দেশে সিজারিয়ান অস্ত্রোপচার ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে: বিআইডিএস
দেশে 'সি-সেকশন' তথা সিজারিয়ান অস্ত্রোপচারের মাত্রা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের (বিআইডিএস) এক সমীক্ষায় এ তথ্য উঠে এসেছে।
বুধবার (২৮ সেপ্টেম্বর) 'ম্যাসিভ বুম অফ সি-সেকশন ডেলিভারি ইন বাংলাদেশ: এ হাউসহোল্ড লেভেল অ্যানালাইসিস (২০০৪-২০১৮)' শীর্ষক এক সেমিনারে এ তথ্য জানানো হয়। বিআইডিএস মহাপরিচালক ড. বিনায়ক সেনের সভাপতিত্বে সেমিনারে বক্তব্য রাখেন বিআইডিএস রিসার্চ ফেলো ড. মোঃ আব্দুর রাজ্জাক সরকার।
সমীক্ষায় এসেছে, বাংলাদেশসহ পুরো বিশ্বেই সিজারিয়ান অস্ত্রোপচারের হার দ্রুত বাড়ছে। দেশে সি-সেকশনের প্রবণতা মূল্যায়ন এবং পেছনের কারণগুলো খুঁজে বের করার চেষ্টা করা হয়েছে এই সমীক্ষায়।
২০০৪ এবং ২০১৮ সালের মধ্যে বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফিক অ্যান্ড হেলথ সার্ভেস (বিডিএইচএস)- এর সর্বশেষ পাঁচটি জরিপ থেকে তথ্য বিশ্লেষণ করেছে বিআইডিএস। এই সমীক্ষার জন্য ১৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সী মোট ২৭,৩২৮ জন বিবাহিত নারীর ডেটা অন্তর্ভুক্ত করা হয়, যারা জরিপের দুই বছর আগে সন্তান প্রসব করেছিলেন।
সমীক্ষা অনুসারে, ২০০৪ সালে বাংলাদেশে প্রসূতিদের মধ্যে ৩.৯৯% এর মধ্যে সি-সেকশনের প্রবণতা ছিল, যা ২০১৭-১৮ সালে এসে আটগুণ বর্ধিত হয়ে দাঁড়ায় ৩৩.২২%। যদিও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) সুপারিশ অনুযায়ী, কোনো দেশে মোট প্রসবের ১৫% এর বেশি সিজারিয়ান অপারেশন হওয়া সমীচীন নয়।
২০০৪ থেকে ২০১৭-১৮ সাল পর্যন্ত সি-সেকশন ডেলিভারিতে বার্ষিক শতাংশ পরিবর্তন ছিল ১৬.৩৪% যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক; বিআইডিএস গবেষণায় আরও বলা হয়েছে, শহরে মায়েদের মধ্যে সিজারিয়ান অস্ত্রোপচারের হার বেশি (২০০৪ সালে ১২% এবং ২০১৭-১৮ তে ৪৪%)। যদিও গ্রামীণ মায়েদের সংখ্যাও কম উদ্বেগজনক নয়।
সি-সেকশন ডেলিভারির বার্ষিক শতাংশ পরিবর্তন শহুরে মায়েদের মধ্যে ছিল ১০%, অথচ গ্রামীণ মায়েদের ক্ষেত্রে এই সংখ্যা ২১%।
বিআইডিএস সমীক্ষায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশে সি-সেকশন ডেলিভারির জন্য খরচ পড়ে যায় প্রায় বিশ হাজার টাকা। সরকারি ফ্যাসিলিটির (১৩,৬২২ টাকা) তুলনায় বেসরকারি ফ্যাসিলিটিতে (২১,৫০৬ টাকা) গড় খরচের তারতম্য লক্ষ্যণীয়। অন্যদিকে যারা এনজিও ফ্যাসিলিটি থেকে সি-সেকশন পরিষেবা গ্রহণ করেন তাদের ক্ষেত্রে খরচ পড়বে ১৬,৮৬০ টাকা।
মায়ের বয়স, অভিভাবকের শিক্ষাগত যোগ্যতা, পেশা, বিএমআই, প্রথম গর্ভাবস্থার সময় মায়ের বয়স, এএনসি ইউটিলাইজেশন, প্রশাসনিক বিভাগ এবং আর্থিক অবস্থার মতো একাধিক কারণ বাংলাদেশে সিজারিয়ান অস্ত্রোপচারের ক্রমবর্ধমান হারের উপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলেছে, মত বিআইডিএসের।