নিদারুণ যন্ত্রণার এক বিদায়
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গের সামনে বসে ছিলেন হৃদয় ও রিয়া মনি। বিয়ের মেহেদি রিয়ার হাত থেকে এখনও উঠেনি। কিন্তু সেই মেহেদি রাঙা হাতেই স্বামী হৃদয়কে জড়িয়ে ধরে কাঁদছিলেন দুজনেই।
সোমবার উত্তরায় বিআরটির একটি গার্ডার আকস্মিকভাবে গাড়ির ওপর পড়লে সদ্যবিবাহিত এই দম্পতির জীবন মুহূর্তের মধ্যে বদলে যায়। নিহত হয় দুজনের পরিবারের পাঁচ সদস্য। রিয়া ও হৃদয় বেঁচে গেলেও ফিরলেন প্রিয়জন হারানোর এক যন্ত্রণা আর বিভীষিকাময় এক স্মৃতি নিয়ে।
'আমার মা আমার কোলেই মারা যান, কিন্তু কিচ্ছু করতে পারিনি। আমি তাকে পানিও দিতেও পারিনি। আমার মতো দুর্ভাগা কেউ নেই। সব হারিয়েছি আমি,' বলেন রিয়া।
দুর্ঘটনার স্থলেই রিয়ার মা ফাহিমা আক্তার, রিয়ার শ্বশুর আইয়ুব হোসেন রুবেল, রিয়ার খালা ঝর্ণা ও তার দুই সন্তানসহ পরিবারের পাঁচ সদস্য মারা যান।
দক্ষিণখান কাওলা এলাকায় বিবাহোত্তর পারিবারিক অনুষ্ঠান শেষে তারা আশুলিয়ায় কনের বাড়ি যাচ্ছিলেন এবং গাড়ি চালাচ্ছিলেন হৃদয়ের বাবা।
রিয়া মনি কাঁদতে কাঁদতে বলেন, 'শ্বশুরের চেয়ে বেশি তিনি আমার বাবার মতো ছিলেন। নিজেই আমাদের আশুলিয়ায় নিয়ে যাচ্ছিলেন আর এটাই ছিল তার শেষ যাওয়া'।
দুর্ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে হৃদয় বলেন, 'কোনো নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছাড়াই গার্ডারটি রাস্তায় ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল। গার্ডারের নিচ দিয়ে যানবাহন পার হচ্ছিল এবং আমাদের গাড়িও অন্যদের মতো যেতে থাকে। আমরা কল্পনাও করিনি যে ক্রেনটি ওজনের জন্য বেঁকে যাবে এবং গার্ডারটি নিচে পড়ে পরিবারের পাঁচজনকে মেরে ফেলবে। সৌভাগ্যবশত আমি ও আমার স্ত্রী গাড়ির বাম পাশে ছিলাম এবং এটাই আমাদের বেঁচে যাওয়ার একমাত্র কারণ।'
কিন্তু এই অবহেলার দায় কার?
'এর কোনো ক্ষতিপূরণ হতে পারে না। শুধু ন্যায়বিচারই এর একমাত্র সান্ত্বনা হতে পারে, যদি কি না আদৌ ন্যায়বিচার পাওয়া সম্ভব হয়,' বলেন হৃদয়।
মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের মর্গ থেকে স্বজনরা নিহতদের মরদেহ নিয়ে যায়। ফাহিমা আক্তার (৩৮), তার বোন ঝর্ণা আক্তার (২৭) এবং ঝর্ণার দুই সন্তান জান্নাতুল (৬) ও জাকারিয়ার (৪) মরদেহ তাদের গ্রামের বাড়ি জামালপুরের মেলান্দহে নিয়ে যাওয়া হয়।
হৃদয়ের মা শাহিদা খানম তার স্বামী আইয়ুব আলী হোসেন রুবেলের (৫৫) মরদেহ গ্রহণ করেন। আইয়ুব আলীর ভাই জানান, মরদেহ প্রথমে মানিকগঞ্জের সিংগাইরে শাহিদার গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হবে। সিংগাইরে জানাজা শেষে মরদেহ মেহেরপুরের ঘোড়ামারা রাজনগর এলাকায় আইয়ুবের নিজ গ্রামে নিয়ে দাফন করা হবে।