৩ বিভাগে পেট্রল পাম্প মালিকদের প্রতীকী ধর্মঘট
জ্বালানি তেল বিক্রয়ের কমিশন বৃদ্ধিসহ তিন দফা দাবিতে প্রতীকী ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে পেট্রোলিয়াম ডিলার্স ডিস্ট্রিবিউটরস এজেন্টস অ্যান্ড পেট্রল পাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন।
বগুড়াসহ উত্তরের ১৬ জেলায় ১২ ঘণ্টার এ প্রতীকী ধর্মঘট চলছে।
সোমবার ভোর থেকে কোনো ট্যাংকলরি উত্তরাঞ্চলের বাঘাবাড়ী ডিপোর উদ্দেশ্যে বগুড়া ছেড়ে যায়নি। এ ছাড়াও খুলনা বিভাগের ১০ জেলাতে ডিপো থেকে তেল উত্তোলন বন্ধ রয়েছে।
ধর্মঘটের বিষয়টি নিশ্চিত করেন বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম ডিলার্স ডিস্ট্রিবিউটরস এজেন্টস অ্যান্ড পেট্রল পাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের রাজশাহী-রংপুর বিভাগের সভাপতি মিজানুর রহমান রতন।
পেট্রোল পাম্প মালিক সমিতির দাবিগুলো হচ্ছে- জ্বালানি তেল বিক্রিতে প্রচলিত কমিশন কমপক্ষে সাড়ে ৭ শতাংশ করা, জ্বালানি তেল ব্যবসায়ীদের কমিশন এজেন্ট গেজেট আকারে প্রকাশ, সড়ক ও জনপথ বিভাগ কর্তৃক পেট্রল পাম্পের প্রবেশ দ্বারের ভূমির জন্য ইজারা গ্রহণের প্রথা বাতিল, পেট্রল পাম্পের ওপর ট্রেড লাইসেন্স ও বিস্ফোরক লাইসেন্স ছাড়া অন্য সংস্থার লাইসেন্স প্রথা বাতিল করতে হবে।
সোমবার সকালে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ডিপো থেকে তেল আনা বন্ধ থাকলেও ভোক্তা সাধারণরা পাম্পগুলো থেকে জ্বালানি তেল ক্রয় করতে পারছেন।
সকালে শহরের বগুড়া ফিলিং স্টেশনের ক্যাশিয়ার মানিক মিয়া বলেন, আমাদের মোট চারটি ট্যাংকলরি। রাত থেকেই সেগুলো স্টেশনে আছে। কারণ সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত ডিপো থেকে তেল আনা বন্ধের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। প্রতিষ্ঠান মালিক পরবর্তীতে যে নির্দেশনা দিবেন, সেই অনুযায়ী আমরা কাজ করব।
সংগঠন সূত্র জানায়, রাজশাহী ও রংপুর বিভাগে প্রায় সাড়ে ৪০০টি পেট্রল পাম্প রয়েছে। এর মধ্যে বগুড়ায় রয়েছে অন্তত ৮০টি।
সংগঠনের সভাপতি মিজানুর রহমান রতন জানান, এ ছাড়া একটি পাম্প করতে ট্রেড, বিস্ফোরক, ফায়ার সার্ভিস, পরিবেশসহ অন্তত ৭ ধরনের লাইসেন্স লাগে। এর মধ্যে কলকারখানার লাইসেন্স রয়েছে। কিন্তু আমাদের প্রতিষ্ঠান কোনো দিক থেকেই কারখানার মধ্যে পড়ে না। এসব লাইসেন্স রিনিউ করতে সরকারি ফির চেয়ে ঘুষ দিতেই হয় কয়েকগুণ। অথচ আমাদের আয়-লাভের কোনো পরিমাণ বাড়েনি।
তিনি বলেন, 'এ জন্য আমরা দাবি জানিয়েছি শুধু ট্রেড ও বিস্ফোরক লাইসেন্স ছাড়া বাকিগুলো বাতিল করতে হবে।'
মিজানুর রহমান বলেন, 'ভারতে এখনও ডিপো থেকে তেল সরবরাহ করা হয়। আর আমাদের দেশে এই খরচ নিজেদের পকেট থেকে যায়। ৯ হাজার লিটারের একটি ট্যাংকলরি বগুড়া থেকে বাঘাবাড়ী ডিপোতে আপডাউন করলে ১১ হাজার টাকা খরচ হয়। এখন ডিজেল-মবিল খরচ বেড়েছে। কিন্তু কমিশন কী বেড়েছে, বাড়েনি।'
পাম্প মালিক সংগঠনের এই নেতা বলেন, বর্তমানে প্রতি লিটার জ্বালানি তেলের মূল্যের (পূর্ব মূল্য) প্রায় ২ দশমিক ৭১ টাকা কমিশন দেওয়া হয়। অতীতে কমিশন বৃদ্ধির জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তর বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনে (বিপিসি) একাধিকবার আবেদন করেও কোনো ফলাফল পাওয়া যায়নি। জ্বালানি তেলের মূল্য বর্তমানে অনেক বৃদ্ধি পেলেও তাদের কমিশনের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়নি। এ অবস্থায় কমিশন প্রতি লিটার জ্বালানি তেলের বর্তমান মূল্যের ৭ দশমিক ৫ শতাংশ হারে প্রদানের দাবি জানানো হয়।
সভাপতি মিজানুর আরও বলেন, রাতে ঢাকা যাচ্ছি। সেখানে বৈঠক হবে। দেখা যাক তারা কি সিদ্ধান্ত দেন। এর ওপর ভিত্তি করে আমাদের ধর্মঘটের পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
এর আগে একই দাবিতে গত ৭ আগস্ট সকাল ৮টা থেকে ২৪ ঘণ্টার জন্য ধর্মঘট শুরু করেছিলো বাংলাদেশ ট্যাংকলরি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন ও জ্বালানি তেল পাম্প মালিক সমিতি। তবে ৯ ঘণ্টা ধর্মঘট পালনের পর প্রশাসনের আশ্বাসে স্থগিত করা হয়েছিল সে ধর্মঘট।
গত ৫ আগস্ট রাতে দাম বাড়ানো হয় জ্বালানি তেলের। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রাত ১২টার পর থেকে ডিপোর ৪০ কিলোমিটারের মধ্যে ভোক্তা পর্যায়ে খুচরা মূল্য (১ লিটার) ডিজেল ও কেরোসিন ১১৪ টাকা, অকটেন ১৩৫ টাকা এবং পেট্রোল ১৩০ টাকা হবে।
তার আগে পর্যন্ত কেরোসিন ও ডিজেল প্রতি লিটার ৮০ টাকা, অকটেন ৮৯ টাকা এবং পেট্রোল ৮৬ টাকায় বিক্রি হয়েছে।