জাতীয় পার্টি (মঞ্জু): সাইকেলে নিঃসঙ্গ পথচলা
জাতীয় নির্বাচনে জয়ের জন্য জাতীয় পার্টি (মঞ্জু) সাধারণত পিরোজপুর-২ আসনে (ভান্ডারিয়া, কাউখালী ও জিয়ানগর উপজেলা নিয়ে গঠিত) তাদের তারকা প্রার্থী, চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর সাফল্যের ওপর নির্ভর করে।
২০০১ সালের নির্বাচনে জাতীয় পার্টি থেকে বেরিয়ে এসে আনোয়ার হোসের মঞ্জুর নেতৃত্বে গঠিত নতুন দল জাতীয় পার্টি (জেপি) সাইকেল প্রতীক নিয়ে এখন পর্যন্ত ১টির বেশি আসন পেয়েছে মাত্র একবার। সেটিও ২০১৪ সালে, যেবার বিএনপিসহ সবগুলো প্রধান বিরোধীদল জাতীয় নির্বাচন বর্জন করেছিল।
অতীতের নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলটি তাদের আগের রেকর্ড ছাড়িয়ে যাওয়ার লক্ষ্য নিয়েছে। এবার অন্তত ৩ থেকে ৫টি আসন নিশ্চিত করার জন্য ২০ জন প্রার্থী দিয়েছে দলটি।
মঞ্জুই বাঁচিয়ে রেখেছেন তার দল
১৯৮৬ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৭টি নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ আনোয়ার হোসেন মঞ্জু। জ্বালানি, যোগাযোগ ও পানিসম্পদসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করেছেন তিনি।
দৈনিক ইত্তেফাকের প্রতিষ্ঠাতা তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়ার ছেলে মঞ্জু তিন দশকেরও বেশি সময় এই দৈনিকের হাল ধরেছেন।
এছাড়াও জাতীয় নির্বাচনে একবারও না হারার ট্র্যাক রেকর্ড রয়েছে তার।
১৯৮০-র দশকের শুরু থেকে হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন মঞ্জু। ২০০১ সালে এরশাদ বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোটে যোগদানের সিদ্ধান্ত নিলে দুজনের সম্পর্কে ফাটল ধরে।
নির্বাচনের আগে অবশ্য এরশাদ জোট থেকে সরে দাঁড়ান এবং নাজিউর রহমানের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টির একটি অংশ চার দলের সঙ্গেই থেকে যায়।
মঞ্জুর জেপির প্রথম নির্বাচন ২০০১ সালে। ওই নির্বাচনে দলটি বাইসাইকেল প্রতীক নিয়ে ১৪০ জন প্রার্থী দিলেও মাত্র ১ জন প্রার্থী, দলের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু নির্বাচিত হন। বাকি প্রার্থীরা অধিকাংশই তাদের জামানত হারান।
২০০৮-এর জাতীয় নির্বাচনে মঞ্জু প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেননি। আগের নির্বাচনে শোচনীয় পরাজয়ের পর দলটি মাত্র সাতজন প্রার্থী দিয়েছিল। তারা সবাই পরাজিত হয়ে জামানত হারান। তারা মাত্র ৭ হাজার ৮১৮টি ভোট পান।
২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিরোধী দলগুলোর ব্যাপক বয়কটের মধ্যে জেপি (মঞ্জু) ২৮টি আসনে প্রার্থী দেয়। এর মধ্যে মাত্র ২টি আসনে প্রার্থীরা জয় পায়। এদের মধ্যে আওয়ামী লীগের সহায়তায় চেয়ারম্যান মঞ্জু তার নিজ আসন পিরোজপুর-২ থেকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এবং বর্তমান কো-চেয়ারম্যান মো. রুহুল আমিন কুড়িগ্রাম-৪ আসন থেকে নির্বাচিত হন। বাকি প্রার্থীদের অধিকাংশ জামানত হারান।
২০১৮ সালের নির্বাচনে দলটি আবার তাদের মনোনীত প্রার্থীদের সংখ্যা কমায়। সেবার তারা মাত্র ১১ জন প্রার্থী দেয়; তারা প্রায় ১ লাখ ৮৫ হাজার ভোট পান। এর মধ্যে মঞ্জু একাই তার নির্বাচনী এলাকা থেকে ১ লাখ ৭৯ হাজার ৪২৫ ভোট পেয়েছিলেন।
৭ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে উচ্চাশা
আসন্ন নির্বাচন নিয়ে দলটির কয়েকজন সিনিয়র নেতা দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানান, এবারও তারা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের সঙ্গেই আছেন।
তবে বিগত নির্বাচনগুলোর থেকে এবারে বেশি আসন চায় জেপি।
জোটের কাছে ১০টি আসনের চাহিদা থাকলেও অন্তত ৩-৫টি আসন পাওয়ার আশা করছেন দলটির নেতারা।
দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে মঞ্জু তার নিজের সংসদীয় আসন পিরোজপুর-২ থেকে এবং দলের মহাসচিব শেখ শহীদুল ইসলাম ঢাকা-১৪ থেকে নির্বাচন করছেন। তবে এ দুটি আসনেই আওয়ামী লীগের প্রার্থী রয়েছেন। এমনকি মঞ্জুর আসনে বিদ্রোহী আওয়ামী লীগ প্রার্থীও প্রতিদ্বন্দিতা করবেন। ফলে এসব আসনে জোট নেতারা সরকারি দল আওয়ামী লীগের প্রার্থীর বিরুদ্ধে কতটা সুবিধা নিতে পারবেন, তা নিয়ে সংশয় আছে এসব দলের ভেতরেই।
জেপির দপ্তর সম্পাদক এম সালাহ উদ্দিন আহমেদ টিবিএসকে বলেন, 'আমরা বরাবরই মহাজোটের সাথে ছিলাম, এবারেও আছি। আসন ভাগাভাগি নিয়ে কথা চলছে। ১৮ ডিসেম্বরের পর নিশ্চিতভাবে বলতে পারব আমাদের কোন কোন আসনে সম্ভাবনা রয়েছে।'
তিনি আরও বলেন, 'তবে বিগত নির্বাচনগুলোর থেকে এবারের নির্বাচনে আমাদের আরও বেশি আসনে জয়ের প্রত্যাশা করছি। আশা করি জোট থেকেও আমরা বেশ কয়েকটি আসনে ছাড় পাব।'