সন্তান হত্যার দায়ে মাকে ‘ব্যতিক্রমী’ দণ্ড
৮ বছরের সন্তান কাউসারকে গলা চেপে শ্বাসরোধে হত্যা করেন মা স্বপ্না বেগম। এ ঘটনায় নিহত সন্তানের বাবার দায়ের করা মামলায় লক্ষ্মীপুর জজ আদালত ব্যতিক্রমী এক রায় দিয়েছে।
১০ টাকার বায়না ধরায় নিজ সন্তান হত্যাকারী মা স্বপ্না বেগমকে দোষী সাব্যস্ত করে ১০ বছরের কারাদণ্ড এবং ৫ হাজার টাকা জরিমানার রায় দিয়েছেন আদালত।
তবে কারাগারের পরিবর্তে দণ্ডপ্রাপ্ত স্বপ্নাকে থাকতে হবে তার নিজ বাড়িতেই। রায়ে ওই নারীকে বাড়িতে থেকে তার ১০ বছর বয়সী ছেলে তথা কাউসারের ছোট ভাই সাব্বিরের দেখভাল করতে হবে।
বুধবার (১ মার্চ) দুপুরে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. রহিবুল ইসলাম মামলার এ রায় দেন।
জেলা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) জসিম উদ্দিন এসব কথা জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ছেলেকে হত্যার ঘটনায় সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে অভিযুক্ত স্বপ্না বেগম দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। আদালতের বিচারক দণ্ডপ্রাপ্ত নারীর বয়স, তার শিশুসন্তান থাকায় এবং আচার-আচরণ ভালো হওয়ায় মানবিক দিক বিবেচনা করে তাকে প্রবেশনে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন।
পিপি জসিম উদ্দিন আরও বলেন, স্বপ্না বেগম ভবিষ্যতে যে খারাপ কাজ করবেন না, ভালো কাজ করবেন এবং বাড়িতে থেকে সন্তানকে লালনপালন করবেন, বিষয়টি সমাজসেবা কার্যালয় তদারকি করবে।
মামলার এজাহার ও আদালত সূত্রে জানা গেছে, পারিবারিক কলহের জের ধরে নিজের শিশু সন্তানকে হত্যা করেন স্বপ্না। ২০১৯ সালের ১৪ অক্টোবর রাতে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার চররুহিতা ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের জালাল আহম্মদ হাওলাদারের বাড়িতে ওই ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় মামলার বাদী ছিলেন নিহত শিশু কাউসারের বাবা মো. রাসেল হোসেন (৩০)। কাউসারের বয়স ছিল ৮ বছর। রাসেল-স্বপ্না দম্পতির ঘরে আরও এক ছেলে রয়েছে। ৬ বছর বয়সী ওই ছেলের নাম সাব্বির।
সূত্র আরও জানায়, ঘটনার দুই বছর আগে চট্টগ্রামে অন্য আরেকটি মেয়েকে বিয়ে করেন রাসেল। এ নিয়ে প্রথম স্ত্রী স্বপ্না বেগমের সঙ্গে রাসেলের প্রায়ই ঝগড়া চলতো। ঘটনার রাতে কাউসার তার মা স্বপ্নার কাছে ১০ টাকার জন্য বায়না ধরে। এসময় তার মা তাকে ভাত খেতে বলে। কিন্তু শিশুটি ১০ টাকা নিয়ে অন্যকিছু খাওয়ার জন্য চাপাচাপি করলে মা স্বপ্না রেগে গিয়ে কাউসারের গলা চেপে ধরে। এতে তার মৃত্যু হয়।
ঘটনা ভিন্নখাতে নিতে মা স্বপ্না বেগম শিশু কাউসারের গলায় ওড়না পেঁচিয়ে ফাঁস দেওয়ার নাটক করেন। তার ছেলেকে অন্য কেউ ঝুলিয়ে হত্যা করেছে বলে প্রচার করেন তিনি।
ময়নাতদন্তে কাউসারকে 'গলাচেপে হত্যা করা হয়েছে' বলে প্রতিবেদন আসে। ঘটনার পরদিন শিশুটির বাবা মো. রাসেল তার স্ত্রী স্বপ্না বেগমকে আসামি করে সদর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। পুলিশ স্বপ্নাকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায়।