমদানি করছে?'
শুধু সাংবাদিক হাসান শাহরিয়ার নন, অনেক চেষ্টা করে এই ইনজেকশনটি না পেয়ে গত কয়েকদিনে আরো একাধিক মানুষ মারা গেছেন বলে জানা গেছে।
তবে শিগগিরই এ সংকট কিছুটা কমবে বলে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানিয়েছেন রেডিয়েন্ট ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের চেয়ারম্যান নাসের শাহরিয়ার জাহেদী।
তিনি বলেন, 'আর্থ্রাইটিসের এই ওষুধটি কোভিডে ফুসফুসের প্রদাহ কমাতে খুব কার্যকর। আমরা সুইজারল্যান্ড থেকে ইনজেকশনটি আমদানি করি তবে সমস্যা হলো বিশ্বজুড়ে তাদের চাহিদা এত বেশি যে, আমরা যতটা চাচ্ছি ততোটা তারা দিতে পারছে না। আমরা যে পরিমাণ চাহিদার কথা জানাচ্ছি বা এলসি করছি সেই অনুযায়ী ওষুধটি পাচ্ছি না। তবুও তারা সর্বোচ্চ সহযোগিতা করছে'।
নাসের শাহরিয়ার জাহেদী বলেন, 'গত কয়েকদিনে ওষুধটি আমাদের স্টক আউট হয়ে গেছে। ওষুধটি আমদানির দুই দিনের মধ্যেই শেষ হয়ে গেছে। মঙ্গলবারের মধ্যে পরের চালান আসবে'।
অভিযোগ রয়েছে রেডিয়েন্ট করপোরেট হাসপাতালগুলোর কাছে বেশি করে ইনজেকশনটি বিক্রি করে দিচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাসের শাহরিয়ার জাহেদী বলেন, 'আমরা কোন হাসপাতালকে সেভাবে ইনজেকশনটি দেই নাই। কোন হাসপাতাল চাইলে সে হাসপাতালের রোগীর তালিকা থেকে সর্বোচ্চ ৫ থেকে ১০টা ডোজ দেয়া হচ্ছে। হাসপাতালের রোগীকে নিশ্চিত করে তাদের অ্যাটেনটেন্ডের কাছে ওষুধটি দিচ্ছি। যতদূর সম্ভব যৌক্তিক উপায়ে আমরা ওষুধটি দেয়ার চেষ্টা করছি'।
তিনি আরো বলেন, 'আমাদের ইমার্জেন্সি কাউন্টার ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকে। ওষুধ হাতে থাকলে এবং রোগী নিশ্চিত করলে আমাদের লোক হাসপাতালে রোগীর অ্যাটেনডেন্টের কাছেই তা পৌঁছে দেয়'।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইনজেকশনটির ৮০, ১৬০, ২০০ ও ৪০০ মিলিগ্রাম ভায়াল পাওয়া যায়। ভায়াল অনুসারে ইনজেকশনটির দাম ১৫ থেকে ৪৫ হাজার টাকা। বাংলাদেশে সাধারণত ৪০০ মিলিগ্রাম ভায়াল ব্যবহার করা হয়। এতে দাম পড়ে ৪৩-৪৫ হাজার টাকা। তবে এখন ৪০০ মিলিগ্রাম ভায়াল পাওয়া যাচ্ছে না। তাই অন্য ভায়ালগুলো দিয়ে নির্ধারিত ডোজ মিলিয়ে রোগীদের দেয়া হচ্ছে।