সিস্টেম ফেইলিওরের জন্যই কারখানায় অগ্নিকাণ্ড: সাবেক ফায়ার সার্ভিস ডিজি
নারায়ণগঞ্জের কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে ৫২ শ্রমিকের মৃত্যুর জন্য 'সিস্টেম ফেইলিওর'কে দায়ী করেছেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সাবেক মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) আবু নাঈম মো. শহীদুল্লাহ। তিনি জাতীয় শিল্প স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা কাউন্সিলেরও একজন সদস্য।
তিনি বলেন, কারখানাটির বাস্তবায়ন পর্যায়ে 'সিস্টেম ফেইলিওর' ছিল।
কারখানার মালিকপক্ষের পাশপাশি প্রতিষ্ঠানটির শ্রমিকের নিরাপত্তা দেখার ক্ষেত্রে যাদের দায়িত্ব ছিল, তাদের বিচারের আওতায় আনা এবং 'ক্যাপিটাল পানিশমেন্ট' দেওয়ার পরামর্শও দিয়েছেন তিনি। তিনি বলেন, "আমাদের অনেক ভাল ভাল আইন আছে, কিন্তু তা সঠিক বাস্তবায়নের অভাব রয়েছে"।
আবু নাঈম মো. শহীদুল্লাহ বলেন, "সিস্টেম ফেইল করেছে বলেই এত বড় ঘটনা ঘটেছে। তাজরীনের ঘটনার পর আমরা সোচ্চার ছিলাম যাতে কোন কারখানায় তালা না থাকে। কিন্তু এতদিন পরে এসেও সেই তালা দেখা গেল। নিয়ম হচ্ছে, প্রতিটি কারখানায় শ্রমিক ও মালিকপক্ষের প্রতিনিধিদের সমান অংশগ্রহণে সুরক্ষা কমিটি থাকবে। তাদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে যাতে আগুন লাগলে নিরাপদে বের হয়ে আসতে পারে। নিয়মিত ফায়ার ড্রিল হবে। কিন্তু আদৌ কি সেখানে কোন নিরাপত্তা কমিটি ছিল? এটি দেখার দায়িত্ব কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের (ডাইফ)।
তিনি বলেন, "পোশাক খাতে যে কমপ্লায়েন্স তৈরি হয়েছে, এর কৃতিত্ব বায়ারদের। তারা বাইরের লোক এনে ইনসপেকশন করিয়েছে। আরএমজি খাতের বাইরে লোকবল সংকটকে দোষ দিলে সমস্যার সমাধান হবে না। প্রতি বছর কিছু নতুন নিয়োগ হবে, তবে সংকট সংকটের জায়গায় থেকে যাবে।"
এই সমস্যা সমাধানে থার্ড পার্টির মাধ্যমে দ্রুত কারখানাগুলো ইনসপেকশন করার পরামর্শ দেন তিনি। এ লক্ষ্যে দ্রুত ক্রাশ প্রোগ্রাম চালানোর পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, "বাস্তবভিত্তিক ফায়ার ড্রিল থাকা, ছাদ খোলা রাখা, আগুন লাগলে ইভাকুয়েশন প্ল্যান থাকার মত বিষয়গুলো এখানে থাকতে হবে"।
তিনি আরও বলেন, "মালিকপক্ষের নিজস্ব কিংবা আর্থিক ক্ষমতা থাকে। কিন্তু সরকারের রাজনৈতিক ক্ষমতার চাইতে তা বড় নয়"।
এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীদেরও জোটবদ্ধ হওয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, "জনগণের কাছে প্রত্যেকের দায়বদ্ধ থাকতে হবে"।
মালিকপক্ষের পাশাপাশি যারা ট্রেড লাইসেন্স দিয়েছেন, কিংবা আইনের বাস্তবায়নে দুর্বলতা দেখিয়েছেন, তাদেরও শাস্তি হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন আবু নাঈম মো. শহীদুল্লাহ। তিনি বলেন, "মৌখিক নোটিশ দেওয়ার কোন সুযোগ নেই"।
এ ধরণের দুর্ঘটনায় দায়ী কর্মকর্তাদের শাস্তির অতীত অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বলেন, "রানা প্লাজার ঘটনায় কেবল একজনকে শাস্তির মুখে পড়তে হয়েছিল"।
"এখন সরকার তদন্ত করছে এবং তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশও করছে। কিন্তু কার কতটুকু দুর্বলতা এবং ভবিষ্যতে যাতে এ ধরণের পরিস্থিতি না হয়, প্রতিবেদনে তা সুনির্দিষ্টভাবে থাকা দরকার", যোগ করেন তিনি।