সিনহা হত্যা মামলার আসামি লিয়াকতের বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের আদালতে মামলা
ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে অর্থ আদায়ের অভিযোগে অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা সিনহা মো: রাশেদ খান হত্যা মামলার আসামী পুলিশ কর্মকর্তা লিয়াকত আলীর বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের আদালতে মামলা দয়ের হয়েছে। আজ বুধবার ( ২৬ আগষ্ট) দুপুরে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিষ্ট্রেট আবু সালেম মো: নোমানের আদালতে মামলাটি করেন চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী জসিম উদ্দিন। মামলায় আনা অভিযোগটি ২০১৪ সালের। ওই সময় লিয়াকত চট্টগ্রাম গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) এসআই পদে কর্মরত ছিলেন।
অভিযোগে লিয়াকত আলীর বিরুদ্ধে ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে দুইলাখ টাকা চাঁদা আদায়, মিথ্যে মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়া, হত্যাচেষ্টা ও নির্যাতনের অভিযোগ আনা হয়েছে। এতে লিয়াকত ও নয় পুলিশ সদস্যসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে আদালতে নালিশি অভিযোগ করেন ব্যবসায়ী জসিম উদ্দিন।
অভিযোগের প্রেক্ষিতে লিয়াকত এবং অন্য দুই পুলিশ সদস্যসহ মোট সাত জনের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। মামলার আসামী পুলিশ উপ-পরিদর্শক লিয়াকত কক্সবাজারে সিনহা হত্যাকান্ডের মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে এখন কারাগারে রয়েছেন।
অভিযোগকারী জসিম উদ্দীন (৫৫) চট্টগ্রাম নগরীর পতেঙ্গা চরপাড়া মোড় এলাকার মৃত নেকবর আলী সিকদারের ছেলে। নগরীর সাগরিকা বিসিক এলাকায় সূচনা এন্টারপ্রাইজ নামে তার একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
বাদির আইনজীবী জুয়েল দাশ জানান, বুধবার ১৩ জনের বিরুদ্ধে নালিশি অভিযোগ করেছি। আদালত অভিযোগকারীর জবানবন্দি গ্রহণ করে তা তদন্ত করতে চট্টগ্রাম নগর পুলিশের (সিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) উপ-কমিশনারকে (উত্তর) নির্দেশ দিয়েছেন।"
যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তের নির্দেশ দেয়া হয়েছে লিয়াকত ছাড়া অন্যরা হলেন; কুমিল্লার দাউদকান্দি থানার তৎকালীন দুই এসআই নজরুল ও হান্নান, বাদির ব্যবসায়িক প্রতিদ্বন্দ্বী এস এম সাহাবুদ্দীন, বিষ্ণুপদ পালিত, কাজলকান্তি বৈদ্য ও জিয়াউর রহমান।
এছাড়া আরো ছয় জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়। এরা হলেন- ডিবির তৎকালীন এসআই সন্তোষকুমার, এসআই কামরুল, সদরঘাট থানার এসআই তালাত মাহমুদ, ওসি প্রণব চৌধুরী, দাউদকান্দি থানার মর্জিনা বেগম (বর্তমানে উখিয়া থানার ওসি) এবং গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার বাবুল আক্তার।
মামলার বাদি জসিম জানান, প্রতিষ্ঠানে চুরি ও লুটতরাজের ঘটনায় মামলা দায়ের করেছিলাম। সেই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ছিলো লিয়াকত আলি। সে আমার কাছ থেকে তদন্তের জন্য ৫০ হাজার টাকা নেয়। এরপর ২০১৪ সালের ১৪ জুন সকালে আমাকে ডিবি অফিসে ডেকে নিয়ে আপসের প্রস্তাব দেয়। তার প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় উল্টো পাঁচ লাখ টাকা দাবি করে। তাতেও রাজি না হওয়ায় পতেঙ্গা থানায় নিয়ে আটকে রেখে শারীরিক নির্যাতন করে।
তিনি আরও জানান, দাউদকান্দি থানার একটি নারী নির্যাতন মামলার ভুয়া ওয়ারেন্ট দেখিয়ে তাকে আটকে রাখা হয়। পতেঙ্গা থানার ওসি যাচাই করে জানতে পারেন যে, ওই মামলায় আসলে তার নামে কোনো ওয়ারেন্ট নেই। তিনি তাকে ছেড়ে দেন। কিন্তু, বিকেল ৪টায় থানা কম্পাউন্ড থেকেই এসআই লিয়াকত তাকে আবারো আটক করে। তখন তাকে পাঁচ লাখ টাকা না দিলে- ক্রসফায়ারে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়।
এরপর, লিয়াকতকে দুই লাখ টাকা দেন এ ব্যবসায়ী। তারপরও, ছেড়ে না দিয়ে সদরঘাট থানায় একটি চাঁদাবাজির মামলায় আটকে রেখে নির্যাতন করে পরদিন আদালতে হাজির করা হয়। এরপর একদিন রিমান্ডেও নেওয়া হয়। ১৯ দিন জেল খাটার পর জামিনে বের হন জসীম উদ্দিন।