ঘূর্ণিঝড় মোখা: উপকূলে ফিরছে ফিশিং ট্রলার, দুর্যোগ মোকাবেলার প্রস্তুতিতে চট্টগ্রাম বন্দর
বঙ্গোপসাগরে গভীর নিম্নচাপ থেকে ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেওয়া 'মোখা' বর্তমানে যে গতিতে এগোচ্ছে সেভাবে এগোলে রবিবার (১৪ মে) আঘাত হানার আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন আবহাওয়া অধিদপ্তর। এজন্য কক্সবাজার সহ দেশের সকল সমুদ্রবন্দর সমূহকে ২ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারী সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
তবে এখনও পর্যন্ত কক্সবাজারের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। 'মোখা'র প্রভাবে সাগর কিছুটা উত্তাল হলেও স্বচ্ছ আকাশ আর তীব্র দাবদাহ বিরাজ করছে। সৈকতে লাল পতাকা টাঙ্গানো হয়েছে।
সি সেফ লাইফ গার্ড সংস্থার সিনিয়র লাইফ গার্ড কর্মী মোহাম্মদ শুক্কুর বলেন, তীব্র দাবদাহের পাশাপাশি সাগর উত্তাল হয়ে উঠছে। আর পর্যটকদের সর্তক করতে লাল পতাকা টাঙ্গানো হয়েছে। পর্যটকদের হাঁটু পানির নিচে নামতে দেয়া হচ্ছে না।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান জানিয়েছেন, সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় মোখার কারণে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সকল ধরণের প্রস্তুতি নিয়েছে। সকল উপজেলার কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। জেলার উপকূলীয় এলাকার সকল সাইক্লোন শেল্টার ও বিদ্যালয় সহ ৫৭৬টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ১০ লাখ ৩০ হাজার নগদ টাকা, ৪৯০ মেট্রিক টন চাল, ৭ মেট্রিক টন শুকনো খাবার, ১৯৪ বান্ডিল ঢেউ টিন মজুদ রাখা হয়েছে।
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাশন কমিশন কার্যালয়ের অতিরিক্ত কমিশনার সামমছুদ্দৌজা নয়ন জানিয়েছেন, কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে ৩৩টি শরণার্থী ক্যাম্প রয়েছে। ঘূর্ণিঝড় মোখার সম্ভাব্য ক্ষতি এড়াতে শরণার্থী ক্যাম্পগুলোতে প্রস্তুতি নিয়ে রাখা হয়েছে।
কক্সবাজার আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাবে আগামী এক সপ্তাহ সাগর উত্তাল থাকবে। গভীর সাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছ। সেইসাথে তাদের গভীর সাগরে বিচরণ না করতে বলা হয়েছে।
উপকূলে ফিরছে ফিশিং ট্রলার
সাগরে মাছ শিকার না করে উপকূলে ফিরতে শুরু করেছে কক্সবাজারের জেলেরা। এরই মধ্যে উপকূলে নোঙর করেছে ৩ হাজারের কাছাকাছি মাছ ধরার ট্রলার।
বৃহস্পতিবার কক্সবাজার বাঁকখালী নদীর মোহনায় দেখা যায়, সাগরে মাছ শিকারে যেতে উপকূলে ট্রলারে মজুত করা হয়েছিলো রসদ। সব প্রস্তুতি শেষে জেলেরাও উঠেছিলেন ট্রলারে। কিন্তু সাগরে মাছ শিকারে আর যান নি তারা। বাঁকখালী নদীর মোহনায় ফিরে মাছ ধরার একের পর এক ট্রলার।
দুর্যোগ মোকাবেলার প্রস্তুতি নিচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দর
ঘূর্ণিঝড় 'মোখা'র ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলায় প্রস্তুতি নিচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। আবহওয়া অধিদপ্তর ৪ নম্বর সতর্ক সংকেত দিলে চট্টগ্রাম বন্দর কন্ট্রোল রুম চালু করবে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রণীত ঘূর্ণিঝড়-দুর্যোগ প্রস্তুতি পরিকল্পনা অনুযায়ী পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক বলেন, "আবহওয়া অধিদপ্তরের সংকেতের উপর ভিত্তি প্রস্তুতিমূলক পরিকল্পনা রয়েছে। আবহাওয়া সংকেত ৪ হলে আমরা কন্ট্রোল রুম চালু করবো।"
এছাড়া, স্ট্যান্ডিং কমিটির সভা সহ ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় করণীয় নির্ধারণ করা হবে বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ২ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরের সব ধরনের কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে।
জাহাজ থেকে পণ্য উঠানামা, ইয়ার্ড থেকে কন্টেইনার ডেলিভারি, বহির্নোঙ্গরে মাদার ভেসেল থেকে লাইটার জাহাজে পণ্য খালাস, বহির্নোঙ্গর থেকে পণ্য নিয়ে দেশের বিভিন্ন নৌ রুটে লাইটার জাহাজ চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১১ মে) দুপুরে লাইটার জাহাজ পরিচালনাকারী সংস্থা ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেলের পরিচালক (অপারেশন) আতাউল কবির টিবিএসকে বলেন, "বহির্নোঙ্গরে পণ্য খালাস কার্যক্রম এখনো স্বাভাবিক রয়েছে। সাগর উত্তাল হয়ে উঠলে পণ্য খালাস কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হবে। তবে পরিস্থিতি এখনো পণ্য খালাসের উপযোগী রয়েছে।"
চট্টগ্রাম বন্দরের তথ্য অনুযায়ী, আবহাওয়া অধিদপ্তরের সংকেতের উপর নির্ভর করে চট্টগ্রাম বন্দরে চার ধরনের সতর্কতা জারি করা হয়।
আবহাওয়া অধিদপ্তর ৩ নম্বর সংকেত জারি করলে বন্দর প্রথম পর্যায়ের সতর্কতা বা 'অ্যালার্ট-১' জারি করে। ৪ নম্বর সংকেতের জন্য বন্দর অ্যালার্ট-২ জারি করা হয়।
এছাড়া বিপৎসংকেত ৫, ৬ ও ৭ নম্বরের জন্য 'অ্যালার্ট-৩' জারি করা হয়। মহা বিপৎসংকেত ৮, ৯ ও ১০ হলে বন্দরে সর্বোচ্চ সতর্কতা বা 'অ্যালার্ট-৪ জারি করা হয়।
চট্টগ্রাম বন্দর অ্যালার্ট ২ জারি করলে কন্ট্রোল রুম চালু করে।
অ্যালার্ট-৩ জারি করলে জেটি থেকে সকল ধরনের জাহাজ বর্হিনোঙ্গরে সরানো হয়। এই সতর্কতার কারণে বন্দরের ইয়ার্ডেও জাহাজ থেকে পণ্য উঠানো-নামানোর কার্যক্রম বন্ধ করা হয়। যন্ত্রপাতি সুরক্ষিত করা হয়।
এই সতর্কতা জারির পর বর্হিনোঙ্গরে মাদার ভ্যাসেল (বড় জাহাজ) থেকে লাইটার জাহাজে পণ্য খালাস বন্ধ রাখা হয়। এছাড়া বন্দর চ্যানেলের সব ছোট ছোট নৌযানকে শাহ আমানত সেতুর উজানে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
অ্যালার্ট ৪ জারি করা হলে বন্দরের সব কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়।