নবজাতকের মৃত্যুর ঘটনায় সেন্ট্রাল হাসপাতালের ২ চিকিৎসক গ্রেপ্তার
পরিবারের সদস্যরা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ আনার পর নবজাতক শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় ঢাকার সেন্ট্রাল হাসপাতালের দুই চিকিৎসককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
সহকারী কমিশনার আবদুল্লাহ আল মাসুম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানান, সংক্ষুব্ধ পরিবার ডা. শাহজাদী ও ডা. মুনার বিরুদ্ধে প্রতারণা ও ভুল চিকিৎসার অভিযোগে ধানমন্ডি থানায় মামলা দায়ের করার পর গতকাল রাতে পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করে।
এর আগে বুধবার (১৪ জুন) সিজারিয়ান রোগী মাহবুবা আঁখির পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করেন, সন্তান প্রসবের সময় স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. সংযুক্তা সাহা উপস্থিত থাকার কথা বলে ঢাকার সেন্ট্রাল হাসপাতাল তাদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। যার ফলে নবজাতক শিশুর মৃত্যু হয়েছে এবং মা গুরুতর আহত হয়েছেন।
রোগী আঁখির চাচাতো ভাই সাখাওয়াত হোসেন শামীম টিবিএসকে বলেন, 'ফেসবুকে একটি ভিডিও দেখে আমার বোন সেন্ট্রাল হাসপাতালে ডা. সংযুক্তা সাহার তত্ত্বাবধানে নরমাল ডেলিভারি করতে চেয়েছিলেন। শুক্রবার মধ্যরাতে প্রসব হলে তাকে কুমিল্লা থেকে হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়।
'ভর্তি হওয়ার পরপরই নরমাল ডেলিভারির জন্য প্রেসক্রাইব করা ৪০ মিনিটের ব্যায়াম করানো শেষে আঁখিকে হঠাৎ অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হয়। এক পর্যায়ে সংযুক্তা সাহার সহকারী ডা. শাহজাদী ডা. মিলি নামে আরেকজন চিকিৎসককে ডাকতে বেরিয়ে আসেন। তিনি আমাদের জানান যে অধ্যাপক ডা. সংযুক্তা সাহা হাসপাতালে নেই, দেখি আমি কী করতে পারি।'
শামীম বলেন, 'তখন আমরা জানতে চাইলাম আমাদের ডাক্তার নেই, তাহলে অপারেশন করল কে? অপারেশন করেছেন তার সহকারী ডা. শাহজাদী। তখন আমরা বুঝতে পারি আমাদের সাথে প্রতারণা করা হয়েছে। আমার বোন ও বাচ্চা সুস্থ-স্বাভাবিক ছিল—দুজনেই আহত হয়েছে।' শামীম জানান, তখন তারা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেন। কিন্তু হাসপাতালের পক্ষ থেকে সস্তোষজনক জবাব পাননি।
একপর্যায়ে স্বজনরা জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে কল দিলে পুলিশ আসে। 'পুলিশ এসে কথা বললে তারা রোগীকে বিএসএমএমইউতে সিসিইউতে নিতে বলে। সেখানে সিট খালি না থাকায় পরদিন বিকেলে ল্যাবএইডে সিসিইউতে নেওয়া হয়,' বলেন শামীম।
তিনি বলেন, 'আমার বোনটি এখন লাইফ সাপোর্টে আছে, তার সব অরগান ফেইল করেছে, ডাক্তাররা হয়তো মৃত ঘোষণা করবেন। বাচ্চাটা তো আগেই মারা গেছে।'
এ ঘটনায় ধানমন্ডি থানায় লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে।
যোগাযোগ করা হলে সেন্ট্রাল হাসপাতালের পরিচালক এম এ কাশেম বলেন, এ ঘটনায় চিকিৎসক ও নার্সসহ তাদের ১১ জন কর্মচারীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
তিনি দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'এছাড়া অভিযোগের তদন্তের জন্য পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন পেলে আমি এ বিষয়ে বিস্তারিত বলতে পারব।'
আঁখির বর্তমান শারিরীক অবস্থার বিষয়ে ল্যাবএইডের চিকিৎসক এম এ শামীম বলেন, 'ভেন্টিলেটরে থাকা অবস্থায় ওই রোগীকে সেন্ট্রাল হাসপাতাল থেকে আমাদের এখানে আনা হয়। রোগীর বাঁচার আশা খুবই কম।'
বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব ডা. এহতেশামুল হক চৌধুরী বলেন, 'চিকিৎসক [সেন্ট্রাল হাসপাতালের সংযুক্তা সাহা] দেশে না থাকলেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ যদি বলে থাকেন যে তিনি আছেন, তাহলে সেটি প্রতারণা। রোগীর স্বজনরা অভিযোগ করলে আমরা হাসপাতালের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারি।'
এদিকে আঁখির চিকিৎসায় অনিয়মের প্রতিবাদে ও ক্ষতিপূরণের দাবিতে বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় নীলক্ষেতে মানববন্ধন করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতাধীন সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। আখি ইডেন মহিলা কলেজের মাস্টার্স লেভেলের ছাত্রী।