শ্রমিকদের আন্দোলনে ১ কোটি কেজি কাচা চা পাতা নষ্টের দাবি বাগান মালিকদের
বেতন বৃদ্ধির দাবিতে চা শ্রমিকদের দেশব্যাপী অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট আবারও শুরু হওয়ায় এক কোটি কেজির বেশি কাঁচা চা পাতা নষ্ট হয়ে গেছে বলে দাবি করেছে বাগান মালিকরা।
শ্রমিকরা কর্মবিরতিতে থাকায় প্রচুর লোকসানের কথা জানিয়ে মালিকরা শ্রীমঙ্গল থানায় জিডি (সাধারণ ডায়েরি) দায়ের করেছেন।
এদিকে, ৩০০ টাকা মজুরি বৃদ্ধিসহ কয়েকটি দাবি নিয়ে সারাদেশে কর্মবিরতি পালন করছে বাংলাদেশ চা শ্রমিকরা। তাদের দাবি ১২০ টাকা বেতন দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির এই বাজারে তারা অমানবিক জীবন কাটাচ্ছেন, বেতন বৃদ্ধি না হলে তারা আন্দোলন করে যাবেন।
ডিনস্টন (খেজুরী ছড়া) চা বাগানের সহকারি ব্যবস্থাপক খালিদ হাসান রুমী গতকাল রাতে শ্রীমঙ্গল থানায় একটি জিডির আবেদন করেছেন, আবেদনে তিনি দাবি করেন শ্রমিক ধর্মঘটের ফলে ৯৯ হাজার ২০০ কেজি কাচা পাতা প্রক্রিয়াজাত করা সম্ভব হয়নি। এই কাচা চা পাতা থেকে ২২ হাজার কেজি চা উৎপাদিত হত যার বাজার মূল্য আনুমানিক ৫০ লাখ টাকা।
১ লাখ ৫৩ হাজার কেজি চা পাতা নষ্ট হওয়ার অভিযোগ করেছেন রাজঘাট চা বাগানের ব্যবস্থাপক মাঈনুল এহছান। গত কাল তিনি এ বিষয়ে শ্রীমঙ্গল থানায় একটি জিডি করেছেন।
জঙ্গলবাড়ি চা বাগানের ব্যবস্থাপক তারেক আহমদ চৌধুরী দাবি করেছেন তার বাগানের ৩৫ হাজার কেজি চা পাতা নষ্ট হয়েছে।
ফিনলে চা কোম্পানির চিফ অপারেটিং অফিসার তাহসিন আহমদ চৌধুরী জানিয়েছেন তাদের বিভিন্ন বাগানে ৩৫ কোটি টাকার চা পাতা নষ্ট হয়েছে।
টি অ্যাসোসিয়েশন তথ্য মতে , আন্দোলনের কারণে সিলেট ও চট্টগ্রামের ১৬৮ চা বাগানে থেকে দৈনিক ২০ কোটি টাকারও বেশি মূল্যের চা পাতা নষ্ট হচ্ছে বলে দাবি বাগান মালিকদের।
শ্রীমঙ্গল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) হুমায়ুন কবির জানান, আমরা গতকাল থেকে কয়েকটি বাগানের পক্ষ থেকে কাচা চা পাতা নষ্টের কারণে সাধারণ ডায়রির আবেদন পেয়েছি। প্রতিটি কারখানা সরেজমিনে ভিজিট করে সত্যতা নিশ্চিত করা হবে।
বাংলাদেশ চা সংসদের সিলেট বিভাগের চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ শিবলী বলেন, 'মজুরি বাড়ানো নিয়ে মালিকপক্ষের সঙ্গে শ্রমিকদের আলোচনা চলছিল। আলোচনা চলাকালে এভাবে কাজ বন্ধ করে আন্দোলন করা বেআইনি।'
শ্রমিকদের সঙ্গে সমঝোতার প্রসঙ্গে গোলাম মোহাম্মদ শিবলী বলেন, 'আমরা সরকারকে অনুরোধ করেছি যাতে শ্রমিকদের কাজে ফেরানোর ব্যবস্থা করা হয়।'
উল্লেখ্য, এক সপ্তাহ ধরে দৈনিক ৩০০ টাকা মজুরির দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে আসছেন শ্রমিকরা। শনিবার থেকে ১৬৬টি বাগানে শুরু করেছেন অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট। ধর্মঘট চালাকালে দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভও করেন তারা।
প্রতি দুই বছর অন্তর বাগান মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ চা সংসদের সঙ্গে ও শ্রমিকদের সংগঠন বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের মধ্যে আলোচনাসাপেক্ষে শ্রমিকদের মজুরি পুনর্নির্ধারণ করা হয়।
২০২০ সালে চা শ্রমিকদের মজুরি ১১৮ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১২০ টাকা নির্ধারণ করে মালিকপক্ষ। সেই চুক্তির দুই বছর পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত শ্রমিকদের মজুরি বাড়ানো হয়নি।
চা শ্রমিক ইউনিয়নের সিলেট ভ্যালির সভাপতি রাজু গোয়ালা বলেন, আমরা মজুরি ১২০ থেকে বাড়িয়ে ৩০০ টাকা করার দাবি জানিয়েছি। কিন্তু এতেও কোনো সাড়া না পেয়ে ৮ আগস্ট থেকে আন্দোলন শুরু করি। এরপর বৃহস্পতিবার মালিকপক্ষ ও শ্রমিক নেতাদের নিয়ে সমঝোতা বৈঠক আহ্বান করে বিভাগীয় শ্রম অধিদপ্তর। এতে শ্রমিক নেতারা গেলেও মালিকপক্ষের কেউ আসেননি। ফলে শনিবার থেকে আমরা দেশের সবগুলো চা বাগানের ধর্মঘট শুরু করেছি।'
চা শিল্পের এই অচলাবস্থা কাটাতে বাগান মালিক নেতৃবৃন্দ ও শ্রমিক নেতৃবৃন্দের নিয়ে বৈঠক আহ্বান করে বিভাগীয় শ্রম অধিদপ্তর। মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে ওই বৈঠকে শ্রমিকরা যোগ দিলেও মালিকরা যাননি।
বৈঠকে অংশ নেয়া একাধিক শ্রমিক নেতা জানান, বৈঠকে শ্রম অধিদপ্তরের নেতারা মালিকদের হয়ে কথা বলেন। তারা ধর্মঘট প্রত্যাহারের জন্য শ্রমিকদের চাপ দেন। এভাবে ধর্মঘট আহ্বান আইন পরিপন্থি বলেও অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা মন্তব্য করেন।
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নিপেন পাল বলেন, 'পরিবহন শ্রমিকরা হুট করে ধর্মঘট ডেকে বসলে সেটা আইন পরিপন্থি বলা হয় না। অথচ আমরা ন্যায্য দাবি দীর্ঘদিন ধরে জানিয়ে ব্যর্থ হয়ে আগে থেকে ঘোষণা দিয়ে ধর্মঘটে গেলাম। এটাকে বলা হচ্ছে আইন পরিপন্থি!'