বেড়েছে ডেঙ্গুর ঝুঁকি, জ্বর ছাড়ার পরেও সতর্কতার পরামর্শ চিকিৎসকদের
চলতি বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মারা গেছে ২২ জন। গত বছর এই সময় ডেঙ্গুতে কোন মৃত্যু ছিল না। বৃষ্টি হওয়ার কারণে আগামী কয়েক দিনের মধ্যে ডেঙ্গু রোগী আরো বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি আছে। তাছাড়া এ বছর ডেঙ্গু শক সিনড্রোমে মারা যাচ্ছে বেশি। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে মশক নিয়ন্ত্রণ ও ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে জ্বর চলে যাওয়ার পরের ২৪ ঘণ্টা রোগীকে সতর্ক থাকা ও প্রয়োজনে দ্রুত হাসপাতালে নেয়ার পরামর্শ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের পরিচালক অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম বলেন, "আমাদের কাছে থাকা তথ্য অনুযায়ী এখন পর্যন্ত মৃতদের প্রায় প্রত্যেকে ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভারে ভুগছিলেন এবং শক সিনড্রোমে তাদের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া রোগীরা দেরিতে হাসপাতালে এসেছে। জ্বর কমলে রোগীরা ভাবে সুস্থ হয়ে গেছে, তখন অসাবধানতার কারণে শক সিনড্রোমে মৃত্যু বাড়ছে। জ্বর হলেই ডেঙ্গু টেস্ট করতে হবে আর জ্বর চলে গেলেও কয়েকদিন সতর্কতার সাথে থাকতে হবে।"
চিকিৎসকেরা বলেন, ডেঙ্গু রোগীর ঝুঁকি শুরু হয় জ্বর চলে যাওয়ার পর। ডেঙ্গু হলে প্রথম তিনদিন অনেক জ্বর থাকে, তারপর জ্বর কমে যায়। জ্বর কমে যাওয়ার পরও বেশি করে পানি, লিকুইড খাবার খেতে হবে, বিশ্রামে থাকতে হবে।
মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ও ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান অধ্যাপক রিদওয়ানুর রহমান বলেন, "ডেঙ্গুতে বেশিরভাগ রোগী মারা যায় জ্বর চলে যাওয়ার পর। তখন রোগীর প্রেশার লো হয়ে যায় এবং রোগী শকে চলে যায়। তাই জ্বর চলে যাওয়ার পর অতিরিক্ত বমি, পাতলা পায়খানা, ক্ষুধা না লাগা বা কোন ধরনের খারাপ লাগলেই হাসপাতালে যেতে হবে। জ্বর চলে যাওয়ার পর ফ্লুইড ম্যানেজমেন্ট জরুরি। বেশি বেশি করে পানি ও তরল খাবার খেতে হবে, প্রেশার নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। রোগী হাসপাতালে গেলে গাইডলাইন অনুযায়ী আইভি ফ্লুইড দিতে হবে। এ বিষয়ে চিকিৎসকদের ট্রেনিং দিতে হবে এবং মনিটর করতে হবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে।"
হাসপাতালে প্রতিদিন ডেঙ্গু রোগী বাড়ছে জানিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ নাজমুল হক বলেন, "ডেঙ্গু রোগী ক্রমশ বাড়ছে। ডেঙ্গু নিয়ে প্রতিদিন অন্তত ১০ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। ক্রিটিক্যাল অবস্থায় রোগীরা হাসপাতালে আসছে।"
স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের পরিচালক (মিটফোর্ড হাসপাতাল) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কাজী রশিদ-উন-নবী বলেন, "এ বছর ডেঙ্গু রোগীদের অধিকাংশেরই বয়স ৩০ এর মধ্যে। শক সিনড্রোমে বেশি রোগী মারা যাচ্ছে। ডেঙ্গু রোগীরা প্লাটিলেট নিয়ে বেশি চিন্তিত, ব্লাড প্রেশার মনিটর করে না। কিন্তু ব্লাড প্রেশার নিয়ন্ত্রণে রাখাটা জরুরি। ডেঙ্গু যাতে না হয় তার জন্য সতর্ক থাকতে হবে। আর ডেঙ্গু হলে জ্বর চলে যাওয়ার পর সতর্ক থাকতে হবে। প্রয়োজনে হাসপাতালে যেতে হবে।"
বৃষ্টির কারণে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়বে
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক কীটতত্ত্ববিদ কবিরুল বাশার জানান, বৃষ্টি হওয়ার কারণে আগামী কয়েকদিনের মধ্যে ব্যাপকহারে রোগী বাড়বে। এ মাসে আমরা অনেক রোগী দেখবো। ডেঙ্গু গত কয়েক মাস ধরে আছে। এখন যেহেতু বৃষ্টি হয়েছে, তাই বৃষ্টির কারণে বিভিন্ন জায়গায় পানি জমেছে।
কবিরুল বাশার বলেন, "এখন ডেঙ্গুর হটস্পট ম্যানেজমেন্ট জরুরি। যেসব এলাকায় ডেঙ্গু রোগী আছে সেসব এলাকার উড়ন্ত মশাগুলো মেরে ফেলতে হবে। মানুষকে সচেতন করতে হবে যেন বাসা-বাড়িতে এডিস মশার প্রজনন ক্ষেত্র না হয়, মানুষ যেন মশারির মধ্যে থাকে এবং জ্বর হলেই যেন ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করে।"
ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমের (এমআইএস) পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. শাহাদাত হোসেন বলেন, "ডেঙ্গু রোগীদের তথ্য ও ডেঙ্গুর গতিবিধি পর্যবেক্ষণে রোগীদের তথ্য সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। হাসপাতালগুলোকে আগত রোগীদের মোবাইল নাম্বার ও ঠিকানা সংগ্রহ করতে বলা হয়েছে।"
এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম শনিবার এক প্রেস কনফারেন্সে বলেন, "প্রত্যেক বিভাগে ডেঙ্গু চিকিৎসায় পর্যাপ্ত প্রস্তুতি রাখা হয়েছে। তবে এ ক্ষেত্রে মশা নিধন করাটা সব থেকে জরুরি। সিটি করপোরেশন ও স্থানীয় সরকার বিভাগসহ সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এটি সফল হবে বলে আশা করছি।"