এক মাসের বিলম্বে উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যয় বাড়ে ০.৯৫%: বিআইডিএস
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ (বিআইডিএস) পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, এক মাসের বিলম্বে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের ব্যয় গড়ে ০.৯৫ শতাংশ বেড়ে যায়।
এ হিসাবে আনুমানিক ১০ হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্পের মেয়াদ যদি কোনো কারণ, বিশেষ করে ভূমি অধিগ্রহণের কারণে এক মাস বেড়ে যায় তাহলে সে প্রকল্পের ব্যয় বাড়বে আরো ৯৫ কোটি টাকা।
ভূমি অধিগ্রহণের বিদ্যমান নিয়মের কোনো সংস্কার না করলে প্রকল্প বাস্তবায়নের মেয়াদ ও ব্যয়ের এই বৃদ্ধি কমানো কঠিন হবে বলে জানিয়েছে বিআইডিএস।
বৃহস্পতিবার (১৮ মে) বিআইডিএস-এর গবেষণা সহযোগী জায়েদ বিন সাত্তার 'টাইম অ্যান্ড কস্ট ওভাররান ইন ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টস: এভিডেন্স ফ্রম অডিট রিপোর্টস অফ রোডস প্রজেক্টস' শীর্ষক একটি গবেষণাপত্রের মূল বিষয় তুলে ধরেন।
প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধির অন্যান্য কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে কাজের নির্দেশ দিতে দেরি হওয়া, মূল্য বৃদ্ধি, দক্ষ জনবলের অভাব, স্টেকহোল্ডারদের সাথে সমঝোতা না হওয়া এবং দাতা সংস্থার পরামর্শক নিয়োগে বিলম্ব।
গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর একাধিক সংশোধনী আসে, যার কারণে মেয়াদ ও ব্যয় উভয়ই বাড়ে।
মেয়াদ ও ব্যয় বেড়ে যাওয়ার ফলে প্রকল্পগুলো থেকে প্রত্যাশিত সুবিধা পেতেও বিলম্ব হয়; যার ফলে সেগুলো অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়ে। আবার আর্থিক দিক থেকে ওয়েলফেরা লস হয়, সেইসাথে ওই প্রকল্পের পরিপূরক ব্যক্তিগত বিনিয়োগও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
গবেষণার ফলাফল অনুসারে, "ঋণের মাধ্যমে অর্থায়নকৃত প্রকল্পের ক্ষেত্রে বাস্তবায়নের মেয়াদ বাড়লে সুদের হার বাড়তে থাকে এবং তা এ অর্থ পরিশোধের মেয়াদে প্রভাব ফেলে।"
জায়েদ বিন সাত্তার অনুষ্ঠানে আরো বলেন, সড়ক ও জনপথ বিভাগ (আরএইচডি) গত দশ বছরে নির্ধারিত মেয়াদ ও ব্যয়ের হিসাব বজায় রেখে মাত্র ১৩.৬১% উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পেরেছে।
এর বিপরীতে, ২০১২-১৩ অর্থবছর থেকে ২০২১-২২ অর্থবছরে আরএইচডি এর বাস্তবায়িত প্রায় ৮০% প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি পেয়েছে। একইসঙ্গে প্রায় ৫৬% প্রকল্পের ব্যয় বাড়ানো হয়েছে।
তিনি বলেন, সরকার গত এক দশকে পরিবহন ও যোগাযোগ খাতকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছে। চলতি অর্থবছরে এই খাতের জন্য বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) ২৮.৭% বরাদ্দ রাখা হয়েছে এ খাতের জন্য, যেখানে ২০১৩-১৪ তা ছিল ২৩.৩%।
পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য ডক্টর মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়া বলেন, প্রকল্প বাস্তবায়নে বিলম্বের একমাত্র কারণ জমি অধিগ্রহণ নয়।
প্রকল্প প্রণয়ন ও অনুমোদনের সময় সংশ্লিষ্ট সংস্থার পক্ষ থেকে অনেক গুরুত্ব দেওয়া হলেও বাস্তবায়ন পর্বে অবহেলা করা হয় বলেও জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, প্রকল্পে বিলম্বের একটি উল্লেখযোগ্য কারণ অর্থায়নের সীমাবদ্ধতা।