আমদানিকারকদের বিপজ্জনক পণ্য দ্রুত ডেলিভারি নিতে তাগিদ চট্টগ্রাম বন্দরের
বন্দরের কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে আমদানিকারকদের বিপজ্জনক পণ্য দ্রুত ডেলিভারি নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ।
চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি, বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন এবং ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়ার্ডিং এজেন্টদের কাছে এক চিঠিতে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ (সিপিএ) উল্লেখ করেছে, সম্প্রতি বিপজ্জনক সামগ্রী বহনকারী কনটেইনার ক্লিয়ারেন্সে ধীরগতি দেখা যাচ্ছে।
বন্দরের টার্মিনাল ম্যানেজার স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়, বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরে বিভিন্ন আমদানিকারকের ১ হাজার ৫৭১ টিইইউ (টুয়েন্টি ফুট ইকুয়েভিলেন্ট ইউনিট) বিপজ্জনক পণ্য পড়ে আছে। বন্দরের স্বাভাবিক অপারেশনাল কার্যক্রম বজায় রাখার স্বার্থে এ সকল বিপজ্জনক (ডিজি কার্গো) পণ্য দ্রুত ডেলিভারি নেওয়া আবশ্যক।
চিঠিতে বলা হয়, দুর্ঘটনা রোধে সঠিক তথ্য দিয়ে আইএমডিজি (ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম ডেঞ্জারাস গুডস) কোড অনুযায়ী ডিজি কার্গোর প্যাকিং করতে হবে। বাংলাদেশ নেভি এবং সংশ্লিষ্ট সংস্থা সমূহের গাইড লাইন অনুসরণ করে ডিজি কার্গো দ্রুত ডেলিভারি নেওয়া চট্টগ্রাম বন্দরের স্থাপনার জন্য জরুরি।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুকের সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে, তিনি সাড়া দেননি।
চট্টগ্রাম কাস্টমস সিএন্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি জেনারেল কাজী মাহমুদ ইমাম বিলু বলেন, বন্দরে থাকা ডিজি কার্গোর মধ্যে রয়েছে ইন্ডাস্ট্রিয়াল কেমিক্যাল, জ্বালানিসহ বিভিন্ন পণ্য। বৈশ্বিক বাণিজ্য মন্দার কারণে শিল্প কারখানায় এখন উৎপাদন আগের তুলনায় কম। তাই আমদানিকারকরা পণ্য ডেলিভারিতে আগের তুলনায় বেশি সময় নিচ্ছে।
২০২০ সালে লেবাননের বৈরুত বন্দরে দুর্ঘটনার পর চট্টগ্রাম বন্দরে ডিজি কার্গো সংরক্ষণ, পরিবহন এবং ডেলিভারি নেওয়ার বিষয়টি আলোচনায় আসে। চট্টগ্রাম বন্দরে একাধিক নির্দেশনা জারি করলেও ডেলিভারিতে তেমন পরিবর্তন দেখা যায়নি।
এরমধ্যে ২০২২ সালের জুনে বেসরকারি আইসিডি বিএম কনটেইনার ডিপোতে হাইড্রোজেন পার অক্সাইড থেকে বিস্ফোরণে ৫১ জনের প্রাণহানীর বিষয়ে আবারো আলোচনায় আসে ডিজি কার্গোর বিষয়টি। ওই ঘটনার পর বিভিন্ন শিপিং কোম্পানি ডিজি কার্গো পরিবহন বন্ধ করে দেয়। সিঙ্গাপুর বন্দর কর্তৃপক্ষও বাংলাদেশ থেকে ডিজি কার্গো সংরক্ষণ সাময়িক বন্ধ রাখে।
বিএম ডিপোতে দুর্ঘটনার পর চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ সকল ব্যবসায়ী সংগঠনসহ স্টেকহোল্ডার প্রতিনিধিদের সাথে বন্দর ভবনে বৈঠক করে। ডিজি কার্গো পরিবহনে আমদানিকারক, রপ্তানিকারক, শিপিং এজেন্ট, সিএন্ডএফ এজেন্টসহ সংশ্লিষ্টদের ১৮ টি নির্দেশনা প্রদান করা হয়।
এসব নির্দেশনার মধ্যে ছিল- আমদানিকৃত সকল বিপজ্জনক পণ্য চট্টগ্রাম বন্দরে অবতরণের পর ৭২ ঘন্টার মধ্যে খালাস করা, কোনো ড্যামেজ কনটেইনারে ডিজি কার্গো পরিবহন না করা, ডিজি কার্গো অবতরণের ২৪ ঘন্টার পূর্বেই প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দিয়ে বাংলাদেশ নেভির অনুমতি নিশ্চিত করা, বাংলাদেশ নেভি এবং বিস্ফোরক অধিদপ্তরের নির্দেশনা যথাযথভাবে অনুসরণ করা, সকল ধরনের বিপজ্জনক পণ্য এবং পচনশীল পণ্য প্রথম অকশানেই নিষ্পন্ন করা এবং স্পট নিলাম করা।
চট্টগ্রাম বন্দরের এসব নির্দেশনার পরও বন্দর থেকে ডিজি কার্গো ডেলিভারিতে আশানুরূপ উন্নতি হয়নি। এর ফলে আবারো চিঠি দিয়ে ডিজি কার্গো ডেলিভারি নেওয়ার তাগাদা দিয়েছে বন্দর।