কাস্টমসের সফটওয়্যার ত্রুটি, জেটিতে জাহাজ ভিড়িয়েও পণ্য খালাসে জটিলতা
নিয়ম অনুযায়ী চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্যবাহী জাহাজ আসার ২৪ ঘণ্টা আগে কাস্টমসের সফটওয়্যার অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড সিস্টেমে আইজিএম (ইমপোর্ট জেনারেল ম্যানিফেস্ট) দাখিল করে সংশ্লিষ্ট শিপিং এজেন্ট।
কিন্তু গত ১ সপ্তাহ ধরে সফটওয়্যার জনিত ত্রুটির কারণে চট্টগ্রাম বন্দরে কাস্টমস থেকে রেজিট্রেশন নম্বর ইস্যু এবং আইজিএম প্রেরণে বিলম্ব হচ্ছে।
এর ফলে চট্টগ্রাম বন্দরে আসা জাহাজগুলো থেকে কন্টেইনার খালাসে সমস্যা হচ্ছে। আমদানি কন্টেইনারবাহী জাহাজ ঘাটে অলস অবস্থান করছে। শুধু তাই নয়, সফটওয়্যার আপগ্রেডেশনজনিত ত্রুটির কারণে বিপজ্জনক পণ্যবাহী (ডেঞ্জারাস গুড-ডিজি কার্গো) কন্টেইনার খালাসেও জটিলতা সৃষ্টি হচ্ছে বলে জানিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।
এমন ঘটনার প্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ গত ১৬ অক্টোবর চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের টার্মিনাল ম্যানেজার চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনারকে একটি চিঠি দিয়েছেন।
এতে উল্লেখ করা হয়, অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড সিস্টেমে আপগ্রেডের পর পূর্বের ন্যায় বিপজ্জনক পণ্য চালানের বিল অব লোডিং (বিএল) ভিত্তিক তালিকা দেখা সম্ভব হচ্ছে না। এ কারণে বাংলাদেশ নৌবাহিনী কর্তৃক বিপজ্জনক (ডিজি) পণ্য চালানের অবতরণ অনুমতি যাচাই করা সম্ভব হচ্ছে না।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, গত ১৩ অক্টোবর মালয়েশিয়ার পোর্ট কেলাং থেকে আসা 'ইএফ এমা' জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরের এনসিটি ৩ জেটিতে বার্থিং নেয়। আইজিএম না পাওয়ায় জাহাজের কন্টেইনার খালাস যথাসময়ে শুরু করা সম্ভব হয়নি। এতে বন্দরের সামগ্রিক অপারেশনাল কার্যক্রমে জটিলতা সৃষ্টি হচ্ছে এবং জাহাজে কন্টেইনার হ্যান্ডলিং কার্যক্রম বিঘ্নিত হচ্ছে।
জাহাজ বার্থ নেয়ার ২৪ ঘণ্টা পূর্বে চট্টগ্রাম বন্দরের নিজস্ব সিস্টেমে আইজিএম আপলোড করার লক্ষ্যে যথাসময়ে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ হতে আইজিএম প্রেরণ করার জন্য অনুরোধ করা হয় ওই চিঠিতে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বিভিন্ন সময় অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড সিস্টেম মাইগ্রেশন করে। গত ১৪ অক্টোবর রাত ৮টা থেকে ১৫ অক্টোবর সকাল ৮টা পর্যন্ত মাইগ্রেশন কার্যক্রম চলে। ওই সময় আমদানি-রপ্তানি পণ্য চালানের বিল অব এন্ট্রি দাখিল, শুল্কায়ন, ডিউটি পেমেন্ট পরিশোধ বন্ধ থাকে। মাইগ্রেশন হওয়ার পর থেকে তথ্য প্রাপ্তির ক্ষেত্রে বিপাকে পড়ে যায় বন্দর কর্তৃপক্ষ।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনার মোহাম্মদ ফাইজুর রহমানের সাথে টেলিফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি সাড়া দেননি। তবে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের প্রোগ্রামার শামিমুল ইসলাম টিবিএসকে জানিয়েছেন, আইজিএম সংক্রান্ত জটিলতা ইতোমধ্যে নিরসন করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দরের পরিবহন বিভাগের সাথে যোগাযোগ করা হলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আইজিএম প্রাপ্তিতে বিলম্বের বিষয়টি এখনো সমাধান হয়নি।
চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব মোঃ ওমর ফারুকের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, 'প্রায়ই সফটওয়্যার সংক্রান্ত জটিলতায় কারণে আইজিএম প্রাপ্তির ক্ষেত্রে জটিলতা সৃষ্টি হয়। এবারও একই রকম পরিস্থিতি হয়েছে। তাই বিষয়টি আমরা কাস্টমস কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানিয়েছি।'
বাংলাদেশ শিপিং এজেন্টস এসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ বলেন, 'শিপিং এজেন্টরা বন্দরে জাহাজ আসার ২৪ ঘণ্টা আগে আইজিএম শুল্ক বিভাগের সফটওয়্যারে সাবমিট করে। সফটওয়্যার জটিলতার কারণে যদি পণ্য খালাসে বিলম্ব হয় তাহলে একদিন বিলম্বের কারণে জাহাজের ভাড়া বাবদ ১২ থেকে ২০ হাজার ডলার জরিমানা গুনতে হয়। সফটওয়্যার জটিলতার কারণে যেন এই সেক্টর ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, তাই সেবাদানকারী সকল প্রতিষ্ঠানকে ভূমিকা রাখতে হবে।'